কন্ট্যাক্ট লেন্স নিয়ে ঘুমিয়ে পড়া বিষয়ে চক্ষুবিশেষজ্ঞরা কিছু সতর্ক করে দিয়েছেন। তাদের মতে, ঘুমের সময় কনট্যাক্ট লেন্স পরা এক ভয়াবহ অভ্যাস, যা চোখে মারাত্মক সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যালিসন বাবিউচ কেভল্যান্ড ক্লিনিকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক জার্নালে লিখেছেন, চোখেরও প্রয়োজন হয় নিশ্বাস নেওয়ার। লেন্স পরে ঘুমালে চোখের অক্সিজেন গ্রহণ ব্যাহত হয় এবং এটি চোখে মারাত্মক সংক্রমণ, জ্বালা-পোড়া ও চোখ শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে।
অনেকেই ভাবেন, ‘একটু চোখ বন্ধ করছি মাত্র’, বা ‘অল্প কিছুটা সময় ঘুমালে কীই বা হবে?’ -কিন্তু একটি ছোট্ট ন্যাপও চোখের ক্ষতির জন্য যথেষ্ট। কারণ ঘুমের সময় চোখে অক্সিজেন প্রবাহ কমে যায়। এই সময় কনট্যাক্ট লেন্স একটি বাড়তি বাধা তৈরি করে, যার ফলে কর্নিয়া পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। ফলে চোখে দেখা দিতে পারে নানান জটিলতা। ডা. অ্যালিসন বাবিউচ বলেন, “চোখকে বিশ্রাম দেওয়া এবং কর্নিয়াকে নিশ্বাস নিতে দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ,”।
১. চোখে অক্সিজেনের ঘাটতি:
কর্নিয়ার সঠিকভাবে কাজ করতে অক্সিজেন প্রয়োজন। ঘুমের সময় চোখ বন্ধ থাকায় এমনিতেই অক্সিজেন কম পৌঁছায়, তার ওপর কনট্যাক্ট লেন্স সেই প্রবাহ আরও কমিয়ে দেয় বা বন্ধ করে দেয়। ফলে চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ঝাপসা দেখা, আলোতে অস্বস্তি, চোখে ব্যথা ও ক্লান্তির মতো সমস্যা দেখা দেয়।
২. সংক্রমণের ঝুঁকি:
চোখে লেন্স পরে ঘুমালে ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস বা অ্যামিবা আটকে যেতে পারে। এবং লেন্সের নিচে উষ্ণ বা স্যাঁতসেঁতে ভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়ায়। এর ফলে হতে পারে মাইক্রোবিয়াল কেরাটাইটিস। এটি একটি ভয়াবহ কর্নিয়ার সংক্রমণ, সময়মতো চিকিৎসা না নিলে দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৩. কর্নিয়াল আলসার:
চোখের ওপরের স্বচ্ছ অংশে ছোট ক্ষত বা ঘা তৈরি হলে তাকে কর্নিয়াল আলসার বলা হয়। এটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ না করলে কর্নিয়াল আলসার থেকে স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে।
৪. লেন্স সরে যাওয়া বা আটকে যাওয়া:
ঘুমের সময় চোখের পাতার নড়াচড়ায় লেন্স স্থানচ্যুত হয়ে অস্বাভাবিক জায়গায় আটকে যেতে পারে। বিষয়টি শুধু অস্বস্তিকর নয় একই সঙ্গে চোখের পৃষ্ঠে ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে।
৫. চোখ শুকিয়ে যাওয়া:
ঘুমের সময় চোখ স্বাভাবিকের তুলনায় কম জলীয় বা টিয়ার তৈরি করে। অপরদিকে কনট্যাক্ট লেন্স সাধারণভাবেই চোখের তরল শোষণ করে আরও বেশি শুষ্কতা সৃষ্টি করে। এর ফলে চোখে জ্বালা, চুলকানি ও ক্ষতির শঙ্কা বেড়ে যায়।
কিছু এক্সটেনডেড ওয়ার কনট্যাক্ট লেন্স পাওয়া যায়। যা এফডিএ( FDA) অনুমোদিত। এগুলো রাতেও চোখে রাখা যায়। তবে চিকিৎসকেরা সাধারণত এগুলোর ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করেন। কারণ, প্রতিটি চোখ আলাদা এবং এমন লেন্সও সবার চোখের জন্য উপযুক্ত না-ও হতে পারে।
১. ঘুম ভাঙলে লেন্স সঙ্গে সঙ্গে টেনে খুলবেন না। এতে কর্নিয়ায় ক্ষত তৈরি হতে পারে।
২. চোখে কয়েক ফোঁটা লেন্স সলিউশন দিন। কিছু সময় চোখ আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন।
৩. আলতোভাবে লেন্স সরানোর চেষ্টা করুন।
৪. দীর্ঘ সময়ের জন্য বাইরে গেলে লেন্স না পরাই ভালো। চোখকে বিশ্রাম দিন।
৫. চোখ লাল হওয়া, পানিপড়া বা ব্যথা থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
• ঘুমানোর আগে অবশ্যই লেন্স খুলে ফেলুন।
• কখনো লেন্স শুকনো অবস্থায় চোখ থেকে খুলবেন না।
• চোখের কোনো সমস্যা হলে অবহেলা না করে দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞ দেখান।
• লেন্স ব্যবহারের নির্ধারিত সময় এবং সঠিক পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন।
• সাঁতার, গোসল কিংবা ঘুমের সময় লেন্স ব্যবহার না করাই ভালো।
আপনার চোখের সুস্থতা নির্ভর করে আপনার ছোট ছোট অভ্যাসের ওপর। কনট্যাক্ট লেন্স সাধারণভাবে নিরাপদ হলেও, এর ভুল ব্যবহারে হতে পারে ভয়ানক ক্ষতি।
সূত্র: হেলথলাইন ও হারপার বাজার
ছবি: ইনস্টাগ্রাম