কয়েক মাস আগে এক রাজনৈতিক নেতার দুধ দিয়ে গোসল করে কলঙ্কমুক্ত হওয়ার কাহিনি বেশ আলোচিত হয়েছিল। আবার সেদিন স্ত্রীর করা মামলা খারিজ হওয়ায় এক অটোভ্যানের মিস্ত্রি এক মণ দুধ দিয়ে গোসল করে সাড়া জাগালেন। মাঝেমধ্যেই দেশ-বিদেশে দুধ দিয়ে গোসল করার খবর আসে পত্রপত্রিকায়। এর কোনো কোনোটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়। একটা সময় ছিল যখন বিভিন্ন দেশে বা সংস্কৃতিতে দুধ দিয়ে গোসল করার রেওয়াজ ছিল।
যেমন ভারতীয় উপমহাদেশে দুধ দিয়ে গোসল করে পবিত্র হওয়ার রীতি ছিল। প্রাচীনকালে রোমানরা ত্বক নরম করতে দুধস্নান করত। তবে এই নিয়ে সবচেয়ে বেশি যে ঐতিহাসিক ঘটনার কথা শোনা যায় তা হলো, রানি ক্লিওপেট্রার দুধ দিয়ে গোসল করা। সৌন্দর্য ধরে রাখতে তিনি নাকি গাধার দুধ দিয়ে গোসল করতেন। জানা যায়, ক্লিওপেট্রা ছাড়াও রোমান সম্রাজ্ঞী পপেয়া ও ইংলিশ রানি ক্যাথরিন পার ও প্রথম এলিজাবেথও দুধ দিয়ে গোসল করতেন।
পরবর্তী সময় অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় দুধস্নান আসলেই ত্বক ভালো রাখতে সহায়তা করে।
আদর্শ খাবার দুধ—প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল, ল্যাকটিক অ্যাসিডে ভরপুর। এসব উপাদান ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। ত্বক কোমল ও আর্দ্র রাখার পাশাপাশি ত্বকের নানা সমস্যা রোধ করতেও দুধ অনেক কার্যকর। দুধ দিয়ে ত্বকের পরিচর্যা নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও দুধস্নান নিয়ে খুব সীমিত গবেষণা রয়েছে। এরপরও কয়েক বছর ধরে এই সৌন্দর্য পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যে কয়েকটি গবেষণা হয়েছে, তা থেকে জানা যায় দুধস্নানের অনেক উপকারিতার কথা।
দুধ দিয়ে গোসল করলে তা—
* ত্বক আর্দ্র রাখে।
* ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে।
* ত্বকে বয়সজনিত ভাঁজ ও বলিরেখা কমাতে পারে।
* ত্বকের বিভিন্ন রকমের প্রদাহ (অ্যাকজিমা, সোরিয়াসিস, পয়জন আইভি) কমায়।
* রোদে পোড়া দাগ কমায়।
তাই কারও দুধে অ্যালার্জি না থাকলে এ দিয়ে গোসল করা যায়।
দুধ দিয়ে গোসল মানেই যে বাথটাব বা বালতিভর্তি খাঁটি দুধ নিয়ে ইচ্ছামতো গায়ে ঢেলে গোসল করা, ব্যাপারটা তা নয়। গোসলের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ দুধ পানিতে মিশিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে মেশানো যাবে আরও কিছু প্রাকৃতিক উপাদান। দুধ দিয়ে গোসলের সবচেয়ে সহজ রেসিপি এখানে দেওয়া হলো:
১। ১-২ কাপ দুধ (গরু বা ছাগলের দুধ বা বাটারমিল্ক—মাখন বানানোর পর যে দুধ অবশিষ্ট থাকে)।
২। ১ কাপ ইপসম লবণ।
৩। ৪ থেকে ৫ টেবিল চামচ মধু।
৪। পরিমাণমতো গোলাপজল।
৫। ১ চামচ নারকেল বা জলপাইয়ের তেল।
বাথটাবে কুসুম গরম পানিতে ওপরের সব উপকরণ মিশিয়ে ১৫ মিনিট শরীর ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর স্বাভাবিকভাবে গোসল করতে হবে। যাঁদের বাথটাব নেই, তাঁরা বালতির ভেতর পানিতে সব উপাদান মিশিয়ে গোসল করতে পারেন।
আর একটি কথা না বললেই নয়, জানা যায়, দুধস্নান কিন্তু ক্লান্তি ও উদ্বেগ দূর করতেও বেশ সহায়ক। এতে ভালো ঘুমও হয়। তাই সুযোগ পেলেই সপ্তাহে অন্তত একটা দিন দুধস্নান করতে পারেন।
ছবি: পেকজেলসডটকম