ঢাকা মেকার্স ২: দ্বিতীয় দিনে সাড়া জাগিয়েছে বৈচিত্র্যময় কর্মশালা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আর্ট, ক্র্যাফট, ফ্যাশনসহ আরও অনেক কিছুর চমৎকার সমন্বয়ে তেজগাঁওয়ের আলোকি কনভেনশন সেন্টারে ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে ‘ঢাকা মেকার্স ২’। চার দিনের এ আয়োজনের আজ ছিল দ্বিতীয় দিন। ছুটির দিন থাকায় সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় নগরীর সমমনা শিল্পপ্রেমীদের আনাগোনা। শতাধিক কারুশিল্পী ও শিল্পীর বৈচিত্র্যময় পণ্যের মার্কেটপ্লেস, ফুড প্যাভিলিয়ন, তরুণ চিত্রশিল্পীদের আধুনিক চিত্রকর্মের প্রদর্শনী আর সংগীতায়োজনে জমজমাট ছিল আলোকি।

নকশিকাঁথার কর্মশালা
নকশিকাঁথার কর্মশালা

তবে এই আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে বৈচিত্র্যময় সব কর্মশালার তারিফ না করে পারা যায় না। আজ দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে ছিল মাসু আঁকের অ্যাক্রিলিক দিয়ে আঁকা, ওয়াইল্ডওভেনের লেদার ক্রাফটিং, ইব্রাহিম পালিংয়ের সঙ্গে নকশিকাঁথা, ফ্রুটসিকেলসের সঙ্গে পপসিকেল বানানো, আনিসার বিড আর্ট বা পুঁতির কাজ আর ব্রোকের ব্যাজ বানানোর কর্মশালা। মূলত অভিজ্ঞ ও নবীন শিল্পী আর কারুশিল্পীরা এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। নিজেদের সৃজনশীলতা অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে এই কর্মশালাগুলোর আয়োজন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় দিনের প্রথম কর্মশালা ছিল মাসু আঁকের অ্যাক্রিলিক মিডিয়ায় আঁকা। তরুণ চিত্রশিল্পী মাসুদা খান ছবি আঁকার প্রশিক্ষণ দেন। পাশাপাশি আলোকির আরেক অংশে একই সময়ে শুরু হয় ওয়াইল্ডওভেনের লেদার ক্র্যাফটিং কর্মশালা। ১৫ জন দেশি ও বিদেশি অংশগ্রহণকারী ছিলেন এই কর্মশালায়। চামড়া, কাটার বোর্ড আর রুলারের মাধ্যমে তাঁরা প্রথম দিন তৈরি করেন লেদার ব্রেইড (চামড়ার বিনুনি)। এই কর্মশালার দ্বিতীয় পর্ব হবে কাল। ওয়াইল্ডওভেনের স্বত্বাধিকারী ও এই কর্মশালার প্রশিক্ষক ফয়সাল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ভাবি যে চামড়ার পণ্য তৈরি খুব জটিল বিষয়।

ওয়াইল্ডওভেনের লেদার ক্র্যাফটিং কর্মশালা
ওয়াইল্ডওভেনের লেদার ক্র্যাফটিং কর্মশালা

অথচ হাজার হাজার বছর ধরে চামড়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। আমি চেয়েছি খুব সহজ উপায়ে এই পণ্য তৈরি শেখাতে। এর জন্য হয়তো অনেক ভারী ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিন বা অনেক কিছু লাগবে; কিন্তু খুবই আকর্ষণীয়ভাবে উদ্ভাবনী দক্ষতায় কোনো বিশেষ যন্ত্রপাতি ছাড়াই একটা রুলার, কাটার আর চামড়ার টুকরা দিয়ে অনেক কিছুই বানানো যেতে পারে। সেটাই এখানে শেখানো হচ্ছে। আজকে শেখানো হয়েছে লেদার ব্রেইড। কালকে শেখানো হবে চামড়া দিয়ে কার্ড হোল্ডার বানানো। এর জন্যও কোনো বিশেষ যন্ত্রপাতি লাগবে না। আমরা একটা ফরম্যাটে কেটে সেটাকে অরিগ্যামির মতো বানিয়ে একটা আকার দেব।’

বিজ্ঞাপন

এরপরই শুরু হয় দিনের তৃতীয় কর্মশালা ‘ইব্রাহিম পালিংয়ের সঙ্গে নকশিকাঁথা’। এই কর্মশালায় ১২ জনই ছিলেন বিদেশি। নকশিকাঁথার প্রতি তাঁদের গভীর ভালোবাসা প্রতীয়মান হয়েছে এই কর্মশালায়। তরুণ প্রশিক্ষক ইব্রাহিম পালিং তাঁদের সবাইকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার নকশিকাঁথার নকশা, কেমন সুতা আর কাপড় ব্যবহার করা ভালো, প্যাটার্ন আর প্রথম ধাপে শাপলা ফুল বোনা সম্পর্কে ধারণা দেন। রঙিন সুতার বুননে তাঁরাও বেশ আনন্দ নিয়ে প্রথম দিনের কর্মশালা শেষ করেন। এই কর্মশালার দ্বিতীয় পর্ব হবে আগামীকাল। ইব্রাহিম পালিং জানান, পুরোনো কাপড়ে নকশিকাঁথা বুনতে তাঁর ভালো লাগে। আর এই প্যাশনটা তৈরি হয়েছে তাঁর নানির কাছ থেকে। তিন বছর ধরে তিনি এই ভালোবাসার পেশার সঙ্গে যুক্ত। আর এখন অনেককেই তিনি নকশিকাঁথা তৈরি শেখান।

ইব্রাহিম পালিংয়ের তত্ত্বাবধানে নকশিকাঁথার কর্মশালা
ইব্রাহিম পালিংয়ের তত্ত্বাবধানে নকশিকাঁথার কর্মশালা

এর মধ্যে আলোকির আরেকটি উইংয়ে চলতে থাকে ‘ফ্রুটসিকলসের সঙ্গে পপসিকল’ বানানো কর্মশালা। স্থানীয় পণ্য, মৌসুমি ফল আর প্রাকৃতিক উপাদান থেকে মুখরোচক পপসিকল তৈরি শেখানো হয় এখানে। বাচ্চা আর প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটি ছিলএকটি মজার কর্মশালা।

এর মধ্যে আরেকটি সৃজনশীল কর্মশালা ‘আনিসা’র বিড আর্ট বা পুঁতির কাজ’ শুরু হয়। এই কর্মশালায় অংশ নেন মোট ১২ জন দেশি ও বিদেশি আগ্রহী অংশগ্রহণকারী। ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মশালায় পুঁতি ব্যবহার করে ব্রেসলেট, নেকপিসের মতো পছন্দের গয়না তৈরি শেখানো হয়। প্রশিক্ষক আনিসা মোর্শেদ ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন বাংলাদেশি পুঁতিশিল্পী। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি এই কারুশিল্পকে শখ হিসেবে গ্রহণ করেন এবং বছরের পর বছর স্ব-অনুশীলনের মাধ্যমে এই শিল্পকে তিনি আয়ত্ত করেন। তাঁর প্যাশন প্রজেক্টের নাম ‘বিডেড’। তিনি বলেন, ‘বিডিং শুধু ক্র্যাফট নয়; এটি একটি ব্যায়ামের মতো, যা সৃজনশীলতা, একাগ্রতা ও ধৈর্য বিকাশে সহায়তা করে। আমার উদ্যোগের মাধ্যমে আমি বাংলাদেশি কারিগরদের পুঁতিশিল্প নিয়ে উপার্জন করতে অনুপ্রাণিত করতে চাই।’ উল্লেখ্য, আনিসা পুঁতির দীর্ঘতম থ্রেডের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ভেঙেছিলেন।

ছুটির দিনে মুখর ছিল আলোকি
ছুটির দিনে মুখর ছিল আলোকি

দ্বিতীয় দিনে আরেকটি সৃজনশীল ও মজার কর্মশালা ছিল ‘ব্রোক-এর ব্যাজ বানানো’। প্রশিক্ষক মাহেনাজ চৌধুরী একজন জিরো ওয়েস্ট ডিজাইনার এবং একজন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাকটিভিস্ট। তাঁর এই কর্মশালায় অংশ নেন শিশুসহ মোট চারজন। পুরোনো কাপড়—যেমন টি–শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট, শাড়ির টুকরা দিয়ে তিনি এই কর্মশালায় ব্যাজ বানানো শেখান সবাইকে।

প্রতিটি কর্মশালাতেই তরুণ থেকে বয়স্ক, এমনকি শিশুদের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে আজ। সবাই বেশ আগ্রহ নিয়েই অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা মেকার্সের আগামী দুই দিনেও থাকছে আর্ট, ক্র্যাফটের অনেক কর্মশালা। আগ্রহী ব্যক্তিরা চাইলে অনুষ্ঠানস্থলে সরাসরি এসে নির্দিষ্ট রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিয়ে কর্মশালায় অংশ নিতে পারবেন। এ উৎসবের সামগ্রিক আয়োজনে ঢাকা মেকার্সের সঙ্গে আছে সিটি ব্যাংক। এ ছাড়া রয়েছে ইএমকে সেন্টার আর গ্যেটে ইনস্টিটিউট। ইভেন্টের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার আলোকি কনভেনশন সেন্টার, এমারেল্ড ইভেন্টস, আইস টুডে, দেশার ওয়ার্কস ও ভাই ভাই প্রোডাকশনস। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে আছে  হাল ফ্যাশন ও সময় টিভি। আরও তথ্যের জন্য ভিজিট করতে পারেন: www.dhakamakers.com

ছবি: ফ্লোরিডা শুভ্রা রোজারিও

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫: ৩৪
বিজ্ঞাপন