ত্বকের সমস্যা সমাধানে ভিটামিন সি

ত্বকের যত্নে ভিটামিন সির উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। বর্তমান সময়ে এর ব্যবহার বিশ্বজুড়ে আরও বেড়েছে। ত্বকের প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা বজায় রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার। ভিটামিন সি ত্বকের টক্সিনগুলো দূর করতে সহায়তা করে। ফলে ত্বক স্বাভাবিকভাবে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এখনকার আবহাওয়ায় ভ্যাপসা গরমে ব্রণ এবং অন্যান্য সমস্যা হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি হয়। ভিটামিন সি এই অ্যাকনে বা ব্রণের সঙ্গেও লড়াই করে। একই সঙ্গে ত্বককে দূষণজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি কোলাজেন উৎপাদন করে এবং বার্ধক্যের লক্ষণ কমায়। সত্যিকারের ভিটামিন সি যুক্ত স্কিন কেয়ার পণ্যগুলোর রয়েছে এমনই বহুমুখী গুণ। আমরা জানি, ভিটামিন সি প্রাকৃতিকভাবে ফল ও সবজিতে পাওয়া যায় এবং খাদ্য উপাদান হিসেবে ভিটামিন সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেই সঙ্গে ত্বকের যত্নেও এখন প্রসাধনী পণ্যগুলোতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই পুষ্টি উপাদানটি।

রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি বলেন, ভালো ফল পেতে ভিটামিন সি যুক্ত ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে এরপর ভিটামিন সি সিরাম প্রয়োগ করতে হয়। রূপ-রুটিনে ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ ডে এবং নাইট ক্রিম রাখা প্রয়োজন। দ্য অর্ডিনারি, বডি শপ, দ্য ইনকিলিস্ট, জায়ান অ্যান্ড মাইজারের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের ভিটামিন সি পণ্যগুলো এখন বেশ জনপ্রিয়। তবে এসব পণ্য ব্যবহারের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে।

• সিরাম কেনার আগে একটি প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে। অল্প পরিমাণে ভিটামিন সি সিরাম নিয়ে হাতে লাগিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেখতে হবে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না। যদি কোনো অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া না থাকে, তবে নিরাপদে এটি শরীরের অন্যান্য অংশেও ব্যবহার করা যায়।

• গোসল করার পরে সিরাম ব্যবহার করা ভালো। অবশ্যই তা পরিষ্কার ত্বকে ব্যবহার করতে হবে।

• সিরাম লাগানোর কিছুক্ষণ পর ময়েশ্চারাইজার এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। ভালো ফলাফলের জন্য দিনে দুবার ব্যবহার করতে হবে।

ভিটামিন সি চোখের নিচের কালি কমায়

চোখের নিচে কালি পড়ে যাওয়াকে ডার্ক সার্কেল বলে। যখন পর্যাপ্ত ঘুম হয় না কিংবা খুব স্ট্রেস থাকে, তখনই চোখের নিচের স্তরে কালো দাগ হয়। একটি ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন সি চোখের নিচের পাতলা ও সংবেদনশীল ত্বককে শক্তিশালী করে, সেই সঙ্গে তা কালো দাগ কমাতে এবং প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এত শক্তিশালী যে তা চোখের নিচের ত্বকের ভেতরের অংশের রক্তনালিগুলোকে প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। ফলে কালো দাগ পড়তে পারে না সহজে। তবে এ জন্য পর্যাপ্ত ঘুম ও স্ট্রেস কমানোও জরুরি।

ত্বকের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো কোলাজেন, যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এর উৎপাদন হ্রাস পায়। ফলে বলিরেখা দেখা দেয়। গরমে, দূষণে বা সূর্যের প্রভাবের কারণেও কোলাজেনের ভাঙন শুরু হয়। ভিটামিন সি এই ভাঙন অনেকাংশে রোধ করতে সহায়তা করে। গবেষকেরা বলেন, সঠিক পরিমাণে ভিটামিন সি প্রয়োগের ফলে বলিরেখা কমে যায়, ত্বক মসৃণ হয় এবং কোলাজেন উৎপাদনও বেড়ে যায়। কোলাজেনের উৎপাদন বাড়িয়ে ক্ষত নিরাময় করতেও সাহায্য করে এই ভিটামিন। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা ফুসকুড়ি,ত্বকের লালভাব, ব্রণ ও সোরিয়াসিস কমাতে সাহায্য করে।

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ফলে এবং পরিবেশদূষণের প্রতিক্রিয়ায় ত্বকে হাইপার-পিগমেন্টেশন হতে পারে। ফলে ত্বকে কালো দাগ তৈরি হয়। কিন্তু দেখা গেছে, ভিটামিন সি ব্যবহারের ফলে হাইপার-পিগমেন্টেশন অনেকটা কমে যায়।

এই একটি ভিটামিনেই রয়েছে ত্বকের জন্য উপকারী এত গুণ। তাই এই ভ্যাপসা গরমে, চোখ বন্ধ করেই বেছে নেওয়া যায় ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ পণ্যগুলো। তবে ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া উচিত। সমস্যা বেশি হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।