মিষ্টির প্রতি আসক্তি ত্বকে যে সমস্যাগুলো তৈরি করে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বিশিষ্ট চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ফ্র্যাংক লিপম্যান ‘টেন রিজনস ইউ ফিল ওল্ড অ্যান্ড গেট ফ্যাট’ নামের একটি বই লিখেছেন। এই বইয়ের পুরো একটি অধ্যায়ে চিনি কীভাবে ত্বকে বিরূপ প্রভাব ফেলে, তার বিশদ বিবরণ রয়েছে। এ থেকে জানা যায়, চিনি বেশি পরিমাণে খেলে শরীরে গ্লাইকেশন নামের একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হয়। এটিই মূলত ত্বকের ক্ষতির জন্য দায়ী। চিনি রক্তপ্রবাহে প্রোটিনের সঙ্গে খুব সহজে মিশে গিয়ে, অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন অ্যান্ড প্রোডাক্টস (AGEs) নামক ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিক্যাল উৎপাদন করে। শরীরে যত বেশি চিনি ঢুকবে, তত AGEs বাড়তে থাকবে। তখনই এটি আশপাশের প্রোটিনের ক্ষতি করতে শুরু করে।

ইলাস্টিন ও কোলাজেন এমন ধরনের প্রোটিন, যারা ত্বককে দৃঢ় ও স্থিতিস্থাপক রাখে। এদের জন্যই ত্বক থাকে সুস্থ ও তারুণ্যোজ্জ্বল। AGEs কোলাজেন ও ইলাস্টিনকে শক্ত, শুষ্ক আর ভঙ্গুর করে তোলে। ফলে বয়স বাড়ার আগেই, ত্বকে ফাইন লাইনস, গভীর খাঁজযুক্ত লাফ লাইনস, রিংকেল, ডার্ক সার্কেল এমনকি গালের নিচের অংশে চামড়া ঝুলে পড়ার মতো বার্ধক্যের ছাপ দেখা যায়। একই কারণে হাইপারপিগমেন্টেশনও দেখা দেয়।

AGEs শুধু কোলাজেন আর ইলাস্টিনেরই বারোটা বাজায় না, এর পাশাপাশি শরীরের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এনজাইমগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বককে বিভিন্ন ধরনের দূষণ, ডিজিটাল ডিভাইসের ব্লু লাইট এবং সূর্যের ইউভি রশ্মির মতো ক্ষতিকারক প্রভাবক দ্বারা সৃষ্ট ফ্রি র‍্যাডিক্যালের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। এ ধরনের ফ্রি র‍্যাডিক্যালগুলো অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ত্বকের অকালবার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করে। ব্রিটিশ জার্নাল অব ডার্মাটোলজির একটি প্রতিবেদনের মতে, গ্লাইকেশনের দৃশ্যমান প্রভাব ৩৫ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে দেখা দেয়। কিন্তু সত্যি বলতে এখন সেটা ত্রিশের আগেই বেশি দেখা দিচ্ছে।

চিনি শরীরে টেস্টোস্টেরন তৈরির ক্ষমতা রাখে। এই হরমোনের কারণে রোমকূপ বড় হতে থাকে। ত্বক হয়ে ওঠে অতিরিক্ত তৈলাক্ত। এদিকে বেশি চিনি খেলে শরীরের ইমিউন সিস্টেমে গন্ডগোল দেখা দেয়। দুর্বল ইমিউন সিস্টেম ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে পারে না। আর এগুলো আটকে যায় রোমকূপের ভেতর। ফলাফল, ব্ল্যাকহেডস ও অ্যাকনি! অতিরিক্ত চিনি ইনসুলিন লেভেল বাড়ায়। ফলে শরীরে ইনফ্ল্যামেশন বৃদ্ধি পায়। এতে ত্বকে ইনফ্ল্যামেশনজনিত অ্যাকনি দেখা দেয়। অতিরিক্ত চিনি রোজেশিয়া, একজিমা, সোরাইসিসের মতো স্কিন ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

