এমন দিনে জটমুক্ত, ঝরঝরে চুলের জন্য এই একটি উপকরণই যথেষ্ট
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ঝলমলে, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও ঘন চুল অনেকেরই পরম আকাঙ্ক্ষার বস্তু। তবে বর্তমান যুগে পরিবেশদূষণ, ব্যস্ত জীবনযাপন, দুশ্চিন্তা, পুষ্টিহীনতা  কিংবা ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে চুলের প্রতি যত্নের অভাবে চুলের বিভিন্ন সমস্যা বেড়ে গিয়েছে। এদিকে আর্দ্র আর গরম আবহাওয়ায় ঘাম-তেলের কবলে পড়ে সাধের চুলগুলোর ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা।

বাজারে পাওয়া বাহারি পণ্য চুলকে সুন্দর করার ভরসা দিলেও, তা অনেকেরই নাগালের বাইরে।  কিন্তু যদি আমাদের চুলের সমস্যার প্রতিকার সব সময় আমাদের নাগালের মধ্যে থাকে? রাইস ওয়াটার কিংবা চালধোয়া পানি চুলের যত্নের জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী উপকরণ, যা জাপান, চীন আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চুলের বৃদ্ধির জন্য রাইস ওয়াটারের উপকারিতা ও আপনার চুলের যত্নে কীভাবে রাইস ওয়াটার প্রস্তুত ও ব্যবহার করবেন, তা জানাতেই আমাদের আজকের আয়োজন।

হিয়ান যুগ থেকেই জাপানিজ নারীরা দীঘল কালো চুল পেতে চালধোয়া বা চালবাটা মিশ্রিত পানি ব্যবহার করে আসছেন। যুগ যুগ ধরে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ঘরে ঘরে ব্যবহৃত এই টোটকাকে আবার পশ্চিমা দুনিয়ায় জনপ্রিয় করে তুলেছেন হিপহপ সংগীত তারকা কার্ডি বি। টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামেও ঝড় তুলেছে এটি। বিভিন্ন ছোট থেকে বড় তারকারা নিজেদের রূপচর্চায় যোগ করছেন রাইস ওয়াটার। কোরিয়ান বিউটি রুটিনগুলো প্রায়শই ত্বকের যত্নে রাইস ওয়াটারের ভূমিকা নিয়ে কথা বলে। এমনকি বিভিন্ন বিউটি প্রোডাক্টও তৈরি করা হচ্ছে এই ফর্মুলাটি ব্যবহার করে।  

বিজ্ঞাপন

রাইস ওয়াটারের পুষ্টিগুণ

ভেজানো চাল কিংবা ভাত রান্নার পরে অবশিষ্ট তরলের (ভাতের মাড়) ৭৫-৮০ শতাংশই  স্টার্চ দিয়ে তৈরি। এই স্টার্চি তরলটি প্রাকৃতিকভাবে ধানের শীষে থাকা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজগুলোর জন্য একটি আধার হিসেবে কাজ করে।
রাইস ওয়াটারে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। যেমন:
● অ্যামিনো অ্যাসিড
● ভিটামিন বি
● ভিটামিন ই
● অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
● খনিজ পদার্থ
● ইনোসিটল

চুলের যত্নে রাইস ওয়াটার

মসৃণ এবং চকচকে চুল

চাল ভিজিয়ে রাখার পর অবশিষ্ট পানি চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে চুলের আগা ফেটে যাওয়া, চুল নিস্তেজ, রুক্ষ ও প্রাণহীন হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসে। নিয়মিত ব্যবহারের মাধ্যমে চুলের প্রোটিন ক্ষয়ে যাওয়া রোধের মাধ্যমে চুল মাঝখান থেকে ভেঙে যাওয়া রোধ হয়।

মজবুত চুল

রাইস ওয়াটারের প্রোটিন আর অ্যামাইনো অ্যাসিড চুলকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি সংবেদনশীল চুলগুলোকে শক্তিশালী করে চুল পড়া এবং ভাঙা কমায়, যার ফলে সময়ের সঙ্গে  সঙ্গে নিচের দিকের চুল পাতলা হয়ে আসে না।

