ইভনিং প্রিমরোজ অয়েল বা ইপিওতে রয়েছে লিনোলিক অ্যাসিড ও গামা লিনোলেনিক অ্যাসিড। এ দুটি উচ্চমানের ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড। লিনোলিক অ্যাসিড একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। এটি ব্রণকে প্রশমিত ও প্রতিরোধ করে এবং একজিমা বা অন্য কোনো চর্মরোগ নিরাময় করে। এ ছাড়া এই অ্যাসিড ত্বকের কোমলতা ও স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে, যা বয়সের ছাপ দূরে রাখতে সহায়তা করে।
গামা লিনোলেনিক অ্যাসিডও বেশ শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, যা ত্বকের ব্রণ, সোরাইসিস, রোজেশিয়ার মতো ত্বকের মারাত্মক রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা রাখে। পাশাপাশি এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
এ ছাড়া এতে আছে অলেয়িক অ্যাসিডস নামের ওমেগা ৯ ফ্যাটি অ্যাসিড। এটিও ত্বকের রুক্ষতা দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে। আর আছে স্টেয়ারিক অ্যাসিড, যা একটি পরিষ্কারক উপাদান হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বক থেকে ময়লা, ঘাম ও অতিরিক্ত সিবাম দূর করে থাকে।
অতিরিক্ত ব্রণ ও কিছু চর্মরোগের সমস্যা নিরাময়ের জন্য ডার্মাটোলজিস্টরা ইপিও সাপ্লিমেন্ট প্রেসক্রাইব করে থাকেন। অনেক জনপ্রিয় স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড যেমন কিল, টাটা হারপার, ইয়ুথ টু দ্য পিপল ইত্যাদি তাদের পণ্যের প্রধান উপাদান হিসেবে এই তেল ব্যবহার করছে, বিশেষ করে অ্যান্টি–এজিং প্রোডাক্টগুলোতে। আমাদের দেশে এখন বেশ সুলভ মূল্যেই ইপিও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। দেশেই বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এর সাপ্লিমেন্ট উৎপাদন করে থাকে। ত্বকের সমস্যা সমাধান করতে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ইপিও সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যাবে না মোটেও। তবে এটি সরাসরি বা কোনো কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে মুখে বা চুলে লাগানো যেতে পারে। ত্বকের সমস্যা সমাধানে এটি দিয়ে ঘরেই বানাতে পারেন সিরাম, ফেশিয়াল বা হেয়ার অয়েল।
অ্যান্টি–এজিং অয়েল
ইপিও আর্দ্রতা ও স্থিতিস্থাপকতা বজায় রেখে ত্বকের সূক্ষ্ম বলিরেখা দূর করতে পারে। ২৫ বছর বয়সের পর পরিবেশগত দূষণ, অতিরিক্ত কাজ, সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মির ফলে যাঁদের ত্বক ড্যামেজ হয়ে সদ্য বলিরেখা দেখা দিতে শুরু করেছে, তাঁদের জন্য এ তেলের চেয়ে ভালো ওষুধ আর হতে পারে না। আবার পরিপক্ব বয়সের বলিরেখা কিছুটা কমিয়ে নতুন করে এটি হওয়ার গতি কমাতেও ইপিও বেশ সক্ষম। এ জন্য বানিয়ে নিতে পারেন একটি সহজ ফেশিয়াল অয়েল।
এটি বানাতে লাগবে—১ চামচ আমন্ড অয়েল, ১ চামচ অলিভ অয়েল, ২ চামচ ইপিও এবং ১টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল। সব একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্যবহার করলে এক মাসেই ভালো ফল পেতে শুরু করবেন।
অ্যান্টিডার্ক সার্কেল অয়েল
নিয়মিত ঘুমের অভাব, অতিরিক্ত স্মার্টফোন, কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য চোখের নিচে দেখা দেয় ডার্ক সার্কেল। এটি তাড়াতে বানিয়ে নিন ইপিও সিরাম। ১ চামচ নারিকেল তেল, ১টি ইপিও ক্যাপসুল, ১টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশালেই তৈরি অ্যান্টিডার্ক সার্কেল অয়েল। চাইলেই বেশি করে বানিয়ে সংরক্ষণ করতে পারেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুই চোখের নিচে ও ওপরের পাতায় অনামিকা আঙুলের সাহায্যে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। এতে ডার্ক সার্কেল কমার পাশাপাশি চোখের নিচের বলিরেখাও কমবে। তবে ভালো ফল পেতে অবশ্যই রাতে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে।
অ্যান্টি–অ্যাকনে অয়েল
হরমোনাল বা সিস্টিক অ্যাকনের জন্য এর সাপ্লিমেন্ট খেতে হয়। এর বাইরে যাঁদের সাধারণ ব্রণ হয়, তাঁরা এর নিরাময়ে ১ চামচ টি ট্রি অয়েলের সঙ্গে ১ চামচ ইপিও লাগিয়ে দেখতে পারেন। এক সপ্তাহে ব্রণ কমে আসবে।
সতর্কতা
গর্ভবতী, প্রসূতি মা, যাঁদের হরমোন সেনসিটিভ ক্যানসার যেমন ব্রেস্ট বা ওভারিয়ান ক্যানসার আছে বা ছিল এবং এপিলেপসি, সিজোফ্রেনিয়ার রোগীদের ইপিও কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না।