ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় উদ্যোক্তাদের মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেখানে সবাই নতুন নতুন পোশাক ও অনুষঙ্গ নিয়ে হাজির হচ্ছেন। সেদিক থেকে একদমই ব্যতিক্রমী একটি মেলা আয়োজন করেছে নারী সহায়তা সংস্থা শান্তিবাড়ি। ৭ জুন শুক্রবার লালমাটিয়ায় শান্তিবাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ডিক্লাটার মেলা। বিভিন্ন পেশার মোট ৮ জন নারী ও নারী উদ্যোক্তা এতে অংশ নিয়েছেন তাঁদের ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত পোশাক, গয়না, ব্যাগ, বই, স্টেশনারি আইটেম নিয়ে।
মেলার উদ্বোধন করেন ইসরাত বিনতে রউফ। তিনি একাধারে একজন চিত্রশিল্পী, উন্নয়নকর্মী, যুবনেতা, অ্যাক্টিভিস্ট ও পরিবেশবাদী। ফেলে দেওয়া ও কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসপত্র দিয়ে তিনি চিত্রকর্ম তৈরি করেন।
অনেকে আছেন, যাঁরা পোশাক বা গয়না কিনে আলমারি ভরে ফেলেন, কিন্তু ঠিকমতো ব্যবহার করেন না। এ ধরনের অপচয় বন্ধের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ডিক্লাটার করা। অর্থাৎ নিজের ব্যবহৃত বা অব্যবহৃত অপ্রয়োজনীয় পোশাক, গয়না, জুতা, বই, এমনকি থালাবাসন ও আসবাব কাউকে দিয়ে দেওয়া বা বিক্রি করা।
পরিবেশ রক্ষার জন্য পোশাক, গয়না ও যাপিত জীবনের নানা অনুষঙ্গকে রিসাইকেল ও পুনর্ব্যবহার করার কোনো বিকল্প নেই। এই সুযোগ আসে ডিক্লাটারের মাধ্যমে। রিসাইক্লিং ও পুরোনো জিনিস আবার ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তোলার ব্যাপারে মানুষ এখন অনেক সচেতন। এর প্রমাণ বেশ ভালোভাবেই পাওয়া গেছে শান্তিবাড়ির অন্দরমহলে ঢুকে। বিভিন্ন বয়সের নারী ও পুরুষেরা এসে এই ডিক্লাটার মেলা থেকে ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত পুরোনো পোশাক ও অনুষঙ্গ কিনেছেন।
শান্তিবাড়ির সহপ্রতিষ্ঠাতা সুমি শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমরা সবাই এখন অনেক বেশি শৌখিন। আমরা প্রচুর শপিং করি, কিন্তু ব্যবহার করি কম। আমাদের আলমারিভর্তি পোশাক আর গয়না। এই অবস্থা মানসিকভাবে চিন্তা করলে যেমন অস্বাস্থ্যকর, তেমন পরিবেশের জন্যও ভালো নয়। তাই এই ডিক্লাটার মেলার আয়োজন করা, যাতে মানুষ তাঁর অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করতে পারেন। এবার যা আশা করেছিলাম, তার থেকেও ভালো সাড়া পেয়েছি। ভাবতেও পারিনি এত নারী অংশগ্রহণ করবেন।’
মেলায় অংশ নিতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে এসেছিলেন সাদিয়া শারমিন শিফা। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করছেন। ডিক্লাটার মেলায় তাঁর স্টলটি ছিল সবচেয়ে বড়। তাঁর ব্যবহৃত সব শাড়ি, কুর্তি, টপস, ব্যাগ, মেয়ের রঙের সেট, বই নিয়ে সাজিয়েছিলেন স্টল। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক দিন থেকেই ভাবছিলাম, আমার এত কাপড়গুলো কী করব, কোথায় দেব। তখন আমার বড় বোন আমাকে শান্তিবাড়ির ডিক্লাটার মেলার খোঁজ দিলেন। আমার ব্যবহৃত জিনিস পেয়ে যদি কারও উপকার হয়, তাতে আমি বেশ খুশিই হব।’
ব্যাংক কর্মকর্তা ইফফাত জাহানের স্টলে ছিল শাড়ি, ব্যাগ, নান্দনিক ডিজাইনের কাঠের টিপ ও গয়না। তিনি বলেন, ‘শান্তিবাড়ির সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক দিনের। তাদের অনুষ্ঠান ও মেলায় আমি আসি। কেউ কেউ খুব দাম দিয়ে একটা পোশাক কিনে একবার পরেন অথবা না পরেই ফেলে রাখেন। কিন্তু অনেকেই আছেন, যাঁদের ভালো কিছু দাম দিয়ে কেনার সামর্থ্য নেই। ডিক্লাটার মেলা হলে কেউ তাঁর অপ্রয়োজনীয় পোশাক যেমন বিক্রি করতে পারেন, তেমনি অন্য কেউ সেটা কম দামে কেনার সুযোগ পান।
অনেক সময় দেখা যায় উদ্যোক্তাদের কালেকশনে কিছু বাড়তি পোশাক বা গয়না রয়ে যায়, যেগুলো বিক্রি হয় না। ডিক্লাটার মেলায় তাঁরাও উপস্থিত ছিলেন নিজেদের সংগ্রহ নিয়ে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনূভাস (ব্লাউজ ও রুপার নাকের গয়না), মুক্ত মৃত্তিকা (শাড়ি, বিডসের গয়না), লিভা'স জুয়েলারি (তিব্বতি গয়না)। এ ছাড়া ছিল শান্তিবাড়ির নিজস্ব স্টল।
সকাল থেকেই দর্শনার্থী ও অতিথিদের পদচারণে মুখর ছিল শান্তিবাড়ির অন্দরমহল। সবাই নিজের পছন্দমতো কেনাকাটা করেছেন। কেউই খালি হাতে ফেরেননি। মেলায় এসেছিলেন মুশাররাত জাবিন। অনেক আগে থেকেই তিনি পুরোনো শাড়ি–গয়না কিনে ব্যবহার করেন। এবারের ডিক্লাটার মেলা থেকেও তিনি অনেক কিছু সংগ্রহ করেছেন।
তিনি বেশ উচ্ছ্বাসের সঙ্গেই বললেন, এ ধরনের মেলা আরও বেশি করে হওয়া উচিত। কারণ, এখান থেকে পুরোনো ব্যবহৃত কাপড় নতুন আশ্রয় পায়, যা পরিবেশের জন্য খুব উপকারী। অন্যদিক থেকে যাঁরা একটু ফ্যাশন–সচেতন, তাঁরা কম দামে বেশ ভালো পণ্য এখানে পেয়ে যেতে পারেন।
ছবি: শান্তিবাড়ি