চুলকে জটমুক্ত করে

চুলকে মসৃণ করতে যেখানে প্রতি মাসে আমরা কন্ডিশনারের পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করছি, সেখানে রীতিমতো বিনামূল্যে চালের পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিলেই বিপত্তি কাটবে। চালের পানি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। এটি চুলকে মসৃণ করে ও চুল জটমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়

চুলের বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে রাইস ওয়াটার। এতে রয়েছে ইনোসিটল নামের একটি কার্বোহাইড্রেট, যা ক্ষতিগ্রস্ত চুলে প্রবেশ করে চুলকে মেরামত করে এবং আরও ক্ষতি হওয়া রোধ করতে সাহায্য করে। এটি চুলের গোড়া শক্ত করে আর চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।

বিজ্ঞাপন

রাইস ওয়াটার তৈরির উপায়

চুলের জন্য রাইস ওয়াটার প্রস্তুত করার দুটি মোটামুটি সহজ উপায় রয়েছে। দুটি উপায় সম্পর্কেই জেনে নেওয়া যাক।

চাল  ভেজানো

আধা কাপ চাল ভালো করে ধুয়ে নিন। একটি পরিষ্কার পাত্রে চাল রাখুন এবং ২ কাপ পানি যোগ করুন। এটিকে কমপক্ষে ৩০ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখুন। সারারাতও ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে। একটি পরিষ্কার পাত্রে পানি ছেঁকে নিয়ে একটি স্প্রে বোতলে সংরক্ষণ করুন। অবশিষ্ট পানি সর্বোচ্চ ৪-৫ দিনের জন্য ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। তবে প্রতিবার ব্যবহারের সময় নতুন করে তৈরি করে ব্যবহার করাই শ্রেয়।

ফোটানো

আধা কাপ চাল ভালো করে ধুয়ে নিন। এবার দুই কাপ পানি দিয়ে ভাত রান্না করুন। ভাত রান্না হয়ে গেলে অবশিষ্ট পানি (ভাতের মাড়) ছেঁকে একটি পরিষ্কার পাত্রে রেখে দিন।

রাইস ওয়াটার ব্যবহারের নিয়ম

শ্যাম্পু করার পর

চুল ভালো করে শ্যাম্পু করে নিন। ভালোভাবে শ্যাম্পু ধুয়ে নিয়ে আলতো করে তোয়ালে দিয়ে চুল শুকিয়ে নিন। এবার আগে থেকে তৈরি করে রাখা রাইস ওয়াটার মাথার ত্বকে এবং পুরো চুলে ঢেলে দিন। ভালো করে মালিশ করে ২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। ২০ মিনিট পর স্বাভাবিকভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ ক্ষেত্রে আর কন্ডিশনার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।

শ্যাম্পু করার আগে

শ্যাম্পু করার আগে ডিপ-কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক হিসেবেও ব্যবহার করা যায় রাইস ওয়াটার।

এ জন্য আগে থেকে প্রস্তুতকৃত রাইস ওয়াটার দিয়ে মাথার ত্বক ও চুল ভিজিয়ে নিন। এবার ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর স্বাভাবিকভাবে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করে চুল ধুয়ে নিন।

চুলে রাইস ওয়াটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো শুষ্ক ত্বক ও অপ্রীতিকর গন্ধ। এসব সমস্যা এড়াতে, একটি সালফেটমুক্ত মৃদু শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া ১৫-২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে রাইস ওয়াটার চুলে রেখে দেবেন না। এতে করে গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া আরও কঠিন হয়ে যাবে। পুরো মাথায় ব্যবহারের আগে ঘাড়ের কাছের ত্বকে ব্যবহার করে দেখুন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না। এক সপ্তাহের বেশি পুরোনো এবং অস্বস্তিকর গন্ধযুক্ত রাইস ওয়াটার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন; কারণ, এটি উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি করতে পারে।

ছবি: হাল ফ্যাশন, টুইটার ও পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০: ২২
বিজ্ঞাপন