শাটল ট্রেনের ধারণা থেকে শাটল কারের ধারণার জন্ম। এটি প্রধানত মোটরচালিত একটি যানবাহন, যা একসঙ্গে সাত থেকে আটজন যাত্রীকে জায়গা দিতে পারে। মোটরচালিত বলে বেশ দ্রুত চলে এবং কম সময়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়াটা সহজ হয়৷ তবে শাটল কার দূরবর্তী গন্তব্যে যাওয়ার উপযোগী নয়। ঢাকার রাস্তার এই তুমুল ট্রাফিক জ্যামের মধ্য দিয়ে তো নয়-ই। বিদেশে শাটল কার একটি বেশ পরিচিত যানবাহন, তবে এদেশে এটি প্রায় নতুনই বলা চলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি অবকাঠামোগত ভাবে বেশ বড় পরিসরে বানানো। এককালে এই সবই ঢাকার তৎকালীন জমিদারদের সম্পত্তি ছিল। শাহবাগ থেকে শুরু করে নীলক্ষেতের বেশ কিছু অংশ অবধি পুরোটাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিণত হয়। এভাবে শহরের বুকে একটি বিশাল অংশ জুড়ে বিস্তার করছে শতবর্ষী এ বিশ্ববিদ্যালয়টি।
তবে প্রতিদিন যাঁরা পড়াতে ও পড়তে এখানে যাওয়া-আসা করেন, তাঁরা জানেন, এত বড় ক্যাম্পাসে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয় তাঁদের। পায়ে হাঁটার হিসেবে দূরত্ব তো কম নয়। প্রায় সময়েই থাকে ক্লাসের তাড়া। রিকশা ভাড়া? সে তো হরহামেশাই থাকে আকাশচুম্বী। বৃষ্টি এলে বা তাড়ার আভাস পেলে বেড়ে যায় তা আরও। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে রিকশা ভাড়া নির্দিষ্ট করা হলেও, তা মানতে চান না অনেক রিকশাচালকেরা। ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থানের পরে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ক্যাম্পাস এলাকায় ইওর শাটল নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত এমন একটি ছোট, তবে উপকারী পদক্ষেপ। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নব নিযুক্ত উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান ও সকল হলের প্রভোস্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ইওর ক্যাম্পাসের কয়েকজন প্রতিনিধি। সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতে চলেছে শাটল গাড়ি। অ্যাপভিত্তিক হবে এই কার্যক্রম। ভাড়া হবে ৫-১০ টাকার মধ্যে।
প্রথম চক্রাকার রুটে নির্ধারণ করা হয়েছে এএফ রহমান হল/ উত্তর নীলক্ষেত-জহুরুল হক হল/মুহসীন হল- ভিসি চত্বর- শ্যাডো/মল চত্বর-কলাভবন/ আইবিএ-মধু/ ডাকসু-সেন্ট্রাল লাইব্রেরি / সেন্ট্রাল মসজিদ- চারুকলা ( ইউটার্ন নিয়ে)-টি এসসি/ উদ্যান- মেট্রো স্টেশন- দোয়েল চত্বর/কার্জন - এফ এইচ হল/ সুফিয়া কামাল হল-একুশে হল-ঢামেক ইমার্জেন্সি-শহীদ মিনার-জগন্নাথ হল-পলাশী/এস এম হল- দক্ষিণ নীলক্ষেত হয়ে এ এফ রহমান হল।
চক্রাকার রুট দুইয়ে আছে শহীদুল্লাহ হল - মোকাররম ভবন/ কেন্দ্রীয় মাঠ - শহীদ মিনার/ অ্যানেক্স - বিএনসিসি/ রাসেল টাওয়ার শামসুন নাহার হল/ টিএসসি- রোকেয়া হল/ আইএমএল কলা ভবন এর সামনে মেইন গেইট - মল চত্বর- সূর্যসেন হল গেইট- মুহসীন হল গেইট - ইউল্যাব - ভিসি চত্বর - ফুলার রোড কাউন্সিল - উদয়ন জগন্নাথ হল এসএম হল/ব্রিটিশ বকশীবাজার মোড় ঢামেক নতুন বিল্ডিং গেইট - চানখাঁরপুল হয়ে শহীদুল্লাহ হল গেইট।
মৈত্রী/ বঙ্গমাতা হল - শাহনেওয়াজ হোস্টেল - নিউ মার্কেট - নীলক্ষেত/ এএফ রহমান হল জহু হল / মুহসীন হল - ভিসি চত্বর - রেজিস্টার বিল্ডিং/ আই ই আর হলপাড়া - এফবিএস - মল চত্বর - টিএসসি মেট্রো স্টেশন দোয়েল চত্বর/ কার্জন হল - এফ এইচ/সুফিয়া কামাল হল (ইউটার্ন নিয়ে বিপরীত দিক দিয়ে একই রুট ফলো করবে)
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ইওর শাটল আগমনের খবরে বেশ উচ্ছসিত শিক্ষার্থীরা। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়ামনা জানান, ক্যাম্পাসে যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে, এটা ভেবেই ভালো লাগছে। ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিরাপদ ও সুন্দর রাখতে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত কার্যকরী হবে বলে তিনি আশাবাদ জানান।
আরেক শিক্ষার্থী সিফাতুজ্জামানের মনে কাজ করছে শংকা। তিনি বলছেন, ভালো অবশ্যই লাগছে। তবে জো-বাইকের মতো ইওর শাটলেরও একই পরিণতি না হয়, সে ব্যাপারটি বেশ ভাবাচ্ছে। এজন্য পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে ছাত্র-শিক্ষক সবাইকে।