সঠিক যত্ন ও পরিচর্যার অভাবে খুশকি, উকুন, চুল পড়ার পাশাপাশি হতে পারে মাথার ত্বকে ব্যথা। মাথার ত্বকের রক্তনালি থেকে প্রদাহ চুলের ফলিকলে আসার ফলে সাধারণত এই ব্যথা হয়ে থাকে। এ ছাড়া আরও কিছু কারণে এ সমস্যা হতে পারে।
ভালোভাবে চুল পরিষ্কার না করা মাথার ত্বকে ব্যথা হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। এ জন্যই শীতকালে এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। কারণ, ঠান্ডায় অনেকে ঠিকমতো গোসল ও চুল পরিষ্কার করেন না। এতে মাথার ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন তেল চুলের উপরিভাগে জমতে থাকে। তেলের জন্য সহজেই ময়লা আটকে যায়। এ থেকে ইস্ট ইনফেকশন শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে রূপ নেয় খুশকি, অ্যাকনে, সোরাইসিস, একজিমা, ফলিকুলিটিসের মতো প্রদাহজনিত সমস্যায়।
অপরিষ্কার চুলের জন্য মাথার ত্বকে চুলকানি হয়। মাথা চুলকানোর ফলে ত্বকে সাইটোকাইন নামের একধরনের প্রোটিন নিঃসৃত হয়, যা চুলকানি বাড়িয়ে দেয়। ফলে মাথার ত্বকে রক্তপ্রবাহ অতিরিক্ত হারে বেড়ে গিয়ে ব্যথার সৃষ্টি করে।
অতিরিক্ত পরিষ্কার চুলও কিন্তু মাথার ত্বকের ব্যথার জন্য দায়ী। ওভারওয়াশিংয়ের জন্য মাথার ত্বকের পিএইচের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এতে আর্দ্রতা কমে গিয়ে ত্বক শুষ্ক হয়ে দেখা দেয় ফ্লেকস। ফলে সেবোরোয়িক ডার্মাটাইটিসের মতো প্রদাহজনিত সমস্যা হতে পারে, যা মাথার ত্বকে ব্যথা হওয়ার আরেকটি কারণ।
হেয়ার স্টাইলিংয়ের জন্য ব্যথা হতে পারে। খুব শক্ত করে পনিটেইল, খোঁপা বা বেণি করলে চুলের ফলিকল ড্যামেজ হয়ে থাকে। ফলাফল মাথার ত্বকে ব্যথা।
এ ছাড়া হেয়ার প্রোডাক্টে থাকা কোনো রাসায়নিক উপাদানের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশনের জন্যও মাথার ত্বকে ব্যথা হতে পারে। এ জন্য অনেক সময় চুল সঠিকভাবে পরিষ্কার করার পরও ব্যথা হয়ে থাকে। ব্যস্ততা বা আলসেমির জন্য অনেকে গোসলের সময় শ্যাম্পু ব্যবহার না করে এর বিকল্প হিসেবে ড্রাই শ্যাম্পু বেছে নেন। এর জন্যও মাথার ত্বকে ব্যথা হতে পারে। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়। অনেকে ড্রাই শ্যাম্পু মাথার ত্বকে লাগিয়ে থাকেন। এ সময় ঘাম ও ড্রাই শ্যাম্পু মিশে ব্যাকটেরিয়ার উৎপাদন ত্বরান্বিত করে। এ জন্য হতে পারে, ইনফ্ল্যামেশন, চুলকানি ও ব্যথা। আবার হেয়ার ডাইং, ব্লিচিং, রিবন্ডিং করার সময় বেশ কিছু রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। এগুলো চুলের গোড়ায় আটকে থেকে ইনফ্ল্যামেশন সৃষ্টি করতে পারে। চুলে উকুনের উপদ্রব হলেও মাথার ত্বকে ব্যথা হয়।
প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে মাথার ত্বকে ব্যথা হওয়ার আসল কারণ। এরপর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি টানা কয়েক দিন চুল না ধোয়ার জন্য ব্যথা হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করতে হবে। মাথার ত্বকের ইনফ্ল্যামেশন এড়ানোর জন্য নিয়মমাফিক শ্যাম্পু দিতেই হবে। যাঁদের মাথার ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত, তাঁদের প্রায় প্রতিদিন প্রাকৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ বা সালফার, জিংক বা টারের মতো অয়েল রিডিউসিং এজেন্ট দেওয়া শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত।
যাঁদের মাথার ত্বক বেশি শুষ্ক, তাঁদের দুই দিন পরপর চুল পরিষ্কার করলেই চলবে। শুষ্ক ত্বকের জন্য ভালো তেল, গ্লিসারিন, সিলিকন, মাইল্ড ক্লিনজিং এজেন্ট আছে এমন শ্যাম্পু। এতে চুলের ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে। পিএইচের ভারসাম্যও নষ্ট হয় না।
ঘন ঘন হেয়ার ট্রিটমেন্ট করা বন্ধ করতে হবে। হেয়ার ডাইং বা ব্লিচিং করার সময় সতর্কতার সঙ্গে কালার প্রোডাক্ট বাছাই করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, কোনো ডার্মাটোলজিস্ট বা হেয়ার স্টাইলিস্টের পরামর্শ নিয়ে প্রোডাক্ট কেনা। মাথার ত্বকের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন এড়াতে সাবধানতার সঙ্গে লেবেল পড়ে হেয়ার প্রোডাক্ট কেনা শ্রেয়।
অ্যালকোহল, সালফেট, প্যারাবেন আছে, এমন কোনো হেয়ার প্রোডাক্ট বা শ্যাম্পু কেনা যাবে না। এই উপাদানগুলো চুলের ক্ষতি করে থাকে।
ড্রাই শ্যাম্পু সপ্তাহে এক দিনের বেশি ব্যবহার করা যাবে না। এবং অবশ্যই সেটি সঠিক নিয়মে লাগাতে হবে। কোনোমতেই মাথার ত্বক বা চুলের গোড়ায় এটি লাগানো যাবে না।
মাথার ত্বকে ব্যথা হয়ে থাকলে চুল না বেঁধে ছেড়ে রাখাই ভালো। বাঁধলেও খুব টাইট করে নয়। এই অবস্থায় উপযুক্ত হেয়ার স্টাইল হচ্ছে লাইট ব্রেইড, লো পনিটেইল। বড় ব্যারেট হেয়ার ক্লিপ দিয়েও চুল আটকিয়ে রাখা যায়। ইলাস্টিক বা মেটাল হেয়ার ব্যান্ড এড়িয়ে স্ক্রাঞ্চি বা রিবন বেছে নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আর ব্যথা প্রতিরোধের জন্য সব সময় টাইট হেয়ার স্টাইল থেকে দূরে থাকতে হবে।
চুল আঁচড়ানোর সময়ও সতর্ক থাকতে হবে। চুল সব সময় নরম ব্রিসলের হেয়ার ব্রাশ বা মোটা দাঁতের ফাঁকা চিরুনি দিয়ে আস্তে আস্তে আঁচড়াতে হবে।
মাথার ত্বকে ব্যথা যদি ইনফেকশন বা ইনফ্ল্যামেশনজনিত সমস্যা, যেমন সোরাইসিস, একজিমা, সেবোরোয়িক ডারমাটাইটিস হয়ে থাকে, তাহলে বিশেষজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করতে হবে।
ছবি: পেকজেলসডটকম