খুশকির সমস্যা আমাদের অনেকেরই আছে। বিভিন্ন কারণ থাকলেও মূলত মাথার ত্বকের শুষ্কতার সঙ্গে এই খুশকি নামক বিরক্তিকর সমস্যার গভীর যোগসূত্র আছে। একে তো বিভিন্ন রকমের ক্ষার ও রাসায়নিক উপাদানযুক্ত হেয়ার কেয়ার, শ্যাম্পু আর হেয়ার স্টাইলিং পণ্যের ব্যবহার আমাদের মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক তেল ছিনিয়ে নেয়।
আবার এমন শুষ্ক আবহাওয়ার সময় তেল বা কোনো ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করায় ত্বকে ফ্লেকস বা শুকনো ত্বকের খসে পড়া ছোট ছোট অগুনতি অংশ তৈরি হয়। আর এটিই হলো খুশকি। কালো চুলে দৃশ্যমান খুশকি যেকোনো সাজপোশাকের আবেদন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পারে। আবার এর ফলে সৃষ্ট চুলকানি, অস্বস্তি এমনকি চুল পড়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন পরীক্ষিত কিছু তেল নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে এ অবস্থা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যাবে। এবার এই তেলগুলোর ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
১. জোজোবা তেল
বাংলায় এভাবে লিখলেও আসলে এর উচ্চারণ হোহোবা৷ এ নামের গাছ থেকেই তেলটি পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হলো আমাদের স্ক্যাল্প প্রাকৃতিকভাবে যে তেল বা সিবাম নিঃসরণ করে, সেটির সঙ্গে হোহোবা তেলের মিল অনেক। তার মানে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই এটি চুলের সঙ্গে মানিয়ে যায়। এটি চুলের গভীরে গিয়ে ফলিকলগুলোকে হাইড্রেট করে। মাথার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
ব্যবহার
চুল ধোয়ার আগে ৩০ মিনিট বা সারা রাতই চুলে রাখা যায় হোহোবা তেল। আবার কন্ডিশনারে অল্প তেল মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।
২. আর্গান তেল
মরক্কোর আর্গানগাছের বাদাম থেকে পাওয়া তেল বা আর্গান অয়েল এখন বিশ্বব্যাপী চুলের যত্নে নতুন ক্রেজে পরিণত হয়েছে। একে মরোক্কান অয়েলও বলা হয়। খুশকি দূর করতে এটিকে জাদুকরি তেল বলে মানা হয়। আর হবে নাই–বা কেন! এতে আছে প্রচুর ভিটামিন ই, ফেরুলিক অ্যাসিড আর উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড। আরও আছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যেগুলো ইউভি রশ্মি থেকে চুলকে বাঁচায় আর চুলের কোষগুলোকে ক্ষতি থেকে বাঁচায়। কয়েক ফোঁটা আর্গান তেল মাথার ত্বকে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায়, নরম রাখে। ফলে অপুষ্ট আর শুষ্ক হয়ে গিয়ে খুশকি তৈরি হতে পারে না। সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো এ তেল একেবারেই চিপচিপে নয়।
ব্যবহার
কয়েক ফোঁটা তেল হাতে নিয়ে দুই তালুতে মেখে চুলে ম্যাসাজ করতে হবে। ভেজা বা শুকনা সব চুলেই আর্গান তেল দেওয়া যায়।
৩. নারকেল তেল
সারা দুনিয়ায় চুলের যত্নে নারকেল তেল সবচেয়ে বেশি সমাদৃত। এর হাইড্রেট করার ক্ষমতা খুবই বেশি। তাই মাথার ত্বকের সর্বোত্তম ময়েশ্চারাইজার হিসেবে এটির আলাদা কদর আছে। ফলশ্রুতিতে খুশকি প্রতিরোধ হয় আপনা থেকেই। নারকেল তেল খুশকির প্রকোপও কমায়। সে ক্ষেত্রে লেবু মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। মূলত নারকেল তেলের উচ্চমাত্রার ও ভালো মানের ফ্যাটি অ্যাসিড এ তেলের গুণাগুণ দেয়।
ব্যবহার
এমন দিনে রাতে একটু নারকেল তেল গরম করে সারা মাথায় ম্যাসাজ করতে হবে। ৩০ মিনিট থেকে সারা রাত চুলে রেখে দেওয়া যায় এ তেল।
৪. ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর বিনসের বীজ থেকে আসে ক্যাস্টর অয়েল। চুল বড় করতে এর জুড়ি নেই। আর এতে আছে ভিটামিন ই, মিনারেল, প্রোটিন। কোল্ড প্রেসড ক্যাস্টর অয়েল চুলের জন্য সবচেয়ে ভালো। এ তেলের জীবাণুরোধী ও ছত্রাকবিরোধী গুণ আছে। তাই খুশকি ও তা থেকে কোনো ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে না যদি নিয়মিত ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করা হয়।
ব্যবহার
ক্যাস্টর অয়েল খুব ঘন। তাই অলিভ অয়েলে কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। এটি দিয়ে হট অয়েল ট্রিটমেন্টও করা যায়। রাখা যায় চুলে সারা রাত।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন
ছবি: পেকজেলস ডট কম
হিরো ইমেজ: পূর্ণ দাস