চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আগে জানতে হবে হেয়ার পোরোসিটির ব্যাপারে। পোরোসিটি শব্দের সঠিক বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও তা–ই। প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা। উচ্চ বা হাই হেয়ার পোরোসিটি–সম্পন্ন চুল খুব দ্রুত আর্দ্রতা গ্রহণ করতে পারে। তবে পোরস ওপেন হওয়ায় এরা খুব দ্রুত আর্দ্রতা হারিয়েও ফেলে যা চুলকে রুক্ষ করে তোলে। আবার লো পোরোসিটি বা কম ছিদ্রসম্পন্ন চুল সহজে আর্দ্রতা গ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে তা বেশ অনেক্ষণ ধরে রাখতে পারে, যা চুলকে শুষ্ক ও প্রাণহীন দেখানো থেকে রক্ষা করে।
ঘরে বসেই চুলের পোরোসিটি পরীক্ষা করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন এক গ্লাস পানি। ঝরে পড়া কিছু চুল নিয়ে এক গ্লাস পানিতে ছেড়ে দিন। এবার না নেড়ে গ্লাসটিকে কিছুক্ষণ রেখে দিন। যদি আপনার চুল খুব তাড়াতাড়ি ডুবে যায়, তবে আপনার চুল হাই পোরোসিটি সম্পন্ন। যদি চুল ওপরে ভাসতে থাকে এবং ডোবার কোনো লক্ষণ না দেখায়, তবে আপনার চুল লো পোরোসিটি সম্পন্ন। চুল আস্তে আস্তে ডুবতে থাকলে আপনি হাতে গোনা ভাগ্যবান কয়েকজন মানুষের কাতারে পড়বেন, যাঁদের চুল নরমাল পোরোসিটি–সম্পন্ন।
বাজারে চুলের বিভিন্ন সমস্যার জন্য আলাদা আলাদা হেয়ার প্রোডাক্ট পাওয়া গেলেও চুলের পোরোসিটির ওপর ভিত্তি করে বানানো প্রোডাক্টের সংখ্যা খুবই কম। তবে কোন ধরনের পোরোসিটির জন্য কোন ধরনের পণ্য বেশি কার্যকর, এ বিষয়ে ধারণা থাকলে বাজারের সাধারণ প্রোডাক্টগুলো থেকে কিছু প্রোডাক্ট বেছে নিয়ে নিজের চুলের জন্য একটি হেয়ার কেয়ার রুটিন তৈরি করে নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে জানা দরকার, কোন পোরোসিটির চুলের জন্য কেমন যত্ন দরকার।
● যেহেতু হাই পোরোসিটি–সম্পন্ন চুল সহজেই আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে, তাই এই চুলের জন্য দরকার ডিপ ময়েশ্চারাইজিং প্রোডাক্ট। এরা গোসলের পর চুলে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। যেমন ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক, ডিপ কন্ডিশনিং শ্যাম্পু।
● বাজারে কোঁকড়া চুলের যত্নে কিছু ডিপ কন্ডিশনিং প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। এসব প্রোডাক্ট হাই পোরোসিটি চুলের জন্য ভালো কাজ করবে।
● চুল শুকানোর পর যাতে শুষ্ক না হয়ে যায়, তাই গোসলের পর ভেজা চুলে লিভ-ইন কন্ডিশনার বা সিরাম ব্যবহার করুন। এতে চুল সহজে রুক্ষ হবে না।
● চুলে যেকোনো ধরনের তাপ ব্যবহার করার আগে অবশ্যই হিট প্রোটেক্ট্যান্ট ব্যবহার করুন।
● যেহেতু হাই পোরোসিটি চুলের কিউটিকলগুলো উন্মুক্ত থাকে, তাই হেয়ার স্টাইলিংয়ের সময় আর্দ্রতা ধরে রাখতে লক (LOC) মেথড ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে চুল শ্যাম্পু করার পর প্রথমে লিভ–ইন কন্ডিশনার, পরে হেয়ার অয়েল এবং শেষে কোনো একটি স্টাইলিং ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
● শ্যাম্পুর আগে একটি ভালো মানের ময়েশ্চারাইজিং মাস্ক ব্যবহার করুন। চেষ্টা করবেন বেশ কিছুক্ষণ চুলে মাস্ক রেখে দিয়ে পরে শ্যাম্পু করার। এতে করে চুলের কিউটিকল ভেদ করে আর্দ্রতা প্রবেশ করবে।
● চুলে তেল বা মাস্ক ব্যবহার করার সময় চুলে তাপ প্রয়োগ করুন। এ ক্ষেত্রে স্টিমার ব্যবহার করতে পারেন। স্টিমার না থাকলে একটি তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে ভালো করে নিংড়ে নিন। এবার গরম তোয়ালে চুলে পেঁচিয়ে নিন। একইভাবে শাওয়ার ক্যাপও ব্যবহার করতে পারেন। তাপে চুলের কিউটিকলগুলো উন্মুক্ত হবে, যা সাধারণ অবস্থায় লো পোরোসিটি চুলে অত্যন্ত সূক্ষ্ম হয়ে থাকে। ফলে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করতে পারবে।
● চুলে তেল দেওয়ার সময় এ ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে পাতলা বা কম ঘনত্বের তেল ব্যবহার করুন। যেমন বাদাম তেল, তিলের তেল ইত্যাদি। এসব তেল চুলের সূক্ষ্ম কিউটিকলগুলো ভেদ করে সহজেই চুলে প্রবেশ করতে পারে।
● যেহেতু ভারী হেয়ার প্রোডাক্ট চুলে প্রবেশ করতে পারে না, তাই এ ধরনের চুলে বিল্ডআপ খুব তাড়াতাড়ি তৈরি হয়। তাই খেয়াল রাখতে হবে যাতে মাথার ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়।
● কন্ডিশনার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সামান্য পানি যোগ করে পাতলা করে নিতে পারেন। এতে করে চুল সহজে শুষে নিতে পারবে।
● স্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে লক (LOC) মেথড ব্যবহার করুন। অর্থাৎ প্রথমে লিভ-ইন কন্ডিশনার বা সিরাম, তারপর সটাইলিং ক্রিম এবং সবশেষে হেয়ার অয়েল।
যদিও হেয়ার পোরোসিটি ব্যাপারে খুবই কম কথা বলা হয়, চুলের সঠিক যত্নে হেয়ার পোরোসিটির ব্যাপারে ধারণা থাকা খুবই জরুরি। এতে নিজের চুলের যত্ন বিষয়ে সচেতনভাবে উপকরণ বাছাই করা যায়, যা চুলকে মজবুত ও সুন্দর করে।
ছবি: হাল ফ্যাশন ও পেকজেলসডটকম