তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডের আলোকি কনভেনশন হলের আর্ট স্পেসে দর্শকেরা উপভোগ করেছেন বিশেষ আয়োজন ‘ঘুরপাক’। মূলত আপসাইক্লিং কর্মশালা, জোড়াতালি, অদলবদল, গল্পের শালা এবং ফিল্ম স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনে পরিবেশবান্ধব চর্চাকে সবার কাছে তুলে ধরতে সামাজিক সংহতি ও আলাপ-আলোচনা ছিল মূল বিষয়। উড়ুক্কু বাংলাদেশ ও শালা নেইবারহুড আর্ট স্পেসের যৌথ প্রচেষ্টায় ১৮ ও ১৯ অক্টোবর আয়োজিত হয়েছে অভিনব এই ইভেন্ট।
আলোকির গ্যালারি স্পেসটি পরিচিত শালা নেইবারহুড আর্ট গ্যালারি নামে। পাড়া ও আলোকি যৌথভাবে পরিচালনা করে থাকে এটি। আর পাড়া এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সমচিন্তার তরুণেরা একসঙ্গে চেষ্টা করছেন আর্টকে সব শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। কুনিপাড়া, সাততলা বস্তি, করাইল বস্তিসহ শালার আশপাশের বস্তির তরুণদের নিয়ে কাজ ও গবেষণা করছে শালা ও উড়ুক্কু বাংলাদেশ। তারই ধারাবাহিকতায় এই ‘ঘুরপাক’। সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল এ আয়োজন।
ঘুরপাক নিয়ে উড়ুক্কু বাংলাদেশের কর্ণধার ও শালার গবেষক তারান্নুম নিবিড় বলেন, ঘুরপাক পুনঃসংযোগের একটি যাত্রা—সামগ্রী, গল্প ও স্মৃতিকে নতুন করে দেখার চেষ্টা। এখানকার প্রতিটি বস্তু কিছু না কিছু স্মৃতি ধারণ করে। নতুন ও পুরোনো এক হয়ে পুনর্ব্যবহার উপযোগী এবং আপসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে পণ্যের পুনর্জন্মের অভিজ্ঞতা উদ্যাপন করে ঘুরপাক।
পুরোনো কিংবা ফেলে দেওয়া জিনিস থেকে অনুষঙ্গ তৈরি করা বা শিল্পে রূপ দেওয়া আর শিল্পের সঙ্গে সর্বস্তরের মানুষকে যুক্ত করার চেষ্টা থেকেই এই ‘ঘুরপাক’। কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস থেকে তৈরি আপসাইক্লিং আর্ট নিয়ে ঘুরপাকের প্রদর্শনীতে ছিলেন মঞ্জুর আহমেদ রিয়েল। প্লাস্টিক, ক্যানের টুকরা, লোহার তার দিয়ে তৈরি করেছেন ডায়নোসর, ফড়িং, প্রজাপতি, ঘাস ফড়িংসহ আরও অনেক পোকামাকড়। ছিল সিগারেটের ফেলে দেওয়া প্যাকেট সংগ্রহ করে সৈকত শাহনেওয়াজের তৈরি বই ও সামগ্রী। বাতিল কাপড় দিয়ে আয়লা আমীনের ডিজাইন করা একটি জ্যাকেটও ছিল প্রদর্শনীতে।
ঘুরপাকে একটি অংশে ছিল মেন্ডিং স্টেশন। যেখানে জোড়াতালি দিয়ে কীভাবে ডিজাইন করে ছেঁড়া কাপড়কেও ব্যবহার উপযোগী করা যায়, তা দেখিয়েছেন একজন স্থানীয় শিল্পী। ‘অদলবদল’ অংশে যে কেউ পুরোনো পণ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় অন্য কোনো সামগ্রী নিতে পেরেছেন।
ভাঙা থেকে গড়া কর্মশালায় উড়ুক্কু বাংলাদেশে অংশগ্রহণকারীদের দেখানো হয়েছে ফেলে দেওয়া সামগ্রীকে কাজে লাগানোর উাপায়। ‘আবরার শাদমান আহমেদের কাঁথার গল্প’ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের এমব্রয়ডারি ও সেলাই করে নতুন নকশা ও অনুষঙ্গ তৈরিতে অনুপ্রাণিত করেছেন। সৃজনশীল সমাধানের মাধ্যমে শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে শিখি ট্যাগলাইন নিয়ে কর্মশালা করিয়েছেন সৈকত শাহনেওয়াজ।
এ ছাড়া ঘুরপাকের দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশে পুনর্ব্যবহারের ঐতিহ্য নিয়ে গল্প করেছেন শিল্পী ফারহানা আফরোজ বাপ্পি। মিউজিকের সঙ্গে ধ্যান করিয়েছেন ফারিয়া উলফাত সৈয়দের তালবাহানা। আর সামাজিক-রাজনৈতিক গান পরিবেশন করেছে বেতাল। একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শনীও ছিল এই আয়োজনে। বিষয়বস্তু ছিল ‘একটি সুতার জীবনবন্দী’।
তারান্নুম নিবিড় বলেন, ‘ঘুরপাকে আমরা চেয়েছি মানুষ ও বস্তুর বিভিন্ন সম্ভাব্যতাকে সম্মান করতে। অদলবদল সেশন, মেন্ডিং ও স্টিচিংয়ের মাধ্যমে, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল অকেজো মনে হওয়া জিনিসটিকে নতুন কিছুতে পরিণত করার আনন্দ উপভোগ ও উদ্যাপন করা। এটি কেবল বস্তুর পুনর্ব্যবহার নয়, আমাদের গল্প এবং জীবনের স্তরগুলো, যা আমরা আমাদের সঙ্গে বহন করি, সেসব মুহূর্তকেও নতুন করে দেখা।’
ছবি: আয়োজক