ত্বকের যত্নের মতো চুলের যত্নের ব্যাপারে এ বছর দেশে-বিদেশে সবাইকে বেশ সচেতন হতে দেখা গেছে। আগে চুল–সম্পর্কিত ট্রেন্ড কেবল রঙ ও স্টাইলে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু চলতি বছর তার পরিবর্তন হয়েছে। এ বছরের চুলের যত্নে রোজমেরি তেলের ব্যবহার অনেক দেখা গেছে। পাশাপাশি সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে সৌন্দর্য সচেতন ব্যক্তিরা মাথার ত্বকে এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার শুরু করেছেন। এ দুটি বিশেষ পদ্ধতি চলতি বছরের চুলের যত্নের বড় দুটি ট্রেন্ড।
রোজমেরি তেল
বছরের শুরু থেকে টিকটকে রোজমেরি তেল ব্যবহারের ধুম পড়ে যায়। এ-সম্পর্কিত ভিডিওগুলোর ভিউ ২ দশমিক ৬ বিলিয়নের বেশি। যাঁরা ব্যবহার করেছেন, তাঁরা এ তেলের গুণগান গেয়েছেন। প্রথম প্রথম অনেকে এর উপকারিতা নিয়ে সন্দিহান থাকলেও পরবর্তী সময়ে ট্রাইকোলজিস্ট বা চুলরোগ বিশেষজ্ঞরা রোজমেরি তেলকে দিয়েছেন সবুজসংকেত। ফলে এই তেল হয়ে উঠেছে এ বছরের সবচেয়ে বড় চুলের যত্নের ট্রেন্ড।
চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে রোজমেরি তেলের জুড়ি মেলা ভার। রোজমেরিগাছে আছে জাদুকর কার্নোসিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিড স্নায়ু ও টিস্যুর ক্ষতি নিরাময় করতে পারে। এমনকি এটি সেলুলার টার্নওভার বা কোষের পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। বিশেষজ্ঞরা রোজমেরি তেলকে চুলের বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ মিনোক্সিডিলের সেরা বিকল্প হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একে মিনোক্সিডিলের চেয়েও এগিয়ে রাখছেন। কারণ, রোজমেরি তেল ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থাকলেও তার পরিমাণ খুব কম। বাজারে এখন অনেক ব্র্যান্ডের রোজমেরি তেল পাওয়া যাচ্ছে। আবার ঘরেও খুব সহজে এ তেল তৈরি সম্ভব। এ জন্য দরকার পছন্দের ক্যারিয়ার তেল, যেমন নারকেল বা জলপাই তেলের সঙ্গে রোজমেরির পাতা জ্বাল দিলেই হবে।
এত দিন সবাই কেবল মুখত্বকের মৃতকোষ দূর করার ব্যাপারে সচেতন ছিল। তবে এ বছর নতুন করে যোগ হয়েছে মাথার ত্বকের এক্সফোলিয়েশন। শরীরের ত্বকের মতো মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্পেও জমে মৃতকোষ। শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করলে কিছু মৃতকোষ উঠে গেলেও ভালোভাবে তা কখনোই যায় না। আর যাঁদের স্ক্যাল্প বেশি শুষ্ক, তৈলাক্ত এবং খুশকিযুক্ত, তাঁদের এক্সফোলিয়েশন অত্যন্ত জরুরি। কারণ, তৈলাক্ত ত্বকে অতিরিক্ত সিবাম নিঃসৃত হয়। এর ফলে ধুলাবালু আর ময়লা বেশি আটকায়। ঠিকমতো এক্সফোলিয়েট করলে দ্রুত খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আর শুষ্ক ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা দূর করতে পরিমিত এক্সফোলিয়েশন দরকার। এতে দূর হবে ফ্লেকিনেস।
বাজারে এখন মাথার ত্বকের জন্য কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। চুলরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ক্যাল্পের মৃতকোষ দূর করতে সবচেয়ে কার্যকর হলো গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ও স্যালিসাইলিক অ্যাসিড। আমাদের দেশে এখনো এ ধরনের এক্সফোলিয়েটর খুব একটা পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও খুব একটা সহজলভ্য নয়। তাই ঘরে চিনি, লবণ, নারকেল তেল বা অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট ব্যবহার করে খুব সহজে মাথার ত্বকের জন্য ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বানিয়ে ফেলা যায়।