বিজ্ঞাপন
বিশ্ববাজারে প্রথম বায়োফ্যাক্টরভিত্তিক সৌন্দর্যপণ্য

গ্লোবাল লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড সিনথিয়া রাওলির সিইও অ্যালি এগান ছিলেন তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী। এ নিয়ে কখনো বড় সমস্যায় পড়তে হয়নি তাঁকে। হঠাৎ খেয়াল করলেন, তাঁর ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে গেছে, তা এত বেশি যে মুখে ড্রাই প্যাচ পর্যন্ত দেখা দিয়েছে। এই সমস্যা নিয়ে তিনি বেশ কয়েকজন ডার্মাটোলজিস্টের দ্বারস্থ হন। সবাই জানান এটি কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস ছাড়া কিছুই নয়। আর এটি হয়েছে তাঁর ব্যবহৃত কোনো সৌন্দর্য পণ্য থেকে। ত্বকবিশেষজ্ঞদের পরামর্শে বিশ্বস্ত সব সৌন্দর্য পণ্যই ব্যবহার বন্ধ করলেন। ত্বকচর্চার রুটিনে যোগ হলো নতুন সব পণ্য। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। এভাবেই কেটে গেল কয়েক বছর।

বিশ্ববাজারে প্রথম বায়োফ্যাক্টরভিত্তিক সৌন্দর্যপণ্য

ঠিক চার বছর পর অ্যালি তাঁর ত্বকের সমস্যার আসল রহস্য উদ্‌ঘাটন করলেন। মা হওয়ার জন্য অনেক দিন ধরে বেশ সংগ্রাম করছিলেন তিনি। শেষমেশ তাঁকে যেতে হয় ফার্টিলিটি ক্লিনিকে। সেখানে গিয়ে আবিষ্কার করলেন, তিনি হাশিমোতো রোগে আক্রান্ত। এটি একধরনের অটোইমিউন ডিজিজ, যা থাইরয়েডকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই রোগ তাঁর বন্ধ্যাত্ব ও ত্বকের ড্রাই প্যাচের কারণ। ওষুধ ও ডায়েটের মাধ্যমে তিনি দুটি সমস্যা থেকে মুক্তি পান।

বিজ্ঞাপন

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে অ্যালি এমন একটি স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড তৈরির অনুপ্রেরণা পেলেন, যা হরমোনের ওপর ভিত্তি করে ত্বকের চাহিদা অনুযায়ী নিরাপদ ও কার্যকর সৌন্দর্য পণ্য সরবরাহ করবে। করোনা পরিস্থিতি যখন খুব খারাপ, ঠিক তখন সিনথিয়া রাওলির সিইও পদ থেকে ইস্তফা দেন। এরপর জমানো কিছু অর্থ দিয়ে দীর্ঘ এক বছর কঠোর পরিশ্রম করে গড়ে তোলেন ‘ভেরাসিটি’, যাকে বলা হচ্ছে ইতিহাসের প্রথম বায়োফ্যাক্টরভিত্তিক স্কিনকেয়ার লেবেল।

বিশ্ববাজারে প্রথম বায়োফ্যাক্টরভিত্তিক সৌন্দর্যপণ্য

২০২১ সালের জুন মাসে ব্র্যান্ডটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য সৌন্দর্যচর্চার বিজ্ঞানকে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে কাজে লাগানো। এ জন্য ভেরাসিটি শুরুতেই একজন গ্রাহকের লালা সংগ্রহ করে হরমোন ও ত্বকের পিএইচ নির্ণয় করে। এই ছোট্ট টেস্টের মাধ্যমে ত্বক ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিশদ ধারণা পাওয়া যায়। এভাবে একজন মানুষ নিজের হরমোনের অবস্থা এবং সে অনুযায়ী ত্বক সুস্থ রাখার দীর্ঘস্থায়ী উপায় ও উপাদান সম্পর্কেও জানতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

টেস্ট পারসোনাল হলেও ভেরাসিটির প্রোডাক্ট কিন্তু বেসপোক নয়। এসব প্রোডাক্টের মধ্যে আছে হরমোনজনিত কারণে হওয়া ত্বকের সমস্যাগুলো সারাতে সক্ষম এমন সব উপাদানে তৈরি চারটি ভাইটাল কনসেন্ট্রেট, একটি ময়শ্চেরাইজার ও একটি সিরাম। এ ছাড়া কাস্টমারদের জন্য ডায়েট, লাইফস্টাইল ও সাপ্লিমেন্ট–সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে ভেরাসিটিতে নারী চিকিৎসকদের একটি দল নিয়োজিত আছে। এই মেডিকেল টিমে আছে ডার্মাটোলজিস্ট, এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, ওবসটেট্রেশিয়ান-গাইনিকোলজিস্ট, ফাংশনাল মেডিসিন, মলিকিউলার ও ইন্টেগ্রেটিভ ফিজিওলজি অথবা নিউট্রিশন–বিশেষজ্ঞ।

ভেরাসিটির প্রোডাক্ট সব ধরনের ইডিসিমুক্ত। ব্র্যান্ডটির ওয়েবসাইটে গেলে একটি ইনগ্রেডিয়েন্ট লিস্ট পাওয়া যাবে। সেখানে রয়েছে ১০৩টির মতো হরমোন ও ত্বকের জন্য নিরাপদ কেমিক্যালস ও প্ল্যান্ট এক্সট্রাক্ট এবং ৩০টির মতো ক্ষতিকর হরমোন ডিসরাপ্টারের নাম। এই লিস্ট করা হয়েছে সবাইকে স্কিনকেয়ার ইনগ্রেডিয়েন্ট সম্পর্কে সচেতন করতে। এটি শুধু ভেরাসিটির কাস্টমারদের জন্য নয়, সবার জন্য। কারণ, এই হরমোন টেস্টিং স্কিনকেয়ার অনেকের জন্যই সুলভ নয়। যাঁদের সামর্থ্য নেই, তাঁরা যেন অন্তত ইডিসি ও টক্সিনযুক্ত প্রোডাক্ট এড়িয়ে নিজেদের ত্বক ও শরীরের যত্ন নিতে পারেন।

বিশ্ববাজারে প্রথম বায়োফ্যাক্টরভিত্তিক সৌন্দর্যপণ্য

অনেক ডার্মাটোলজিস্ট ও বিউটি এক্সপার্টদের ধারণা, হরমোন পরীক্ষা সৌন্দর্য দুনিয়ার ‘নেক্সট বিগ থিং’। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে ভেরাসিটির মতো আরও অনেক ব্র্যান্ডের আবির্ভাব অবশ্যই হবে এবং সৌন্দর্যচর্চার ভবিষ্যৎও এদিকে ধাবিত হচ্ছে।

তথ্যসূত্র: হারপার’স বাজার, বার্ডি, ফোর্বস, এডিটোরিয়ালিস্ট

ছবি: হাদী উদ্দীন ও ভেরাসিটির ওয়েবসাইট

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮: ০৬
বিজ্ঞাপন
হাল ফ্যাশন