সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে হালকা কোনো ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধোয়া আর ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা—প্রতিদিন সকালে উঠে এ কটি কাজ আমরা অনেকেই করি। তবে যেই না ঘরে ফিরলাম, অমনি রাজ্যের আলসেমি আমাদের ওপর ভর করে। ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে নাকেমুখে দুটো গুঁজে ঘুমিয়ে পড়ি আমরা অনেকেই। কিন্তু স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে ঘুমের আগে কিছু কাজ করতেই হবে।
ঘরে হোক কিংবা বাইরে, আপনার দিন যেভাবেই কাটুক না কেন, ঘুমানোর আগে মুখ ধুয়ে নেওয়া উচিত। বিশেষ করে কেউ যদি মেকআপ করেন, তবে অবশ্যই ডাবল ক্লিনজিং করতে হবে। এর জন্য একটি কটন প্যাডে মাইসেলার ওয়াটার, নারকেল তেল কিংবা অলিভ ওয়েল নিয়ে ভালো করে মেকআপ তুলে নিতে হবে। যাঁরা মেকআপ করেন না এবং বেশির ভাগ সময় ঘরেই কাটান, তাঁদের জন্যও মুখ ধুয়ে ঘুমানো সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সারা দিনের জমানো ঘাম, তেল, ময়লা যাতে রোমকূপে জমে না যায়, তার জন্য বেশ ভালো একটি ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নেওয়া উচিত।
ফেইসওয়াশ আমাদের ত্বককে শুষ্ক করে ফেলে। তাই মুখ ধোয়ার পর হালকা ভেজা মুখেই ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার ত্বক বেশ লম্বা সময় পর্যন্ত হাইড্রেটেড থাকবে। চেষ্টা করবেন রাতে ঘুমানোর বেশ কিছুক্ষণ আগেই একটু ভারী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার। এতে আপনার ত্বক ময়েশ্চারাইজার শুষে নেওয়ার সুযোগ পাবে এবং বিছানায় তা লেগে যাবে না।
যদি আপনার ত্বকে কোনো ধরনের সমস্যা (যেমন কালো দাগ, ব্রণ ইত্যাদি) থাকে, তবে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পর অ্যাকটিভ ইনগ্রিডিয়েন্টযুক্ত কোনো সিরাম কিংবা ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এ ধরনের সিরাম বা ক্রিম ব্যবহারের জন্য রাত সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। যেহেতু অ্যাকটিভ ইনিগ্রেডিয়েন্টযুক্ত অনেক পণ্য সূর্যের আলোয় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তাই পরের দিন সকালে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন।
চেষ্টা করবেন কিছুদিন পরপর বালিশের কভার বদলে নেওয়ার। একই বালিশের কভার না ধুয়ে বেশি দিন ব্যবহার করলে এতে ধুলা ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে। ঘুমানোর সময় আমাদের ত্বক এসব ব্যাকটেরিয়া ও ময়লার সংস্পর্শে আসে, যা ব্রণ ও র্যাশের মতো সমস্যা তৈরি করে। এ ছাড়া যাদের খুশকির সমস্যা আছে, তাঁরা চেষ্টা করবেন প্রতি ১-২ দিন অন্তর বালিশের কভার পালটে নেওয়ার।
উজ্জ্বল আলো আমাদের ঘুম নষ্ট করে দেয়। তাই রাতের বেলা ঘরের আলো কমিয়ে রাখুন। এতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে না। ঘুমানোর আগে মুঠোফোন থেকে দূরে থাকুন। একান্তই সম্ভব না হলে ফোনে ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন। চেষ্টা করবেন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ার। এতে প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা ঘুম দেওয়া সহজ হবে। অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে, যাঁরা প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা ঘুমান, তাঁদের ত্বকে কোলাজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে বয়সের ছাপ বেশ দেরিতে পড়ে।
আমাদের প্রতিদিনের জীবন থেকে ১০-১৫ মিনিট সময় বের করে নিয়ে যদি দিন শেষে এভাবে ত্বকের যত্ন করা হয়, তবে সেই যত্নের প্রতিফলন আপনি আপনার ত্বকেই দেখতে পাবেন। সুন্দর জীবনের জন্য যেমন ধৈর্য ও চেষ্টার প্রয়োজন পড়ে, সুন্দর ত্বকের জন্যও তা-ই। ধৈর্য নিয়ে তৈরি করা প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই আমাদের সুন্দর ত্বক উপহার দিতে পারে।
ছবি: হাল ফ্যাশন ও পেকজেলসডটকম