বিজ্ঞাপন

কিংবদন্তি ডার্মাটোলজিস্ট ফ্রেডরিক ব্র্যান্ডট প্রায়ই বলতেন, ডায়েট থেকে চিনি বাদ দিলে ত্বকের বয়স ১০ বছর কমে যাবে। কথাটা যে সত্যি সেটার প্রমাণ মেলে সেলিব্রিটি কাপল জিজেল বুন্দসেন আর টম ব্র্যাডিকে দেখলে। একবার এক ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁদের সাবেক পারসোনাল শেফ অ্যালেন ক্যাম্পবেল বলেছিলেন, তাঁরা খুব কঠোর ‘নো সুগার ডায়েট’ অনুসরণ করেন। জিজেল ও ব্র্যাডিকে দেখলে মনেই হয় না বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। তাদের চেহারায় এখনো কুড়ির তারুণ্য।

তবে সুগার ফেস ঠেকাতে জীবন থেকে সব মিষ্টিজাতীয় খাবারকে ‘ঝাড়ু মেরে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে’ হবে না। শুধু সাদা চিনিকে টা টা বাই বাই করলেই চলবে। প্রিয় ডেজার্ট আইটেমগুলো বানাতে ব্যবহার করতে পারেন মধু, গুড়, স্টিভিয়া, ম্যাপল সিরাপ, কোকোনাট সুগার, খেজুরের পিউরি ইত্যাদি। তবে সেটিও মাত্রাতিরিক্ত হলে চলবে না। নজর দিতে হবে শর্করার দিকেও।

কারণ, শর্করা হজম হয়ে গ্লুকোজ নামক চিনিতে পরিণত হয়। তাই সাদা ভাত, সাদা রুটি, পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, পাস্তা, নুডলস—এসব থেকে দূরে থাকতে হবে। এদের বদলে খাওয়া যেতে পারে লাল আটা, লাল, বাদামি বা কালো চাল, কিনোয়া, ওটস, বাকহুইট ইত্যাদি। প্যাকেটজাত খাবারে কর্ন সিরাপ, ফ্রুকটোজ, বার্লি মল্ট, সুক্রোজ, ডেক্সট্রিন, ডেক্সট্রোজ, মল্ট সিরাপ ইত্যাদি অনেক নামে চিনি পাওয়া যায়। একেবারে না পারলেও ধীরে ধীরে প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। ডায়েটে যোগ করতে হবে প্রোটিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার।

প্রতিকার

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তো হলো। কিন্তু সুগার ফেস যদি হয়েই যায়, তখন কী উপায়? প্রতিকার হিসেবেও একই জিনিস মানতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুখবর হলো, বাড়তি চিনি খাওয়া বাদ দেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভালো ফল পাওয়া যায়। ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টার মধ্যেই ত্বকের স্বাস্থ্যে উন্নতি হয়। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও শুষ্ক ভাব দূর হয়। আর ডার্ক সার্কেল এতটাই কমে যায় যে খালি চোখেই সেটা ধরা পড়ে। অ্যাকনিও কমে আসে।
একটু বাড়তি যত্ন হিসেবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী বাজার থেকে কেনা বা ঘরে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে (নিম, হলুদ, আঙুর, অ্যালোভেরা, টক দই) তৈরি অ্যান্টি-অ্যাকনি মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়লে নারকেল, জলপাই বা আমন্ড অয়েলের সঙ্গে একটা ভিটামিন ই ক্যাপসুল এবং একটা ইভনিং প্রিমরোজ অয়েল ক্যাপসুল মিশিয়ে ফেস অয়েল বানিয়ে সকাল ও রাতে আপার স্ট্রোকে ম্যাসাজ করলেই চলবে।

ছবি: পেকজেলসডটকম

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮: ০০
বিজ্ঞাপন