পায়ের দুর্গন্ধে পালিয়ে যাচ্ছে সবাই? জেনে নিন এই বিব্রতকর সমস্যার কারণ ও সহজ প্রতিকার
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ধরুন, এই শীতের মৌসুমে কাজ শেষ করে কোনো অনুষ্ঠান বা বাড়িতে এলেন। জুতা খুলতেই, আপনার নাকে দুর্গন্ধ এল। আর তার থেকেও বেশি দুর্গন্ধ পাচ্ছেন আপনার আশেপাশের মানুষজন। তারপর যখন মোজা খুললেন, দেখলেন আপনার আশেপাশের মানুষ রীতিমতো পালাচ্ছে। শীতকালে জুতা খুললে অনেকেরই জুতা, মোজা আর পা থেকে এমন দুর্গন্ধ পাওয়া যায়।

জুতা খুললে অনেকেরই জুতা, মোজা আর পা থেকে এমন দুর্গন্ধ পাওয়া যায়
জুতা খুললে অনেকেরই জুতা, মোজা আর পা থেকে এমন দুর্গন্ধ পাওয়া যায়

কিছু কিছু মানুষের জুতা পরে থাকা অবস্থাতেও দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। যেমন বাসের মধ্যে, অফিসে বা রেস্টুরেন্টে প্রায়ই এমন দুর্গন্ধের উপস্থিতি টের পাওয়া যায় এই ঋতুতে। মূলত যাঁদের পা অনেক ঘেমে যায়, তাঁরাই এই বিব্রতকর সমস্যায় ভোগেন। এই ঘামের জন্য জুতা, মোজা ও পায়ে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। আর এর প্রভাবেই বাজে গন্ধের সৃষ্টি হয়। এই সমস্যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ব্রোমোডোসিস বলে। আর ব্যাকটেরিয়ার নাম হচ্ছে ব্রেভিব্যাকটেরিয়া।

বিজ্ঞাপন

কেন ও কীভাবে এই দুর্গন্ধ কেন হয়

আমাদের পা যখন জুতা আর মোজায় আবদ্ধ থাকে, তখন পা বেশ পরিমাণ ঘাম উৎপন্ন করে। এর ফলে সেখানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। আর এই তাপমাত্রা কিছু ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর জন্য খুব উপযুক্ত। ব্যাকটেরিয়া পায়ের ঘাম, চামড়া থেকে বের হওয়া তেল আর কিছু মৃতকোষ থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে বংশবিস্তার করে এবং বাজে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। শুধু ব্যাকটেরিয়া না, কিছু কিছু ফাঙ্গাস বা ছত্রাক আছে, যাদের মাধ্যমে পা থেকে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। পায়ে দুর্গন্ধ হওয়ার আরো কিছু কারণ আছে। যেমন:

১. প্রতিদিন একই জুতা আর একই মোজা অনেক দিন ধরে ব্যবহার করা।

২. পা প্রতিদিন পরিষ্কার না করা

একই জুতা-মোজা বারবার ব্যবহার করলে ব্যকটেরিয়া জমে দুর্গন্ধ হয়
একই জুতা-মোজা বারবার ব্যবহার করলে ব্যকটেরিয়া জমে দুর্গন্ধ হয়

৩. অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ গ্রহণের পরিমাণ বাড়ালে এর প্রভাব হিসেবে এই দুর্গন্ধ বৃদ্ধি পেতে পারে।

৫. বিভিন্ন হরমোনের জন্যেও এই সমস্যা দেখা যায়। যেমন গর্ভকালীন অবস্থা, বয়ঃসন্ধিকালীন অবস্থা ইত্যাদি।

