দৈনন্দিন জীবনের কাজ বা অকাজের খাতিরে আমাদের বেশির ভাগ সময় কাটে নানা রকম ডিজিটাল ডিভাইসের সামনে। আগে শুধু অফিসের হিসাব-নিকাশ আর পড়াশোনার জন্য ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটারের ওপর নির্ভর ছিল মানুষ। কিন্তু বিশ্বায়নের এই যুগে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এসে আমাদের পুরো জীবনধারাই বদলে দিয়েছে। সত্যি বলতে, আমাদের জীবন অনেকখানি সহজ করে দিয়েছে এ ডিজিটাল ডিভাইসগুলো। তবে এর যেমন সুফল আছে, তেমনি কুফলও কিন্তু আছে।
আমরা অনেকেই ঘুণাক্ষরেও হয়তো তা টের পাচ্ছি না। আমাদের হাতে কাছে থাকা মুঠোফোন বা ল্যাপটপের নীল আলো নীরবে ত্বকের ক্ষতি করে যাচ্ছে। ক্ষতির দিক বিবেচনা করলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ও ডিজিটাল ডিভাইসের নীল রশ্মি প্রায় একই কাজ করে। সেলিব্রেটি ডার্মাটোলজিস্ট ও বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ড. হাওয়ার্ড মুরাদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ২০ মিনিট ভরদুপুরে চড়া রোদে থাকা আর টানা আট ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা সমান। তিনি আরও জানান, নীল রশ্মির জন্য হতে পারে হাইপারপিগমেন্টেশন, ত্বকের ইনফ্ল্যামেশন।
স্বনামধন্য ডার্মাটোলজিস্ট ড. স্টেফানি উইলিয়ামস বলেন, নীল রশ্মি ফ্রি র্যাডিক্যাল সৃষ্টি করে ত্বকের ক্ষতি করে। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায়, যার ফলে ত্বকে খুব সহজেই বয়সের ছাপ পড়ে। এ ছাড়া অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট উচ্চশক্তিসম্পন্ন নীল রশ্মি সূর্য থেকে নির্গত ইউভি রশ্মির চেয়ে দ্রুত ত্বকের উপরিভাগ দুর্বল করে কোলাজেনের গঠন ভেঙে ফেলে। ফলাফল, অল্প বয়সে ত্বকে বলিরেখার আবির্ভাব। অন্যদিকে অনিদ্রার জন্যও কিন্তু সমানভাবে দায়ী এই রশ্মি। এটি পরোক্ষভাবে মেলাটোনিন বা ঘুমের হরমোনের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। ঘুম কম হওয়ার জন্য ত্বকের লাবণ্য কমে, বাড়ে ব্রণ আর চোখের নিচের কালচে ছোপ।
এখন তো চাইলেই কেউ হঠাৎ স্ক্রিন টাইম কমিয়ে ফেলতে পারবে না। তবে নীল আলোজনিত ক্ষতি থেকে ত্বককে বাঁচাতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। অনেকেই মনে করে, সানস্ক্রিন কেবল ঘরের বাইরে বের হলেই ব্যবহার করতে হয়। ধারণাটি একদম ভুল। শুধু বাইরে গেলেই নয়, সবার উচিত ঘরে থাকলেও দিনের বেলা নিয়ম করে তিন ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন ব্যবহার করা। কারণ, ইউভি রশ্মি আছে সবখানেই। আর এটিই ডিভাইসের নীল রশ্মি থেকে আপনার ত্বককে বাঁচাতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি সানস্ক্রিনে জিংক অক্সাইড, টাইটেনিয়াম অক্সাইড বা আয়রন অক্সাইড থাকে। কারণ, এই তিনটি উপাদান ত্বকে নীল রশ্মির আক্রমণ ঠেকাতে অধিক কার্যকর। পাশাপাশি ব্যবহার করতে হবে ভালো মানের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার।
আজকাল বাজারে কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ব্যবহারের জন্য ব্লু লাইট প্রটেক্টর শিল্ড কিনতে পাওয়া যায়। এটি ব্যবহার করলে নীল আলোর বিচ্ছুরণ অনেকাংশে কমানো যায়। আর চোখের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে ব্লু লাইট প্রটেক্টর গ্লাস বা সাধারণ রোদচশমা।
আজকাল বেশির ভাগ স্মার্টফোনে নাইট টাইম মোড অপশন আছে। এটি নীলচে আলোর পরিবর্তে হলদে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়। নীল আলোর উগ্রতা থেকে বাঁচতে নাইট টাইম মোড ব্যবহার করা ভালো। ল্যাপটপ বা মুঠোফোন ব্যবহার করার সময় একটি ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
পারলে টানা কাজ না করে ২০ মিনিট বা ৩০ মিনিট পরপর ৫ মিনিটের জন্য বিশ্রাম নেওয়া উচিত। নীল আলো কিন্তু শরীরকে শুষ্ক করে দেয়। তাই প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করতে হবে। আর সেই সঙ্গে খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি।
তথ্যসূত্র: হারপারস বাজার, অ্যালর, এভরিডে হেলথ, ওয়েবএমডি
ছবি: পেকজেলসডটকম