অ্যাকনে আর পিম্পল কি একই? দেখুন কখন কোনটা হয় আর এর প্রতিকার কী

অ্যাকনে হলো এক ধরনের ত্বকের রোগ, যা ত্বকের তেল গ্রন্থি ও হেয়ার ফলিকল বা রন্ধ্রকে প্রভাবিত করে। এই রন্ধ্রে জমে থাকা সিবাম (তৈল) ও মৃত কোষ। যখন এই দুটি এক সঙ্গে মিশে প্লাগ তৈরি করে, তখন সেখানে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় এবং ফোলাভাব, লালচে ব্রণ বা পিম্পলের সৃষ্টি হয়।

পিম্পল (Pimple) হচ্ছে অ্যাকনের দৃশ্যমান একটি উপসর্গ। অর্থাৎ ত্বকের উপর যে ছোট ছোট লালচে, পুঁজ ও ব্যথাযুক্ত (কখনো কখনো) ফুসকুড়ি দেখা দেয়, সেটিই পিম্পল।

যদিও অ্যাকনের নির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি চিহ্নিত হয়নি, তবে বেশ কিছু কারণ আছে যেগুলো অ্যাকনেকে বাড়িয়ে তোলে। যেমন:

• হরমোনের পরিবর্তন ( যেমন: বয়ঃসন্ধি, গর্ভাবস্থা, ঋতুচক্র)

• ব্রণ খোঁচানো বা ঘাঁটা

• অতিরিক্ত স্ক্রাবিং বা ধোয়া

• আটসাট জামা-কাপড়, হেলমেট বা ব্যাগের স্ট্র্যাপের চাপে

• আর্দ্রতা বা ঘাম

• তেলযুক্ত কসমেটিকস, সানস্ক্রিন ও হেয়ার প্রোডাক্ট

• কিছু ওষুধ, যেমন কর্টিকোস্টেরয়েড বা অ্যানাবলিক স্টেরয়েড

মিথ: অনেকে মনে করেন ময়লা ত্বক, চকলেট বা তেলেভাজা খাবার অ্যাকনের মূল কারণ। কিন্তু এই ধারণা ভুল।

ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অ্যাকনে দেখা দিতে পারে:

• ব্ল্যাকহেডস: রোম কূপে জমা ব্ল্যাক ডট

• হোয়াইটহেডস: রোম কূপে জমা সাদা ডট

• প্যাপিউলস: লালচে, ব্যথাযুক্ত ছোট গাঁট

• পুসটুলস: মাথায় পুঁজযুক্ত ব্রণ

• নোডিউলস: গভীর, শক্ত এবং ব্যথাযুক্ত ফোলা

• সিস্টস: পূঁজে ভরা বড় ফোলা গাঁট

চিকিৎসা নির্ভর করে অ্যাকনের ধরন ও মাত্রার ওপর ভিত্তি করে। কিছু প্রচলিত চিকিৎসা রয়েছে। তবে এসব ওষুধ সেবন বা ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

টপিক্যাল (বাইরের ব্যবহারের) ওষুধ:

• ট্রেটিনইন বা অ্যাডাপালিন ( রেটিনয়েড)

• বেনজয়েল পারঅক্সাইড

• ক্লিনডামাইসিন (অ্যান্টিবায়োটিক)

• আজেলাইক অ্যাসিড

মুখে খাওয়ার ওষুধ:

• ডক্সিসাইক্লিন (অ্যান্টিবায়োটিক)

• স্পাইরোনোল্যাকটোন (অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেন)

• যৌগিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল

• আইসোট্রেটিনইন (গুরুতর অ্যাকনের ক্ষেত্রে)

থেরাপি:

• কেমিক্যাল পিল

• লাইট থেরাপি বা ফটোডাইনামিক থেরাপি

প্রতিদিনের স্কিন কেয়ার রুটিনে কিছু সাধারণ অভ্যাস যোগ করে অ্যাকনে কমানো সম্ভব:

• হালকা ফেসওয়াশ দিয়ে দিনে ২ বার মুখ ধোয়া

• নন-কমেডোজেনিক কসমেটিকস ও সানস্ক্রিন ব্যবহার

• মুখে হাত, চুল বা মোবাইল ফোনের ঘষা এড়ানো

• ব্রণ খোঁচানো থেকে বিরত থাকা

• সুষম খাদ্যাভ্যাস ও উচ্চ গ্লাইসেমিক খাবার এড়ানো ( যেমন: সাদা ভাত, মিষ্টি পানীয় ইত্যাদি)

অ্যাকনে হচ্ছে একটি বহুল প্রচলিত ত্বকের অবস্থা বা সমস্যা, আর পিম্পল হচ্ছে তার অন্যতম উপসর্গ। যদিও এটি অনেক সময় আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে। তবে সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত যত্নের মাধ্যমে অ্যাকনে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হয়, তবে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

সূত্র: হেলথলাইন

ছবি: ইনস্টাগ্রাম