অল্প চর্চায় সুন্দর ত্বক
শেয়ার করুন
ফলো করুন

কে-বিউটির পর স্কিন ট্রেন্ডের দুনিয়ায় আবির্ভাব ঘটে জে-বিউটি, অর্থাৎ জাপানিজ বিউটির। কোরিয়ানদের মতো জাপানিরাও বেশ সৌন্দর্যসচেতন। কয়েক শ বছর আগে থেকে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের বিশেষ প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে ত্বকের যত্ন নিয়ে আসছেন। খেয়াল করলে দেখা যাবে, কোরিয়ান আর জাপানিদের ত্বকের পার্থক্য খুব সামান্যই। কিন্তু কোরিয়ান কে-বিউটি আর জাপানিজ জে-বিউটিতে রয়েছে বেশ কিছু অমিল।

মডেল: সুহি; মেকওভার: পারসোনা; লোকেশন: ক্যনভাস স্টুডিও; ছবি: হাদি উদ্দিন
মডেল: সুহি; মেকওভার: পারসোনা; লোকেশন: ক্যনভাস স্টুডিও; ছবি: হাদি উদ্দিন

তিনটি বিষয়ের সাহায্যে জে-বিউটিকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। প্রথমটি হলো স্কিনকেয়ার এবং মেকআপ পণ্যে ব্যবহৃত অনন্য প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার। এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে মাচা গ্রিন টি, চাল, আওমোরি আপেল, জাপানিজ ওয়াইল্ড রোজ, সুবাকি (জাপানিজ ক্যামেলিয়া ফুল) তেল, ইউজু, হিনোকি, ওয়াকামে, কম্বু সিউইড, চেরি ফুল, রেইশি মাশরুম, সিশো ইত্যাদি।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, সৌন্দর্যের পণ্য তৈরিতে নির্ভুল গবেষণা ও উচ্চ মানের প্রযুক্তির ব্যবহার। অনেক সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞের মতে, জাপানিরা বিউটি ইন্ডাস্ট্রির গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে মার্কিনিদের থেকে দু–তিন বছর এগিয়ে। স্কিনকেয়ার পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রায়ই তাঁরা প্রথম যুগান্তকারী সব ফর্মুলা নিয়ে আসেন। ইতিমধ্যে জাপানিরা প্রাকৃতিক উৎস থেকে বিভিন্ন সৌন্দর্যের উপাদান নিষ্কাশনের বেশ জটিল কিছু পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে, ত্বকচর্চা সম্পর্কে যাঁরা সচেতন, তাঁদের কাছে খুব পরিচিত দুটি নাম হচ্ছে কোলাজেন ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিড। এদেরকে ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখার ‘হলি গ্রেইল’ বা অত্যন্ত আকাঙ্ক্ষিত উপাদান বলা হয়।

মডেল: সুহি; মেকওভার: পারসোনা; লোকেশন: ক্যনভাস স্টুডিও; ছবি: হাদি উদ্দিন
মডেল: সুহি; মেকওভার: পারসোনা; লোকেশন: ক্যনভাস স্টুডিও; ছবি: হাদি উদ্দিন

তবে বর্তমানে এ দুটির চেয়ে আরাধ্য এক সৌন্দর্য উপাদান হচ্ছে প্রোটিওগ্লাইকান। এটি স্যামন মাছের নাকের তরুণাস্থি থেকে নিষ্কাশিত একটি শক্তিশালী আর্দ্রতা ধারণকারী উপাদান। আধুনিক রূপবিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রোটিওগ্লাইকান আগামী দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি-এজিং বা বার্ধক্যরোধী স্কিনকেয়ার উপাদান হতে চলেছে। হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের চেয়ে ত্বকে এর আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা ১.৩ গুণ। এ ছাড়া এটি ত্বকে কোলাজেন ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের উৎপাদন উদ্দীপ্ত করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, উপাদানটি ও তার গুণাগুণ সম্পর্কে জানার পরও পরবর্তী চল্লিশ বছরে জাপানিরা ছাড়া কেউ এটি নিষ্কাশনের নিরাপদ পদ্ধতি আবিষ্কার করতে সক্ষম হননি।

বিজ্ঞাপন

জে-বিউটির তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ন্যূনতাসম্পন্ন মিনিমালিস্ট স্কিনকেয়ার রুটিন। প্রাকৃতিক উপাদানের ভিন্নতা ছাড়াও এই একটি জায়গায় কে-বিউটি আর জে-বিউটির মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল তফাত। জে-বিউটির স্কিনকেয়ার রুটিন মাত্র তিন ধাপে সীমাবদ্ধ। ক্লিনজিং-হাইড্রেটিং-সিলিং। আর বাইরে গেলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে সপ্তাহে এক দিন বাড়তি যত্নের জন্য মাস্কিং। ব্যস এটুকুই। পশ্চিমা বিশ্বে কে-বিউটির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জে-বিউটির জনপ্রিয়তা। এর পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে জীবনযাপনে মিনিমাল ধারার প্রতি সবার আগ্রহ। জে-বিউটি থেকে আসা খুব বিখ্যাত একটি স্কিনকেয়ার ট্রেন্ড হলো স্কিন ফাস্টিং। এর মানে এক সপ্তাহ ক্লিনজার ও সানস্ক্রিন ছাড়া মুখে কিছু না লাগানো। এখন অনেকেই ঝুঁকছেন এর দিকে।

মডেল: সুহি; মেকওভার: পারসোনা; লোকেশন: ক্যনভাস স্টুডিও; ছবি: হাদি উদ্দিন
মডেল: সুহি; মেকওভার: পারসোনা; লোকেশন: ক্যনভাস স্টুডিও; ছবি: হাদি উদ্দিন

জে-বিউটির জনপ্রিয়তা আগে জাপানের বাইরে খুব বেশি ছিল না। কিন্তু এখন ধীরে ধীরে তা বাড়ছে। এর পেছনে রয়েছে পশ্চিমা সেলিব্রিটি ও স্কিনফ্লুয়েন্সারদের অবদান। স্কিনফ্লুয়েন্সাররা নানারকম গবেষণা করে প্রতিনিয়ত ভালো ভালো সব জাপানি স্কিনকেয়ার পণ্য খুঁজে বের করছেন এবং সে সম্পর্কে সবাইকে জানাচ্ছেন। ভোগ ও হারপারস বাজারে সেলিব্রিটিদের সৌন্দর্য রহস্য ও রাতের ত্বকের যত্ন নিয়ে যে ভিডিওগুলো প্রচার করা হয়, সেখানে প্রায়ই তাদের টাচা, এসকে-টু, শেসেইডো, ডিএইচসির মতো জাপানি ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য ব্যবহার করতে দেখা যায়। তাই বলা যায়, কে-বিউটির মতো জে-বিউটিও এখন বৈশ্বিক পর্যায়ে সমান জনপ্রিয় ও সমাদৃত।

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০৮: ০০
বিজ্ঞাপন