তবে আশার কথা হলো। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এখন প্রমাণিত, নিয়মিত ত্বকের যত্ন (স্কিনকেয়ার রুটিন) মানসিক চাপ কমাতে পারে উল্লেখযোগ্য হারে। এ যেন এক ঢিলে দুই পাখি। একদিকে ত্বক হয় উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যবান, অন্যদিকে মন হয়ে ওঠে শান্ত ও প্রশান্ত। বিশ্বখ্যাত স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড রোডান কয়েক বছর আগে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। অংশগ্রহণ করেন ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৩০ জন নারী, যারা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপজনিত অ্যাডাল্ট একনেতে ভুগছিলেন।
গবেষণাটি চলেছিল ৮ সপ্তাহ। অংশগ্রহণকারীরা প্রতিদিন ব্যবহার করতেন তিন ধাপের একটি মিনিমাল স্কিনকেয়ার রুটিন। যেমন ডাবল ক্লিনজিং, ট্রিটমেন্ট ও ময়েশ্চারাইজিং। সঙ্গে ছিল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রিবায়োটিক, ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট এবং দিনে দুবার সানস্ক্রিন।
ফলাফলও ছিল চমকপ্রদ। তাঁদের কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ কমে যায় ৮৩ শতাংশ। একই সঙ্গে কমে একনে ও মানসিক উদ্বেগ। অর্থাৎ স্কিনকেয়ার শুধু বাইরের সৌন্দর্য রক্ষা করে না, বরং ভেতর থেকেও প্রভাব ফেলে।
এই তিন ধাপের স্কিনকেয়ার রুটিনটি খুবই সহজ এবং সময়সাশ্রয়ী:
• ডাবল ক্লিনজিং: প্রথমে মেকআপ বা সানস্ক্রিন তুলতে ওয়েল বেসড ক্লিনজার, এরপর জলভিত্তিক জেন্টল ক্লিনজার।
• ট্রিটমেন্ট: একনে, রেডনেস বা কালচে দাগ নিরাময়ের উপযোগী টার্গেটেড সিরাম বা অ্যাকটিভ উপাদান।
• ময়েশ্চারাইজিং বা হাইড্রেটিং: স্কিন ব্যারিয়ার ঠিক রাখতে হিউমেকট্যান্ট এবং সেরামাইডসযুক্ত ময়েশ্চারাইজার।
এই রুটিনের সঙ্গে প্রতিদিন মাত্র ৫ মিনিট ফেসিয়াল ম্যাসাজ করলেই মানসিক প্রশান্তির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সপ্তাহে তিন দিন শিট মাস্ক বা কোল্ড ক্রিম মাস্ক, সপ্তাহে এক দিন হালকা কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন ( যেমন গ্লাইকোলিক বা ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড)। এই বাড়তি যত্ন ত্বককে আরও স্বাভাবিক ও দীপ্তিময় করে তোলে।
ত্বক ও মনকে একসঙ্গে চাঙা করতে এখন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হচ্ছে অ্যাডাপ্টোজেনিক স্কিনকেয়ার। অ্যাডাপ্টোজেন হলো প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান, যা শরীরকে মানসিক চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে এবং স্ট্রেস হরমোনের ক্ষতিকর প্রভাব কমায়।
বর্তমানে যেসব অ্যাডাপ্টোজেন স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টে ব্যবহৃত হচ্ছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
• লিকারিশ (যষ্টিমধু): কর্টিসল নিঃসরণ কমায়, ত্বকের র্যাশ ও ইনফ্ল্যামেশন হ্রাস করে।
• ইলেথিরো (সাইবেরিয়ান জিনসেং): ফ্রি-রেডিকেল থেকে সুরক্ষা দিয়ে ত্বকের বয়সের ছাপ কমায়।
• অশ্বগন্ধা, তুলসী, আমলা, ল্যাভেন্ডার, ক্যামোমাইল, টি ট্রি ওয়েল, আরনিকা, সেনটেলা (থানকুনি), ত্রিফলা। এই উপাদানগুলো স্ট্রেস রিলিফের পাশাপাশি স্কিন হেলথে কার্যকর।
ত্বকের যত্ন অনেকেই মনে করেন বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য। কিন্তু এখন তা প্রমাণিত। এটি এক ধরনের সেলফ-কেয়ার থেরাপি। যেখানে প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই হয়ে ওঠে নিজের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের উপায়। আর এই ভালোবাসাই আমাদের মানসিক সুস্থতা ও সৌন্দর্যের ভিত গড়ে দেয়।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম