
১. বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়
শীতকালে বাতাস ঠান্ডা হয়, আর ঠান্ডা বাতাসে জলীয় বাষ্প ধরে রাখার ক্ষমতা কম। ফলে বাতাস শুষ্ক হয়, বাতাস ত্বক থেকে ধীরে ধীরে পানি টেনে নিয়ে হাইড্রেশন কমিয়ে দেয়। বিজ্ঞানীরা এটাকে বলেন ট্রান্সএপিডার্মাল ওয়াটার লুস, ত্বক থেকে পানি বেরিয়ে যাওয়ার হার বেড়ে যাওয়া।

২. ত্বকের প্রাকৃতিক লিপিড ব্যারিয়ার দুর্বল হয়
ত্বকের উপরিভাগে সিবাম, সিরামাইড, ফ্যাটি অ্যাসিড ও কোলেস্টেরল দিয়ে একটি প্রাকৃতিক ব্যারিয়ার থাকে, যা ত্বককে আর্দ্র রাখে। শীতে সিবাম কম তৈরি হয়, ফলে ব্যারিয়ার পাতলা হয়ে ত্বক সহজে শুকিয়ে যায়।
৩. গরম পানির গোসল
শীতে গরম পানি দিয়ে গোসল স্বস্তিদায়ক হলেও এটি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে ফেলে। ফলে ত্বক আরও রুক্ষ হয়ে যায়।
৪. ইনডোর হিটারের প্রভাব
হিটার বা ব্লোয়ারে ঘরের আর্দ্রতা কমে যায়, ২০% এরও নিচে নেমে যেতে পারে। এর ফলে ত্বক দ্রুত পানি হারায়।
৫. রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া
ঠান্ডায় শরীর কোর টেম্পারেচার ধরে রাখতে রক্তনালি কিছুটা সংকুচিত হয়। ফলে ত্বকে রক্ত, অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ কমে যায়, ত্বক হয়ে পড়ে ডিহাইড্রেটেড।
৬. পানি কম খাওয়া
শীতে তৃষ্ণা কম লাগে। অনেকেই পানি খেতে ভুলে যান। এতে শরীরের অভ্যন্তরীণ হাইড্রেশন কমে যায়, যার প্রভাব সরাসরি পড়ে ত্বকে।

গোসলের নিয়ম বদলান
* গরম পানির বদলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন (৩৬-৩৯°সে.)
* গোসল ৫-৭ মিনিটের বেশি নয়
* গোসল করে ৩ মিনিটের মধ্যে ময়েশ্চারাইজার লাগান, যখন ত্বক সামান্য ভেজা থাকে—এতে আর্দ্রতা আটকে থাকে
সাবান ও বডিওয়াশ
* এসএলএস বা এসএলইএস যুক্ত হার্শ সাবান নয়
* ক্রিম-বেসড বা লিপিড-রিপ্লেনিশিং বডিওয়াশ ব্যবহার করুন
উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার
শীতকালের স্কিনকেয়ারের নায়ক দুটি উপাদান—
গ্লিসারিন: পানি টেনে ধরে, ত্বক নরম করে
পেট্রোলিয়াম জেল: ত্বক থেকে পানি বেরোতে দেয় না
এই দুই উপাদান একসঙ্গে থাকলে শুষ্ক ত্বকের জন্য দারুণ কাজ করে।

১. পানি বেশি থাকা ফল-সবজি
৮৫-৯৫% পানি ও ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ খাদ্য শরীরকে ভেতর থেকে হাইড্রেট রাখে।
* কমলা, মাল্টা, আঙুর
* শসা, লাউ, কুমড়ো
* পেঁপে, পালং শাক, লাল শাক
এগুলোর ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ত্বকের কোলাজেন ধরে রাখতে সাহায্য করে।
২. হেলদি ফ্যাট
ত্বকের লিপিড ব্যারিয়ার মজবুত করে।
* চিনাবাদাম (দৈনিক ১ মুঠো)
* ফ্ল্যাক্স সিড/তিসি (১ চামচ)
* ঘি (১-২ চামচ)
* ইলিশ, পাবদা, রুইয়ের পেটি জাতীয় তৈলাক্ত মাছ
৩. প্রাকৃতিক হিউমেকট্যান্ট খাবার
* সিদ্ধ আলু বা আলুর দম
* ডাবের পানি
এগুলো শরীরে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৪. গরম তরল পানীয়
* আদা-মধু-লেবুর চা
* তুলসী-দারুচিনি-লবঙ্গের ক্বাথ
* গোল্ডেন মিল্ক
* মুরগির ঝোল, মাশরুম বা ভেজিটেবল স্যুপ
শরীর গরম রাখে, হাইড্রেশন বাড়ায়।
৫. বাঙালির বিশেষ শীতের খাবার
নলেন গুরের পায়েস, পাটালি, তিলের নাড়ু, মোয়া—এগুলো শুধু স্বাদে নয়, শরীরের আর্দ্রতাও ধরে রাখে। খেজুরের গুড়ে প্রাকৃতিক গ্লিসারিন থাকে, যা শীতে বিশেষ উপকারী।

শীতে ত্বক ভালো রাখা কোনো কঠিন কাজ নয়; প্রয়োজন সঠিক অভ্যাস ও সঠিক খাবার। ত্বক আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ—এটাকে সুস্থ রাখতে প্রকৃতিই আমাদের সব উপায় দিয়েছে। তাই রাসায়নিক পণ্য ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হয়ে নিন, আর চাইলে এই শীতেই চেষ্টা করে দেখুন প্রাকৃতিক উপায়ে নিজের ত্বক ও মন দুটোই রাখতে সতেজ।
লেখক: খাদ্যপথ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
ছবি: এআই