অনেক সময় দেখা যায় ত্বক ভালো রাখতে আমরা অতিরিক্ত কৃত্রিম সামগ্রী ব্যবহার করে ফেলি। এতে ত্বকে দেখা যায় বিরূপ প্রভাব। এর সঙ্গে যুক্ত হয় দূষণ, স্ট্রেস, রাত জাগা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস কিংবা অতিরিক্ত কসমেটিকস ব্যবহারের প্রভাব। তবে ত্রিশের পর জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে প্রাকৃতিকভাবেই ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখা সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক পাঁচটি প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে যা আপনার ত্বককে ত্রিশের পরেও রাখবে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।
ত্বক ভালো রাখতে আমরা ত্বকে কী ব্যবহার করছি তা নিয়েই বেশি ব্যতি-ব্যস্ত থাকি। ভুলেই যাই খাওয়া দাওয়ার ওপরও নজর রাখতে হবে। কারণ খাবারই আপনার ত্বককে ভেতর থেকে ভালো রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখা। যেমন ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার কিংবা অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার ত্বকের সবচেয়ে বড় শত্রু। আর বয়স বাড়ার সঙ্গে এগুলো ত্বকের জন্য আরও ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। তাই এসব খাবারের পরিবর্তে খেতে পারেন ওমেগা-থ্রি সমৃদ্ধ চর্বি যেমন অ্যাভোকাডো, বাদাম, সামুদ্রিক মাছ কিংবা ঘি। এ ছাড়া খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ বেরি, শসা ও তরমুজের মতো হাইড্রেটিং ফল এবং পালং বা ধনে পাতার মতো সবুজ শাকসবজি। এই বয়সে ত্বককে হাইড্রেটেড রাখাও অত্যন্ত জরুরি। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। এটি ত্বককে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখে ও উজ্জ্বলতা বাড়ায়। কফির বদলে পান করতে পারেন গ্রিন টি। এতে ক্যাফেইন তো আছেই, পাশাপাশি এটি ত্বকের প্রদাহ কমায় ও নিস্তেজ ভাব দূর করে।
বর্তমানে বাজারে অতিরিক্ত স্কিনকেয়ার পণ্যের ভিড়ে মাঝে মাঝে আমরা টালমাটাল অবস্থায় পড়ে যাই। কিন্তু ব্যাপার হলো আমাদের দরকার একটি সহজ, কার্যকর এবং নিয়মিত রুটিন। প্রতিদিন ত্বক পরিষ্কারের জন্য একটি ভালো মানের ক্লিনজার ব্যবহার করুন। সেই সঙ্গে ভিটামিন সি সিরাম ও একটি হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। রোদ, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা অবশ্যই প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে ১-২ দিন মৃদু কোনো এক্সফোলিয়েটর (যেমন ল্যাকটিক অ্যাসিড বা পিএইচএ) ব্যবহার করতে পারেন। সেই সঙ্গে চাইলে ত্রিশের পর ত্বকের যত্নে যুক্ত করতে পারেন রেটিনয়েড। আর কখনোই ত্বকে মেকআপ নিয়ে ঘুমানো যাবে না।
শরীরচর্চা শুধু ফিট থাকার জন্যই নয়, এটি ত্বককেও উজ্জ্বল করে। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাড়ে। যার ফলে ত্বকে বেশি অক্সিজেন সরবরাহ হয়। এতে ত্বক হয় টান টান ও প্রাণবন্ত। স্ট্রেস কমাতেও সাহায্য করে ব্যায়াম, যা ব্রণের মতো একটি গুরুতর সমস্যার অন্যতম কারণ। তবে ব্যায়ামের পর অবশ্যই মুখ ধুয়ে ফেলুন, নয়তো ঘামের ফলে জমা ময়লা ত্বকে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
আমাদের ত্বকের বেশির ভাগ সমস্যাই পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবের কারণে। ত্রিশের পরে এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে গভীর ঘুমের সময় শরীর ত্বকের কোষগুলোকে মেরামত করে, কোলাজেন তৈরি করে এবং প্রদাহ কমায়। অর্থাৎ বলা যেতে পারে ঘুম হলো একটি প্রাকৃতিক স্কিনকেয়ার। তবে রাতে ঘুমানোর আগে মোবাইল বা স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন। এর পরিবর্তে বই পড়ুন বা অরগানিক চা পান করুন। এ ছাড়া,অনেকেই সিল্কের বালিশের কভার ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। এতে ত্বক ও চুলে ঘর্ষণ কম হয়। ফলে ত্বক ও চুল থাকে প্রাণবন্ত।
সবশেষে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আত্মবিশ্বাস। যখন আপনি নিজেকে ভালোবাসবেন, নিজের যত্ন নেবেন, সেটি আপনার চোখে মুখে ফুটে উঠতে বাধ্য। যা আপনার শরীর,মন ও ত্বক সবকিছুর ওপরেই প্রভাব ফেলে। তাই নিজেকে ভালো রাখতে যা যা দরকার সব করুন। টক্সিক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসুন, নতুন কিছু শিখুন, হাওয়া বদলের জন্য দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন।
ছবি: পেকজেলসডটকম ও ইনস্টাগ্রাম