পারফেক্ট ত্বক কে না চায় বলুন? আমরা সবাই চাই আমাদের ত্বক একদম নিখুঁত হোক। কিন্তু ত্বকের সমস্যা যেন একের পর এক লেগেই থাকে। পিছু ছাড়তে চায়না। আজ পিম্পল, তো কাল ডার্ক প্যাচ৷ এরকম নানা সমস্যা যেন লেগেই থাকে। তখন আমরাসব সমস্যার সমাধান একসঙ্গে করতে চাই। এতে কাজের বদলে অনেক সময় অকাজই হয় বেশি। আমাদের ত্বক যথেষ্ট সংবেদনশীল এবং প্রত্যেক ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের ত্বকেরও কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। গ্লোয়িং ত্বকের জন্য কেবল ক্লিনজিং, এক্সফোলিয়েটিং কিংবা মাস্ক ব্যবহার করলেই চলবে না। বরং ত্বককে ভেতর থেকে হাইড্রেশন দেওয়া,ভালো খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুমও জরুরি। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক ঈদের আগে এই এক সপ্তাহেই এভাবে উজ্জ্বল ত্বক পেতে করণীয়গুলো কী কী৷ আর এক্ষেত্রে প্রতিদিন স্কিনকেয়ার সম্পর্কিত মাত্র একটি নতুন ধাপ অনুসরণ করতে হবে৷
দিন ১: ক্লিনজিং ও হাইড্রেশন
আপনি যদি আপনার ত্বককে সুস্থ রাখতে চান, তাহলে প্রথমে এটিকে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। সারাদিনে আমাদের ত্বকে অনেক ময়লা জমে। তাই আপনার ত্বকের ধরণের সঙ্গে মানানসই একটি মৃদু ক্লিনজার বেছে নিন। যেমন শুষ্ক ত্বকের জন্য হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ও তৈলাক্ত ত্বকের জন্য স্যালিসিলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ফেসওয়াশ।
ফেসওয়াশের পরে আমাদের ত্বককে টোনার দিয়ে হাইড্রেট করতে হবে। আপনি যদি সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে চান, তাহলে গোলাপ জল ও গ্লিসারিনের মতো প্রাকৃতিক উপাদান আছে, এমন টোনার বেছে নিতে পারেন। এছাড়াও, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে, যা আমাদের ত্বককে ভেতর থেকে হাইড্রেশন দেবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা উচিত। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে সাহায্য করে, ত্বককে উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখে।
দিন ২: এক্সফোলিয়েশন
পরের দিন যে ধাপটি মানতে হবে তা হলো ত্বককে এক্সফোলিয়েট করা। মৃত ত্বকের কোষ অপসারণ করতে এবং স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে একটি ভাল ফেসিয়াল স্ক্রাব ব্যবহার করুন। যদি আপনার ত্বক খুব সংবেদনশীল হয় তবে একটি মৃদু স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন। এক্সফোলিয়েশন যে শুধু ত্বকের ডেড সেল দূর করবে, তা কিন্তু নয়, এর ফলে ফেসপ্যাক, ফেসমাস্ক বা যা কিছুই লাগানো হোক না কেন, ত্বক সেটা অনেক ভালোভাবে শোষণ করতে পারবে।
যদি আপনি দিনের বেলা এক্সফোলিয়েট করেন, তাহলে ঋতু যা-ই হোক না কেন, তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ এসপিএফ সমৃদ্ধ সানস্কিন ও ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না।
দিন ৩: সিরাম ও মাস্ক
এরপরের ধাপে আসে আপনার ত্বকের পুষ্টির প্রশ্ন। এক্সফোলিয়েট করার পর যদি আপনি আপনার মুখ ময়েশ্চারাইজ না করেন, তাহলে আপনার ত্বক ম্লান হয়ে যাবে। এই ক্ষেত্রে সিরাম ও শিট মাস্ক আপনার ত্বকের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হতে পারে। এগুলি আমাদের ত্বককে পুরোপুরি পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করতে পারে।
দিন ৪: সূর্য থেকে ত্বককে সুরক্ষা প্রদান
আপনি আপনার ত্বকের যত্নে যদি উচ্চ এসপিএফযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার না করেন, তবে কোনো কিছুই আসলে কাজে দিবে না। তাই, সবসময় ৩০ বা তার বেশি এসপিএফসহ একটি ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। যদি আপনি সাঁতার কাটেন বা ঘামতে থাকেন, তাহলে ২-৩ ঘন্টা পরে সানস্কিন রিঅ্যাপ্লাই করতে হবে। যতটা সম্ভব কড়া রোদে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।
দিন ৫: সুষম খাবার
আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এমন ফল এবং শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করুন যা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ, সি এবং ই আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। উজ্জ্বল ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো খাবার হলো হল পালং শাক, গাজর, মিষ্টি আলু, সবুজ চা, ডার্ক চকলেট, আখরোট, টমেটো ও ব্রকলি।
এছাড়াও আপনাকে অবশ্যই অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, উচ্চ গ্লাইসেমিক খাবার আর অন্যান্য সমস্ত পরিশোধিত কার্বজাতীয় খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
দিন ৬: রাতে ত্বকের যত্ন
রাত আপনার ত্বকের যত্নের জন্য একটি উত্তম সময়। কারণ ত্বকের মেরামত প্রক্রিয়া রাতে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।।এই সময় স্কিন রিজেনারেট হওয়ার সুযোগ পায় এবং যেকোনো প্রোডাক্ট ত্বকে খুব ভালোভাবে শোষিত হতে পারে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে, মুখে যেকোনো প্রোডাক্ট প্রয়োগ করার আগে আপনার মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে যাতে কোন ধরণের ময়লা বা মেকাপ ত্বকে লেগে না থাকে। এতে পরবর্তীতে নতুন কোন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
দিন ৭: পর্যাপ্ত ঘুমানো
সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ভালো ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময় আমাদের ত্বকের কোষগুলি নিজেদের মতন করে মেরামত হতে থাকে। তাই দৈনিক ৮-৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
পরিশেষে ৭ দিনের এই কাজগুলো করার সঙ্গে সঙ্গে যে জিনিসগুলি খেয়াল রাখতে হবে তা হলো, বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন লাগানো,প্রতিদিন হালকা ফ্রি হ্যান্ডএক্সারসাইজ করা ও হাইড্রেটেড থাকা। এই সব কিছু ঠিকঠাক মতো করতে পারলে সাত দিনের মাথায় আপনি নিজেই নিজের ত্বকের পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
তথ্যসূত্র: সাখিয়া স্কিন ক্লিনিক
ছবি: পেকজেলস
হিরো ইমেজ: নেহা নাজনীন শাকিলের ইন্সটাগ্রাম