ফ্যাশনের মত মেকআপ ট্রেন্ডের ব্যাপারেও আজকাল অনেকেই বেশ সচেতন। আর জেন-জি প্রজন্মের কাছে মেকআপ শুধু নিজেকে সুন্দর দেখানোর মাধ্যম নয়। বরং ব্যক্তিত্ব বা নিজস্বতা প্রকাশের হাতিয়ার। এ জন্য সৌন্দর্য দুনিয়ায় তাঁদের তৈরি মেকআপ ট্রেন্ডকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় চলতি বছর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেন-জিদের হাত ধরে ভাইরাল হয়েছে বেশ কয়েকটি মেকআপ ট্রেন্ড।
গ্রাফিক আইলাইনারের ট্রেন্ড চলছে অনেক দিন ধরে। রানওয়ে থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সবখানে ছিল এর জয়জয়কার। যারা চেহারায় বোল্ড ভাইব আনতে চান তাঁরা গ্রাফিক আইলাইনার ট্রেন্ডকে লুফে নিয়েছেন। জেন-জি তরুণেরাও (ছেলেরাও) চোখ সাজিয়েছেন আইলাইনার দিয়ে। কেউ চোখে আঁকছেন প্রজাপতি, কেউবা ডলফিন। আবার কারও পছন্দ জ্যামিতিক প্যাটার্ন। আরও হাজারভাবে নিরীক্ষা করা যায়।
গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমা বিশ্বে কে-বিউটির জনপ্রিয়তা রকেটের গতিতে বেড়েছে। বিশেষ করে জেন-জিদের কাছে। সেই জনপ্রিয়তার ঢেউ আঁচড়ে পড়েছে এশিয়া, আফ্রিকার দেশগুলোতে। কোরিয়ানদের সতেজ ও তারুণ্যময় ত্বকের কদর তাঁদের কাছে অনেক বেশি। ত্বকের যত্নের বিভিন্ন ধারার মত জেন-জি মেয়েরা রপ্ত করতে শুরু করে তাঁদের মেকআপ করার কৌশল।
এ বছরের শুরু থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে 'গ্র্যাডিয়েন্ট লিপ' ট্রেন্ড বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এই জনপ্রিয়তার সবচেয়ে বড় কারণ কে-পপ তারকারা এভাবেই তাঁদের ঠোঁট আঁকে। 'গ্র্যাডিয়েন্ট লিপ' পেতে মাঝখানে ডার্ক শেডের লিপস্টিক বা লিপ টিন্ট দেওয়ার পর, ঠোঁট হালকা শেডের লিপলাইনার দিয়ে আঁকতে হয়। মিনিমাল মেকআপের জন্য 'গ্র্যাডিয়েন্ট লিপ' একদম আদর্শ ঠোঁট আঁকার পদ্ধতি।
ফ্রেকলস এর আরেক নাম সানস্পট। অর্থাৎ অতিরিক্ত রোদে থাকলে ত্বকে ছোট ছোট বাদামি রঙের যে দাগ দেখা যায় তাই ফ্রেকলস। করোনার সময় থেকে মেকআপে 'ফো ফ্রেকলস' ট্রেন্ড চলছে। সেই ধারা এখনো চলমান। চলতি বছর জেন-জিদের কাছে নতুন করে জনপ্রিয়তা পায় এই ট্রেন্ড। সবাইকে ইচ্ছা করে নাকে ও গালে বাদামি আইলাইনার বা কন্টুর দিয়ে ছোট ছোট ফ্রেকলস আঁকতে দেখা গিয়েছে। মূলত ত্বকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উদ্যাপন করতেই সবাই ফো ফ্রেকলস ট্রেন্ডে ঝুঁকেছে। আবার যাদের ত্বকে সানস্পট আছে তাঁরাও কনসিলার দিয়ে এটি ঢাকার চেষ্টা করছেন না।
ব্লাশের প্রতি মিলেনিয়াল থেকে জেন-জি সবারই দুর্বলতা দেখা গিয়েছে। এ বছর মেকআপ ট্রেন্ডে বোল্ড ব্লাশ পাকাপোক্তভাবে জায়গা করে নিয়েছে বলা যায়। অনেক পদ্ধতিতেই ব্লাশ ব্যবহার করা যায়। এইসব পদ্ধতির আবার আলাদা নাম আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও 'বয়ফ্রেন্ড ব্লাশ' ট্রেন্ড বেশ ভাইরাল হয়। ব্যায়াম বা দৌড়ানোর পর ত্বকে যে প্রাকৃতিক গোলাপি আভা দেখা যায় সেটাকেই ব্লাশ ব্যবহার করে ফুটিয়ে তোলার পদ্ধতিই হলো 'বয়ফ্রেন্ড ব্লাশ'। সাধারণত গালের উঁচু হাড়ে ব্লাশঅন দেওয়া হয়। কিন্তু এই ট্রেন্ড অনুসারে গালের হাড়ের নিচে ও নাকের উপরিভাগে ব্লাশঅন ব্যবহার করতে হয়। ব্লাশের ক্ষেত্রে এখন সবার প্রিয় রোজি পিংক, পিচ ও কোরাল শেড।
গ্লাস স্কিন, ডলফিন স্কিন, ক্লাউড স্কিনের পর এ বছর ট্রেন্ড মাতিয়েছে ডাম্পলিং স্কিন। ডাম্পলিং-এর মত মসৃণ, প্লাম্প, ডিউয়ি ও অবশ্যই উজ্জ্বল ত্বক পাওয়াই এই মেকআপ ধারার আসল লক্ষ্য। তবে মেকআপের আগে এখানে ত্বকের যত্নকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। মেকআপ করার আগে হাইড্রেটিং এসেন্স, সিরাম, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এরপর গ্লো প্রাইমার মাখতে হবে। এ ধরনের প্রাইমার ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। এ ছাড়া নতুন স্ট্রোব ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এটি ময়েশ্চারাইজার ও হাইলাইটারের হাইব্রিড। প্রাইমারের বদলে স্ট্রোব ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। বাকি মেকআপ নিজের পছন্দ মত করলেই হবে। তবে অতিরিক্ত কিছু দেওয়া যাবে না।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম