শরীরের দুর্গন্ধের ব্যাপারে আমরা সবাই বেশ সচেতন থাকি। এই জন্য ব্যবহার করি নানা রকমের ডিওডোরেন্ট, বডি স্প্রে ও নামীদামি ব্র্যান্ডের পারফিউম। কিন্তু দুর্গন্ধ কেবল শরীর নয়, হতে পারে চুলেও। বিশেষ করে এই গরমে। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা অনেক কম। অনেকেই এই সমস্যায় ভুগে থাকলেও কেবল সুগন্ধি শ্যাম্পু ব্যবহার করে দুর্গন্ধ আড়াল করার চেষ্টা করেন। তবে আদতে এতে কোনো উপকার হয় না। বরং এই অস্বস্তিকর সমস্যার জন্য হামেশাই লজ্জায় পড়তে হয়। এ থেকে দ্রুত সমাধান পেতে হলে এর মূল কারণ জানতে হবে।
কারণ
এই গরমে অতিরিক্ত ঘামের জন্য মাথার ত্বক ও চুলে দুর্গন্ধ হতে পারে। বাতাসের ধুলাবালু ও রাসায়নিক উপাদান চুলে আটকে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়। ঘেমে যাওয়ার পর চুল ঠিকমতো পরিষ্কার না করলে ঘাম ও এই ব্যাকটেরিয়া মিলে খুব সহজে দুর্গন্ধ তৈরি করে।
সঠিকভাবে চুল পরিষ্কার না করলেও এই বাজে সমস্যার কবলে যে কেউ পড়তে পারেন। চুল ঠিকমতো পরিষ্কার না করলে যেমন ঝামেলা, তেমনই অতিমাত্রায় পরিষ্কার করলেও বিপদ। অনেকেই আছেন, যাঁরা প্রতিদিন শ্যাম্পু করেন, এটা মোটেও ঠিক নয়। এতে মাথার ত্বক তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারায়। প্রাকৃতিক তেল উৎপাদনের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। দেখা দেয় খুশকি। বাড়ে ব্যাকটেরিয়া আর ছড়ায় দুর্গন্ধ।
শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় না থাকলে অনেক সময় মাথার ত্বকের গ্রন্থি অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করে। আবার ঘামও হয় বেশি। এই তেল আর ঘাম জমে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ও হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে মাথার ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা নষ্ট হয়। এ জন্যও দুর্গন্ধ হতে পারে।
যাঁরা নিয়মিত হ্যাট বা স্কার্ফ ব্যবহার করেন, তাঁরা ঠিকমতো চুল পরিষ্কার না করলে মাথার ত্বকে দুর্গন্ধ হয়।
কখনো কখনো ডায়েটের জন্যও মাথার ত্বক দুর্গন্ধ হতে পারে। যাঁরা অতিরিক্ত আমিষ, মসলা ও ইস্টযুক্ত খাবার খান, তাঁদের শরীর ও মাথার ত্বকে দুর্গন্ধ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
অনেকের সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, সোরাইসিস, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, যেমন একজিমার মতো সমস্যা থাকে। এসব কারণেও মাথার ত্বকে দুর্গন্ধ হতে পারে।
সমাধান
যাঁদের ত্বকে সমস্যা এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা আছে, তাঁদের অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্টের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।
এ ছাড়া সবার আগে নজর দিতে হবে চুল পরিষ্কারের দিকে। ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে না। দ্য আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজিস্ট পরামর্শ দিয়েছে যে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে, যাতে কোল টার, কিটোকোনাজল, সালফার, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, সেলেনিয়াম সালফাইড, জিংক পেরিথাইয়নের মধ্যে অন্তত একটি উপাদান আছে।
এ ছাড়া ঘরোয়াভাবেও এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন হবে টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েল ও যেকোনো ক্যারিয়ার অয়েল। সেটা হতে পারে নারকেল তেল, জলপাই তেল বা কাঠবাদামের তেল। এক বা দুই টেবিল চামচ পাঁচ বা ছয় ফোঁটা টি ট্রি অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে ৩০ মিনিট। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
মাথার ত্বকে অ্যালোভেরা জেল লাগানো যেতে পারে। এতে আছে অ্যান্টিসেপটিক ও প্রদাহরোধী উপাদান, এটি মাথার ত্বক সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে। এর ফলে মাথার ত্বকে দুর্গন্ধ হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে।
সূত্র: অ্যালিউর
ছবি: হাল ফ্যাশন ও পেকজেলস ডট কম