সাজগোজ বা মেকআপের ক্ষেত্রে ঠোঁটের সাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানানসই লিপকালার না হলে যেন পুরো সাজই মাটি হয়ে যায়। তবে এই লিপস্টিক বা লিপকালারের ফিনিশ এখন খুবই বৈচিত্র্যময়। ম্যাট, সেমি ম্যাট, গ্লসি বা এশিয়ান বিউটি অনুযায়ী টিন্টেড লুক বেশি জনপ্রিয় এ সময়ে। মাঝেমধ্যে প্রিয় রংয়ের লিপকালারের সব কটা ফিনিশ কিনে ফেলতে ইচ্ছা করে। সেটা তো আর সম্ভব হয় না। তাই সবচেয়ে ভালো হয় যদি এক লিপস্টিকেই ফুটিয়ে তোলা যায় একাধিক লুক।
কে-বিউটি আর জে-বিউটির অনুপ্রেরণায় ঠোঁটে এ লুক পেতে অনামিকায় অল্প একটু লিপস্টিক নিয়ে ঠোঁটে লাগাতে হবে। সব সময় অনামিকাই ব্যবহার করতে হবে। কারণ, এ আঙুলের জোর সবচেয়ে কম। আর যেহেতু স্বচ্ছ ফিনিশ লাগবে, তাই আঙুল দিয়েই লিপস্টিক প্রয়োগ করতে হবে। সরাসরি লাগাতে গেলে রং গাঢ় হয়ে যাবে। এবার ওপরে স্বচ্ছ লিপবাম বা জেল বুলিয়ে নিলে রংটা স্পষ্ট হবে, খুব সুন্দর টিন্টেড ফিনিশও পাওয়া যাবে।
হালের তারকাদের প্রিয় এই গ্লসি লুক পেতে হলে প্রথমে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে হবে স্বাভাবিকভাবে। তারপর ওপর আর নিচের ঠোঁটের ঠিক মাঝামাঝি স্বচ্ছ, শিমার দেওয়া গ্লস অ্যাপ্লাই করতে হবে। কারণ, মাঝখানে গ্লস দিলে লিপস্টিক ধেবড়ে যাবে না। এতে দারুণ গ্লসি ফিনিশ পাবেন।
আবার পাউডার ম্যাট ফিনিশের জন্য লিপব্রাশে অল্প লিপস্টিক নিয়ে ঠোঁটে লাগাতে হবে। কারণ, ব্রাশ দিয়ে লিপস্টিক দিলে তা ঠোঁটের আউটলাইন অনুযায়ী একদম নিখুঁত হবে। এ পদ্ধতিতে টিস্যু চেপে বাড়তি চকচকে ভাবটা তুলে ফেলতে হবে। এবার দ্বিতীয় কোট লিপস্টিক লাগাতে হবে এবং আবার টিস্যু চেপে বাড়তি অংশ তুলে ফেলতে হবে। এরপর পাউডার ম্যাট ফিনিশের জন্য খুব সামান্য লুজ় পাউডার ঠোঁটে লাগিয়ে নিলেই পাওয়া যাবে মনের মতো পাউডার ম্যাট ফিনিশ।
অনেকেই আছেন, যাঁরা পুরাপুরি ম্যাট পছন্দ করেন না বা যাঁদের ঠোঁট ফাটার আশঙ্কা রয়েছে; ম্যাট এফেক্টের লিপকালার দিলে অতিরিক্ত শুকনা ভাব হয়ে যায় বলে তাঁদের জন্য এই সেমি ম্যাট ফিনিশ। এ ক্ষেত্রে ম্যাট লিপস্টিক দেওয়ার আগে ভালো মানের লিপবাম বা ভ্যাসলিন দিয়ে ঠোঁট ময়েশ্চারাইজ করে নিতে হবে। কিছুক্ষণ রাখার পর একটি টিস্যু দিয়ে অতিরিক্ত লিপবাম বা ভ্যাসলিন মুছে ফেলতে হবে আলতোভাবে। একটু চেপে মুছে নিলেই হবে। তারপর পছন্দের লিপস্টিক লাগিয়ে নিতে হতে। চাইলে আঙুল দিয়ে লিপস্টিক একটু ধেবড়ে বা স্মাজ করে নেওয়া যায়। তবে ওভারকোটিং করা যাবে না, এতে লিপস্টিকের টেক্সচার অসমান লাগে। একই রংয়ের লিপলাইনার লাগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এতে ঠোঁটের শেপ সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে।
জেনে রাখা ভালো, ঠোঁটে যদি মরা কোষ জমে যায় আর তা অতিরিক্ত শুষ্ক থাকে, তাহলে কিন্তু যতই ভালো ব্র্যান্ডের লিপস্টিক লাগানো হোক না কেন, সেটা ভালোভাবে বসবে না। তাই ঠোঁট ভালো করে ময়েশ্চারাইজড রাখার জন্য যত্ন নেওয়া আবশ্যক। আবার ঠোঁট মসৃণ না হলে লিপকালার লাগানোর আগে সামান্য ফাউন্ডেশনও লাগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে শুধু ফাউন্ডেশনে ঠোঁট শুষ্ক মনে হতে পারে। এ সমস্যা সমাধানে ফাউন্ডেশনের ওপর সামান্য লিপবাম অ্যাপ্লাই করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, ফাউন্ডেশন অনেক সময় লিপকালারের রং একটু হালকা করে দেয়। তাই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে মানানসই হবে, এমন লিপকালার বেছে নিতে হবে।
যে রংয়ের লিপস্টিক নির্বাচন করা হবে, লিপলাইনারও হতে হবে সেই রঙের। তা ছাড়া ন্যুড শেডের লিপলাইনারও ব্যবহার করা যেতে পারে। আর ঠোঁটের শেপ বড় দেখাতে চাইলে এ ধরনের লিপলাইনার বেশ ভালো কাজ করবে। ঠোঁট পাতলা হলে লাইনার দিয়ে ঠোঁটের শেপও ঠিক করে নেওয়া যায়। তবে ঠোঁটের ধরন বিবেচনায় যে পদ্ধতিই বেছে নেওয়া হোক না কেন, লিপলাইন যেন খুব কৃত্রিম মনে না হয়, সেদিকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এভাবে একটি লিপস্টিককেই যদি কখনো টিন্টেড, কখনো গ্লসি, আবার কখনো ম্যাট ফিনিশ দিয়ে পরা যায়, তাহলে স্টাইল আর সাশ্রয়—দুটোই মিলবে।
ছবি: তারকাদের ইনস্টাগ্রাম ও পেকজেলসডটকম