বিজ্ঞাপন

কীভাবে দূর করবেন পায়ের দুর্গন্ধ

১. পা প্রতিদিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন

প্রতিদিন গোসলের সময় অনেকেই পায়ের দিকে খেয়াল করেন না। মনে রাখা দরকার, সুস্থ থাকতে হলে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পা পরিষ্কারের জন্য কম ক্ষারযুক্ত সাবান বা বডিওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। পা ঘষতে স্ক্রাব বা ঝামা ব্যবহার করতে পারেন। সুপারশপ থেকে শুরু করে ফুটপাতেও মাটি বা প্লাস্টিকের তৈরি পা পরিষ্কার করার ঝামা, স্ক্রাব সহজেই পেয়ে যাবেন। এগুলো দিয়ে প্রতিদিন গোসলের সমযলতোভাবে পা ঘষে পরিষ্কার করতে পারেন। আর অবশ্যই পায়ের আঙুলের আশেপাশে ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। এভাবে কিছুদিন যত্ন করলেই দেখবেন পা থেকে তীব্র দুর্গন্ধ আসা বন্ধ হবে।

পা ঘষতে স্ক্রাব বা ঝামা ব্যবহার করতে পারেন
পা ঘষতে স্ক্রাব বা ঝামা ব্যবহার করতে পারেন

এছাড়া, ছোট বালতিতে কুসুম গরম পানি ঢেলে, তাতে একটা লেবুর রস আর আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। এরপর দুই পা ঐ বালতিতে কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। পানির পরিমাণ যেন কমপক্ষে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত থাকে। স্ক্রাব দিয়ে ঘষে পা পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর ভালোভাবে পা মুছে শুকিয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ৩ দিন করে গোসলের সময় এভাবে পা পরিষ্কার করলে খুব শীঘ্রই পা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানো বন্ধ হবে।

নিয়মিত পা পরিষ্কার করলে খুব শীঘ্রই পা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানো বন্ধ হবে।
নিয়মিত পা পরিষ্কার করলে খুব শীঘ্রই পা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানো বন্ধ হবে।

২. পায়ের নখ সবসময় ছোটো ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নখ ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। কারণ নখের ফাঁকে মৃত চামড়ায় পানি জমে ব্যাকটেরিয়া বিস্তার লাভ করতে পারে।

নখ ছোট ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
নখ ছোট ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে

৩. এক মোজা অনেক দিন ব্যবহার না করে পরিবর্তন করে ব্যবহার করা উচিত। যাঁদের পা অনেক ঘেমে যায়, তাঁদের ২ দিনের বেশি একই মোজা কখনোই ব্যবহার করা উচিত নয়। তাছাড়া মোজা ভালো ও প্রাকৃতিক তন্তুর কেনা উচিত একটু দাম বেশি হলেও।

সুতি বা উলের ভালো মোজা পরুন
সুতি বা উলের ভালো মোজা পরুন

৪. অ্যান্টিফাঙ্গাল ফুট স্প্রে বা পাউডার কিনতে পাওয়া যায়। এগুলোর ব্যবহার পায়ের বাজে গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।

খুব আঁটসাঁট জুতা পরবেন না সবসময়
খুব আঁটসাঁট জুতা পরবেন না সবসময়

৫. খুব আঁটসাঁট জুতা বা যেসব জুতা আর্দ্রতা ধরে রাখে সেগুলো ব্যবহার না করা। বাড়িতে জুতার মধ্যে লেবুর খোসা দিয়ে রাখতে পারেন। জুতার বাজে গন্ধ কমে যাবে।

৬. যদি খুবই দ্রুত সাময়িক সময়ের জন্য পায়ের গন্ধ দূর করতে চান, তারা পায়ে সরাসরি ডিওডোরেন্ট স্প্রে করতে পারেন।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন: হাইপারহাইড্রোসিস। এক্ষেত্রে এই সমস্যায় ভোগা মানুষের শরীরে প্রচন্ড ঘাম উৎপন্ন হয়। আর পায়ের দুর্গন্ধও মাত্রা ছাড়ায়। এক্ষেত্রে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

তথ্যসূত্র : হেলথলাইন, এনএইচএস

ছবি: পেকজেলস ডট কম

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬: ৩৪
বিজ্ঞাপন