পৃথকভাবে আমলকী এবং অ্যালোভেরা দুটোই চুলের যত্নে অনেক উপকারী। আর একসাঙ্গে এই দুই উপকরণের মিশ্রণ যে চুলের যত্নে আরও বেশি উপকারী, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
চুলের যত্নে আমলকী
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ: আমলকীতে রয়েছে ভিটামিন সি যা শুধুমাত্র কোলাজেন তৈরিতেই সাহায্য করে না, সেই সঙ্গে চুলের ফলিকলগুলোকে মজবুত করতে এবং চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
স্ক্যাল্প ভালো রাখে: আমলকীতে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল প্রপার্টিজ যা খুশকি এবং স্ক্যাল্পের ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
অল্প বয়সে চুল পাকা রোধ করে: নিয়মিত আমলকী ব্যবহারের ফলে চুল সহজে পাকে না এবং চুলের প্রাকৃতিক রং বজায় রাখতে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে অ্যালোভেরা
হাইড্রেশন ও ময়েশ্চার: অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে যা চুলের ময়েশ্চার বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে চুল থাকে কোমল ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
চুল পড়া কমায়: অ্যালোভেরা স্ক্যাল্পকে রাখে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। আর সেই সঙ্গে স্ক্যাল্পে চুলকানি কমায় এবং চুলের ভেঙে যাওয়ার সমস্যাও কমায়।
চুল গজাতে সাহায্য করে: অ্যালোভেরা সুপ্ত হেয়ার ফলিকলগুলোকে উদ্দীপ্ত করে। এর ফলে সহজেই নতুন চুল গজায়।
আমলকী ও অ্যালোভেরা হেয়ার মাস্ক তৈরির নিয়ম
যা যা প্রয়োজন:
১। আমলকী গুঁড়া অথবা আমলকীর রোজ ২ টেবিল চামচ
২। অ্যালোভেরা জেল ৩ টেবিল চামচ
৩। নারিকেল তেল: ১ টেবিল চামচ (বাড়তি পুষ্টি জোগাবে)
৪। এক চা-চামচ লেবুর রস
কীভাবে তৈরি করবেন:
* প্রথমেই অ্যালোভেরা জেল তৈরি করে নিতে হবে। একটি অ্যালোভেরা নিয়ে ওপরের শক্ত আবরণ ছড়িয়ে নিন। এরপর একটি কাটা চামচের সাহায্যে জেলগুলো ছাড়িয়ে নিন।
* এরপর সেই কাটা চামচ দিয়েই জেলটি ভালোভাবে ফেটে নিন অথবা ব্লেন্ড করে নিলেও পারেন। সহজে দ্রুত হয়ে যাবে এবং ঘনত্বও ভালো হবে।
* আমলকীর কেটে টুকরোগুলো ব্লেন্ড করে ছেঁকে রস বের করে নিন। অথবা বাজার বা সুপারমার্কেট থেকে আমলকীর গুঁড়াও কিনে নিতে পারেন। আমলকীর গুঁড়া ব্যবহার করলে এর সঙ্গে পানি মিশিয়ে পেস্ট করে নিন।
* এবার আমলকীর পাউডার পেস্ট বা রস অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে বাড়তি পুষ্টির জন্য নারিকেল তেল এবং খুশকি তাড়ানোর জন্য লেবুর রস নিন। খুব বেশি ঘন না, আবার খুব বেশি পাতলাও না এমন একটি পেস্ট তৈরি করে নিন।
ব্যবহারের নিয়ম:
* শ্যাম্পু করা পরিষ্কার, জট ছাড়ানো চুল এবং স্ক্যাল্পে পেস্টটি লাগিয়ে নিন। শুকনা অথবা ভেজা চুলে এই পেস্টটি ব্যবহার করতে পারবেন।
* চিরুনি দিয়ে বা আঙুলের ডগা ব্যবহার করে বিলি কেটে কেটে ভালোভাবে চুলের গোড়া এবং স্ক্যাল্প থেকে চুলের আগা পর্যন্ত পেস্টটি লাগিয়ে নিন।
* পেস্টটি স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট আলতো হাতে ম্যাসাজ করে নিন। এতে করে আপনার স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে।
* এরপর একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে পুরো চুল আটকে রাখুন। এতে করে পেস্টটি সময়ের আগেই শুকিয়ে যাবে না।
* আমলকী এবং অ্যালোভেরার পুষ্টিগুণ যেনো চুলের গভীরে পৌঁছায়, সেজন্য ৩০-৪৫ মিনিট রেখে দিন।
* একটি মাইল্ড শ্যাম্পু এবং কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
* প্রয়োজনে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
চুলে আরও বাড়তি পুষ্টি জোগাতে আমলকী আর অ্যালোভেরার সঙ্গে ২ টেবিল চামচ টক দইও ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে পেস্ট তৈরি করে আমলকী ও অ্যালোভেরার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন। চুলকে ঝলমলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে মধু যোগ করতে পারেন।
কার্যকারিতা:
১। চুল পড়া কমাবে
২। চুল করবে মজবুত ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল
৩। স্ক্যাল্পে পুষ্টি জোগাবে এবং চুলকানি দূর করবে
৪। চুল করে ঝলমলে ও সিল্কি
কম খরচে কেমিক্যালমুক্ত কার্যকরী একটি হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে চাইলে এই আমলকী এবং অ্যালোভেরা হেয়ার মাস্কটি বেছে নিতে পারেন।
ছবি: পেকজেলসডটকম ও ইনস্টাগ্রাম