নিজের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে সবাই চায়। তবে আমাদের মধ্যে একটি ধারণা প্রবল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা হলো বাজারের নামীদামী সব উচ্চমূল্যের স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার না করলে কেউ সুন্দর হতে পারবে না। ব্যাপারটি কিন্তু পুরোপুরি ঠিক এরকম নয়৷ ন্যাচারাল সুন্দর থাকতে এত বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। জীবনযাত্রা আর আমাদের অভ্যাসগুলো খানিকটা এদিকওদিক করলেই কিন্তু আমরা অতিরিক্ত খরচ না করে নিজেকে দেখাতে পারি সুন্দর। কারণ জীবনযাত্রা ঠিক থাকলে শরীরের পাশাপাশি ত্বকও থাকে স্বাস্থ্যবান। যার ফলে প্রাকৃতিকভাবেই আপনাকে দেখাবে লাবণ্যময়ী। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত খরচেরও কোনো ঝামেলা থাকবে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে অতিরিক্ত খরচ না করেই নিজেকে সুন্দর রাখতে পারবেন।
১. পর্যাপ্ত ঘুম
ত্বক ভালো রাখতে ঘুমের কোনো জুড়ি নেই। ঘুম ঠিকঠাক না হলেই ত্বক লাবণ্য হারিয়ে ফেলে। চোখের পাতায় ও কোলে কালচে ভাব দেখা দিতে শুরু করে।
আর এটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করলে বাজারের হাজার হাজার টাকার প্রোডাক্ট দিয়েও পরবর্তীতে ঠিক করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। ঘুমালে ত্বকের কোষগুলো পুনরুজ্জীবিত হয়। যার ফলে ত্বক দেখায় সতেজ ও সজীব। তাই চেষ্টা করুন পর্যাপ্ত ঘুমানোর।
২. প্রচুর পানি পান করুন
ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। পানি শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যেতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক হয় উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত। শরীর হাইড্রেটেড থাকলে ত্বক স্বাভাবিকভাবেই আর্দ্র দেখায়, রুক্ষ ও নিস্তেজ লাগে না। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তবে শুধু পানি পান করলেই চলবে না, ইলেকট্রোলাইটসসমৃদ্ধ খাবারও খেতে হবে। এগুলো পানিকে আপনার ত্বক পর্যন্ত পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
৩. বারবার মুখ ধোয়া এড়িয়ে চলুন
ত্বক পরিষ্কার রাখা জরুরি, তবে অতিরিক্ত মুখ ধোয়া ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা নষ্ট করতে পারে। বারবার ধোয়ার ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে, এমনকি তেলগ্রন্থিগুলো বেশি তেল উৎপন্ন করতে শুরু করতে পারে। তাই দিনে দুইবার—সকালে ও রাতে ভালো মানের কোনো ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। আর যদি ত্বকে ময়লা না থাকে, তাহলে শুধু পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
৪. নিজেকে ইতিবাচক রাখুন
আপনার মানসিক অবস্থা যত সুন্দর থাকবে আপনাকে ততোই সুন্দর লাগবে। যখন আপনি ভালো অনুভব করেন, তখন তা আপনার চেহারাতেও প্রতিফলিত হয়। নেতিবাচক চিন্তা, অকারণ দুশ্চিন্তা বা আত্মসমালোচনা শুধু মানসিক চাপ বাড়ায় এবং আপনার মুখের অভিব্যক্তিকেও ম্লান করে তোলে। নিজেকে ইতিবাচক রাখতে প্রতিদিন ছোট ছোট বিষয় নিয়েই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন, নিজের অর্জনগুলোকে স্বীকৃতি দিন এবং আশেপাশের সুন্দর মুহূর্তগুলো উপভোগ করুন। পছন্দের কাজ করুন এবং নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন।
৫.ধীরস্থির হোন
প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে এক কাজ থেকে আরেক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া, দ্রুত খাবার খাওয়া, ঠিকমতো শ্বাস নেওয়ার সময় পর্যন্ত না পাওয়া—বর্তমানে এসব খুব সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সবসময় তাড়াহুড়া করলে শুধু মানসিক চাপই বাড়ে না, এটি আমাদের শরীর ও ত্বক উভয়ের ওপরেই প্রভাব ফেলে। ধীরস্থির হয়ে কাজ করলে যেমন মানসিক শান্তি বজায় থাকে, পাশাপাশি এটি আপনার আত্মবিশ্বাসও বাড়ায়। নিজেকে সুন্দর দেখানোর জন্য সবসময় চেহারায় পরিবর্তন আনার দরকার নেই—অনেক সময় এটি নির্ভর করে আমরা কীভাবে চলাফেরা করি তার ওপর।
৫. শ্বাস নেওয়ার সময় কার্পণ্য করবেন না
নিজেকে সুস্থ, সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখতে গভীর শ্বাস নেওয়ার গুরুত্ব অনেক। আমরা অনেক সময় তাড়াহুড়ার মধ্যে থাকলে বা দুশ্চিন্তা করলে স্বাভাবিকের চেয়ে কম গভীর শ্বাস নিই, যা শরীর ও ত্বকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গভীরভাবে শ্বাস নিলে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয়, যা ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বককে করে তোলে উজ্জ্বল ও সতেজ রাখে।
প্রতিদিন কিছু সময় ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করুন—ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস নিন, তারপর মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলোই আপনাকে আরও প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় করে তুলতে সাহায্য করে।
সূত্র: ভেরি ওয়েল ফিট
হিরো ইমেজ: সাই পল্লবীর ইন্সটাগ্রাম
ছবি: পেকজেলস ডট কম