ভালো কোনো ফেসিয়াল ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করার পর, পরিষ্কার ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। কারণ, ত্বক ধোয়ার পর শুষ্কতা থেকে বাঁচাতে পারে একমাত্র ময়েশ্চারাইজার। প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর একটি সুতির প্যাড বা নরম পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুখ মুছতে হবে। এরপর ত্বকের ধরন ও ঋতু বুঝে একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। এ ক্ষেত্রে আঙুলের ডগা ব্যবহার করে পরিমাণমতো ময়েশ্চারাইজার নিয়ে বৃত্তাকার গতিতে হালকা ম্যাসাজ করতে হবে। পুরোটা ময়েশ্চারাইজার ত্বকের সঙ্গে মিশে যাওয়া পর্যন্ত এটা করতে হবে।
শুধু মুখের ত্বকেই নয়, ঘাড়, হাত ও পায়ের ত্বকেও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। তা ছাড়া প্রতিবার গোসল করার পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে আর্দ্রতা দ্রুত স্থায়ী হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ পরিষ্কার করে যেমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে, তেমনি রাতের ত্বকচর্চার রুটিনেও এটা রাখতে হবে।
সারা রাতের জন্য ত্বকে কিছু ব্যবহার করলে, ভালো ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া গবেষণায় জানা গেছে, স্বাস্থ্যকর ঘুম প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে সহায়তা করে। আর ঘুমের সময় লাল এলইডি আলো ব্যবহার করা ভালো। এটা মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ করে গভীরভাবে ঘুমাতে সাহায্য করে।
যখন ত্বক পর্যাপ্ত আর্দ্রতা ধরে রাখে না, তখন শুষ্ক বা রুক্ষ হতে থাকে। অনেক সময় পরিবেশগত প্রভাব, ঘন ঘন ত্বক পরিষ্কার করা অথবা চিকিৎসাজনিত কারণেও ত্বক আর্দ্রতা হারায়। তাই লোশন, ক্রিম, সেরামের মতো পণ্যগুলো আর্দ্রতা যোগ করতে সাহায্য করে। এমন ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে হবে, যেখানে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন, সিরামাইড, এসপিএফ ও নন–কমেডোজেনিক গুণাগুণ রয়েছে। ত্বকের ছিদ্র আটকে যাবে না, এমন একটি নন–কমেডোজেনিক পণ্য হলো নিউট্রোজেনা হাইড্রো বুস্ট জেল-ক্রিম।
এ ছাড়া সূর্যের আলো থেকে সুরক্ষার জন্য এসপিএফযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এসপিএফ ৩০ যুক্ত অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে পারেন। আর, যদি ব্রণপ্রবণ ত্বক হয়, তাহলে এসপিএফ ৪০–এর সঙ্গে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে মুখকে ময়েশ্চারাইজ করতে পারে অ্যালোভেরা জেল। ত্বককে হাইড্রেট রাখতে অ্যালোভেরা ব্যবহার হয়ে আসছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। ২০০৬ সালের একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, অ্যালোভেরার নির্যাস ত্বকের হাইড্রেশন উন্নত করতে ও শুষ্কতা কমানোর জন্য একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান। এ ছাড়া ব্যবহার করা যেতে পারে দুধ বা এর সর।
শুধু ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা যায় না। এর সঙ্গে কিছু বিষয় লাইফস্টাইলে যোগ করতে হবে। ত্বককে হাইড্রেট করতে ও সেই আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এমন কিছু কৌশল কাজে লাগাতে হবে। এর মধ্যে নিয়মিত ব্যায়াম, অ্যালকোহল সেবন সীমিত করা, লবণ খাওয়া কমানো, লেটুস, শসা ও টমেটোর মতো খাবার খাদ্যতালিকায় যোগ করা উল্লেখযোগ্য।
ত্বক ময়েশ্চারাইজ করার জন্য কিছু বিষয় সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি ত্বকের ধরন বোঝা। যেমন শুষ্ক, তৈলাক্ত বা কম্বিনেশন ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজের ধরন হবে আলাদা। শুষ্ক ত্বকের জন্য প্রো–অ্যাকটিভ গ্রিন টি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। তৈলাক্ত থেকে কম্বিনেশন ত্বকের জন্য সিটাফিল ফেস ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি ত্বকের ধরন না জানেন, তবে একজন চর্মরোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
যদিও বাজারে পাওয়া ময়েশ্চারাইজারগুলোর নেতিবাচক রিভিউ খুবই কম। তবে ত্বকের অস্বস্তি বা জ্বালা এড়াতে পণ্য কেনার আগে প্যাচ পরীক্ষা করতে ভুলবেন না। যদি প্রতিক্রিয়া লক্ষ করেন, তাহলে অবশ্যই একজন চর্মরোগবিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন। যদি ব্রণ বা অ্যালার্জিক ডার্মাটাইটিসের মতো সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলেও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন
ছবি: হাল ফ্যাশন ও পেকজেলসডটকম