তাঁতীবাজার বললেই গয়নাশিল্পী বা স্যাকরাদের কথা মনে আছে। সারি সারি দোকানে তৈরি হচ্ছে নানা নকশা গয়না। এই স্যাকরাদের সঙ্গে এক দশকের বেশি কাজ করার অভিজ্ঞতা গয়নাশিল্পী তাহমিনা শৈলীর। এই স্যাকরাদের কথা, তাদের জীবনের গল্প, আনন্দ–বেদনা, সুখ–দুঃখ আমাদের সামনে কমই আসে। শৈলী সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এই প্রদর্শনীতে। উপস্থাপিত হচ্ছে গয়না–কারিগরদের আজানা জীবন সংগ্রাম, ঐতিহ্যবাহী শিল্প এবং তাঁতীবাজারের গয়না বাজারের পরিবর্তনের সব চিত্র।
বিকাশের সিইও কামাল কাদীর প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে ঢাকার তাঁতীবাজারকেন্দ্রিক এ ধরনের একটি অঞ্চলের শিল্পী–কারিগরদের জীবনসংগ্রামের পাশাপাশি অন্য বহু অজানা তথ্য আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরার জন্য গ্যালারি এবং কিউরেটরকে ধন্যবাদ জানান।
কামাল কাদীর বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন নারীর ব্যতিক্রমধর্মী পেশা দাঁড় করানোর পেছনের সংগ্রামটা বোঝার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এর পুরোটা বুঝে ওঠা যায় না। গয়নাশিল্পের মতো একটি পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য কিউরেটরকে অভিনন্দন জানাই।’ তিনি আরও বলেন, জুয়েলারি একটি দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বোঝার ক্ষেত্রেও সহায়তা করে। কী ধরনের জুয়েলারি মানুষ কেনে, ব্যবহার করে, তা গবেষকদের বিশ্লেষণ করে দেখা দরকার।
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আশরাফ কায়সার মন্তব্য করেন, কোনো কাঁচামালকে কেউ নতুন রূপ দিলে, ডিজাইন করলে, সেটা কেবল শিল্পপণ্য থাকে না, সেটা ভালোবাসা হয়ে যায়। এ প্রদর্শনী সেই ভালোবাসার ধারক। সৃজনশীল কাজ যে মানুষ স্বেচ্ছায় বেছে নিতে পারে, এ প্রদর্শনী তার প্রমাণ।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বর্তমানে মেশিনে তৈরি গয়না এবং হাতে তৈরি গয়নার প্রতিযোগিতার বিষয়টি গয়নার মার্কেট শেয়ারের আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। সরকার তাঁতীবাজারসহ গয়নার সব ধরনের ক্লাস্টারে দক্ষতা উন্নয়ন ও অর্থায়নের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে পারে।
দেশের প্রবীণ গয়নাশিল্পী নাজিম আহমদ বলেন, তাঁতীবাজারের কারিগরেরা যে মনোযোগ, ভালোবাসা আর শ্রম দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, তা এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। তবে দিন দিন গয়নার কারিগরের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। নতুন ছেলেমেয়েরা বেশি সংখ্যায় এ পেশায় এলেই কেবল গয়নাশিল্প মর্যাদা নিয়ে টিকে থাকবে।
প্রদর্শনীর আয়োজক তাহমীনা শৈলী বলেন, ‘এ প্রদর্শনী শুধু গয়নার সৌন্দর্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটি একই সঙ্গে তাঁতীবাজার তথা দেশের এ শিল্পের সব কারিগরের জীবনের গল্প, তাঁদের কঠিন পরিশ্রমের খণ্ডচিত্র। তাঁদের কাজের প্রতি এই শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে আমাদের গয়নাশিল্পীদের যাত্রা বিশ্বায়নের যুগে যাতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে সমানতালে, তার প্রতি জনমানুষের আগ্রহ সৃষ্টি হয়, এ লক্ষ্যে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। দেশের সকল গয়নাপ্রেমী, শিল্পরসিক এবং শিল্প–গবেষকদের জন্য “স্যাকরার তাঁতী বাজার” প্রদর্শনীটি একটি বিরল অভিজ্ঞতা হিসেবে বিপুলভাবে দর্শক সমাদৃত হচ্ছে।’
১০ অক্টোবর বিকেলে প্রদর্শনীর উদ্বোধনীতে বিকাশের সিইও কামাল কাদীর, ইউসিবিএলের ভাইস প্রেসিডেন্ট সাজ্জাদ হুসাইন, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আশরাফ কায়সার এবং দেশের প্রবীণ গয়নাশিল্পী নাজিম আহমদসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট অতিথিদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়াও প্রদর্শনীটি পরিদর্শন করেন।
ছবি: তাহমিনা শৈলী