গত এক দশকে সৌন্দর্যবিশ্বে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ডগুলো তাদের উপাদান নিয়ে বেশ সচেতন হয়েছে। সৌন্দর্যবিশ্বে কেমিক্যালস, প্যারাবেন, সালফেটস, অ্যালকোহল—ইত্যাদিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এগুলোর বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে। কোভিডের সময় অনেকে ডিআইওয়াই ত্বকের যত্নে ঝুঁকেছেন। একে রাসায়নিকের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে মনে হয়েছিল। কিন্তু সত্যি বলতে কিছু পরিচিত প্রাকৃতিক উপাদান আছে, যার সরাসরি ব্যবহার ত্বকের যত্নের জন্য বিপদ বয়ে আনা ছাড়া কোনো উপকারই করে না।
এ নিয়ে মুম্বাইয়ের বিখ্যাত ডার্মাটোলজিস্ট ডা. মানসী শিরোলিকার বলেন, ‘আমাদের ভেতর খুব কম মানুষই আছেন, যাঁরা ব্রণের সমস্যায় ভুগে একবারের জন্য হলেও টুথপেস্ট ব্যবহার করেননি। কিন্তু আমরা ডার্মাটোলজিস্টরা, ত্বকের যত্নের জন্য রোগীদের ডিআইওয়াই পদ্ধতিকে নিরুৎসাহিত করি। কারণ, এতে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়।’ ডা. শিরোলিকার এমন চারটি উপাদানের নাম বলেছেন, যা আমরা ত্বকের সমস্যায় হরহামেশা ব্যবহার করি কিন্তু আসলেই ক্ষতিকর।
সম্ভবত সবার সবচেয়ে পছন্দের ডিওয়াইআই উপাদান। রোদে পুড়ে যাওয়াভাব কমানো, খুশকি তাড়ানো, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য অনেকেই মুখ ও মাথার ত্বকে সরাসরি লেবু ব্যবহার করে থাকেন। ডা. শিরোলিকার বলেন, রোদে পুড়ে যাওয়াভাব কমানোর জন্য এর চেয়ে খারাপ উপাদান আর হতে পারে না। কারণ, লেবু মুখে লাগালে ত্বক অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় রোদে গেলে ফাইটোডার্মাটাইটিস হবে। এটি এমন একধরনের প্রদাহ, যাতে ত্বকে লালচেভাব, জ্বালাপোড়াসহ ফোসকাও পড়ে। এ ছাড়া লেবু ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশন বৃদ্ধিতেও অবদান রাখে। ডা. শিরোলিকার এর পরিবর্তে ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ সিরাম বা আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
দ্রুত ব্রণ সারানোর জন্য তরুণ–তরুণীদের অত্যন্ত প্রিয় অভ্যাস টুথপেস্ট ব্যবহার করা। ডা. শিরোলিকার বলেন, টুথপেস্টে আছে পার–অক্সাইড ও বেকিং সোডা। কারও কারও ক্ষেত্রে এটি কাজ করে, কিন্তু এতে থাকা বেকিং সোডা ত্বকের ব্যারিয়ার দুর্বল করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এর ফলে ব্রণ বারবার ফিরে আসে। এর বদলে ওভার দ্য কাউন্টার স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ব্যবহার করা অনেক নিরাপদ।
ডিম ত্বক ও চুলে ব্যবহৃত অন্যতম জনপ্রিয় ডিওয়াইআই উপাদান। ডিমে স্যালমোনেলা থাকতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়া পেটের প্রদাহের জন্য দায়ী। ত্বকে সরাসরি লাগালে ত্বকে সংক্রমণেরও একটি ঝুঁকি থেকে যায়। এ জন্য ডা. শিরোলিকার বলেন, ত্বকে প্রোটিনের প্রয়োজন আছে। আর এটি পাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হলো ডিম মুখে না লাগিয়ে রান্না করে খাওয়া।
নারকেল তেল শরীর ও মাথার ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারী। কিন্তু মুখের ত্বকের জন্য নয়। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য একে অনেকে ব্রণ-বাস্টার মনে করতে পারে। কিন্তু নারকেল তেল প্রাকৃতিকভাবে কমেডোজেনিক। কমেডোজেনিক উপাদান ত্বকের রোমকূপ বন্ধ করে দেয়। এতে ব্রণ অনেক বেশি হয়। তাই ডা. শিরোলিকার নারকেল তেলের পরিবর্তে নন-কমেডোজেনিক তেল বা ক্রিম ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন।
তথ্যসূত্র: ভোগ ইন্ডিয়া
নোট: সব ছবিই প্রতীকী
ছবি: পেকজেলসডটকম