মানুষও প্রকৃতির অংশ। জলবায়ু ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও ব্যক্তিগত যত্নে কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এবং এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য আমাদের ত্বকের ক্ষেত্রে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলছে।
ত্বক হলো আমাদের দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ। এবং পরিবেশ জনিত সরাসরি ক্ষতি থেকে রক্ষার একমাত্র স্তর। কিন্তু বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের অঙ্গটি নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, বায়ুদূষণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অতিরিক্ত আর্দ্রতা বা শুষ্কতা—সব মিলিয়ে ত্বকের স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।
১. চরম আবহাওয়া ও দূষণ:
অতিরিক্ত গরম, ঠান্ডা বা আর্দ্রতা আমাদের ত্বকে নানা সমস্যা তৈরি করছে। এতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, কিংবা অতিরিক্ত ঘামের কারণে র্যাশ বা ছত্রাক সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। শহরাঞ্চলের বায়ুদূষণ ত্বকের ওপর অক্সিডেটিভ চাপ সৃষ্টি করে, যা ত্বককে করে নিষ্প্রাণ ও বার্ধক্য প্রবণ।
২. ওজোন স্তর হ্রাস ও সূর্যের প্রভাব:
ওজোন স্তর আমাদের প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন। এটি হালকা হয়ে গেলে অতিবেগুনি রশ্মির প্রবেশ বাড়ে, যার ফলে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ওজোন স্তর ১% কমে গেলে স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা ৩-৪.৬%, বেসাল সেল কারসিনোমা ১.৭-২.৭% এবং মেলানোমা ১-২% বেড়ে যেতে পারে।
৩. ব্রণ ও অন্যান্য ত্বকের রোগ:
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ত্বকের স্বাভাবিক পিএইচ ব্যালান্স বিঘ্নিত হয়। ঘাম ও তেল নিঃসরণ বাড়ে, যা ব্রণের প্রকোপ বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত তাপ ও আর্দ্রতা একজিমা, সোরিয়াসিস, ফাঙ্গাল ইনফেকশন ও হাইভসের মতো রোগের কারণ হতে পারে।
১. বন্যা ও সংক্রমণ:
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যার ঘটনা বেড়েছে, যা ত্বকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। দূষিত পানিতে চলাফেরা করলে কনটাক্ট ডার্মাটাইটিস, ইম্পেটিগো, লেপটোস্পাইরোসিস এবং এমনকি ছত্রাকজনিত ত্বকের রোগ হতে পারে।
২. কীট বাহিত রোগ:
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ঘুণে ও মশার মতো বাহক বাড়ছে, যা লাইম ডিজিজ, ডেঙ্গু, এনাপ্লাজমোসিস ইত্যাদি রোগ ছড়াচ্ছে। এই রোগগুলো সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলছে।
৩. ভাইরাল ও ছত্রাকজনিত সংক্রমণ:
হাত-পা-মুখের রোগ থেকে শুরু করে ছত্রাকের সংক্রমণ, এসব বাড়ছে জলবায়ুর পরিবর্তিত আচরণের কারণে। আর্দ্র ও গরম আবহাওয়ায় এসব জীবাণু সহজেই ছড়াতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী ত্বক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
ত্বকের সুরক্ষায় এখন প্রয়োজন জলবায়ু-বান্ধব জীবনধারা ও সচেতনতা। নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার, দূষণ এড়ানোর ব্যবস্থা, ত্বক পরিষ্কার রাখা এবং আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মতো অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী:
• সূর্যের তীব্রতা থাকলে ছায়ায় থাকুন বা ছাতা ব্যবহার করুন
• গরমে ঘন ঘন পানি পান করুন
• ঘাম ও ধুলা-ময়লা থেকে ত্বক রক্ষা করুন
• অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডায় ত্বকের যত্নে উপযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন
জলবায়ু পরিবর্তন এখন বৈশ্বিক সংকট—কিন্তু এর প্রভাব পড়ছে আমাদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যেও। ত্বকের যত্ন এখন শুধুই সৌন্দর্যের বিষয় নয়, বরং স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতনতার সঙ্গেও সম্পর্কিত।
সূত্র: হেলথলাইন ও আলট্রা বিউটি