মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা ফ্লো। এবার নারী দিবস উপলক্ষে ৮ ও ৯ মার্চ তারা আয়োজন করেছিল বিশেষ অনুষ্ঠান ‘ওয়েলনেস ফেস্ট ঢাকা ফ্লো ইন্সপায়ার হার’। বারিধারা সোসাইটির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বারিধারা কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত লেকসাইড পার্কে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব। সমাজে নারীরা যে ধরনের প্রতিকূলতা ও নেতিবাচকতার সম্মুখীন হন, তাতে তাঁদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি হয়। তাঁরা নিজেকে মূল্যায়ন করতে ভুলে যান। সেখান থেকে বের হয়ে কীভাবে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভালো থাকা যায়, সে বিষয়েই গুরুত্ব দেওয়া হয় এ আয়োজনে। বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সেশন, কাউন্সেলিং আর প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে নারীরা তাঁদের পরিবার নিয়ে এসে ভালো সময় কাটানোর সুযোগ ছিল এখানে। দুই দিনে দেশি-বিদেশি দর্শকদের ভিড়ে মুখর ছিল বারিধারার লেকসাইড পার্ক।
মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে কিন্তু শপিংয়ের বেশ সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কেনাকাটা করা মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে এবং ডোপামিনের মতো হ্যাপি হরমোনের নিঃসরণ করে। আর ঢাকা ফ্লো কর্তৃপক্ষ এই বিশেষ উৎসবে এক দারুণ মেলার আয়োজন করে। এতে আমন্ত্রণ জানায় ঢাকার সুপরিচিত উদ্যোক্তাদের। এই উদ্যোক্তাদের সবাই নারী। এ ছাড়া এখানে ছিল ছোট এক ফারমার্স মার্কেট, যেখানে ছিল শুধুই নারী কৃষক ও উৎপাদনকারীদের উৎপাদিত পণ্য।
মেলায় ছিল ঢাকার কিছু সুপরিচিত ফ্যাশন ব্র্যান্ডের স্টল। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আন্দিম, তান, তরী, ব্যাড গার্ল নেশন, শাবানা, আবেগ, হোয়াই সো সানজিদা, এক্সক্লো, সমস্যা নেই। প্রতিটি স্টলে ছিল স্টাইলিশ ও একই সঙ্গে আরামদায়ক পোশাক ও অনুষঙ্গ। এখানে কথা হয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড তানের কর্ণধার তরুণ মেধাবী ডিজাইনার তানহা শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে নিজের ডিজাইনের পোশাক শুধু বিক্রি করাই লক্ষ্য নয়, মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ এবং নতুন করে পরিচিত হওয়ার জন্য আসা। অনেকে এসে আমার ডিজাইনগুলো দেখছেন, প্রশংসা করছেন। আবার অনেকেই কিনছেন। সব মিলিয়ে বেশ ভালো সময় পার হচ্ছে।
নারী দিবস উপলক্ষে এই মেলাতেই নতুন কালেকশন লঞ্চ করেছে ইনস্টাগ্রামভিত্তিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড এক্সক্লো। এর নতুন সংগ্রহে আছে আরামদায়ক রাতপোশাক বা স্লিপওয়্যার, ক্যাজুয়াল টপস, সোয়েট স্যুট সেট। ব্র্যান্ডটির স্বত্বাধিকারী ফারহানা দানিশ বলেন, ‘আমাদের দেশে স্লিপওয়্যারের ধারণাটা প্রচলিত নয়। কিন্তু সারা দিন ঘরে যে জামা পরে ঘুরছি, রান্নাবান্না বা মোছামুছির কাজ করছি, তা পরে ঘুমিয়ে যাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিষয়টি চিন্তা করে বেশ সাশ্রয়ী মূল্যের স্টাইলিশ স্লিপওয়্যার সেট এনেছি কেবল নারীদের জন্য।’ তান ও এক্সক্লোর স্টল ছাড়াও আন্দিম, ব্যাড গার্ল নেশন, শাবানাতেও আগ্রহী ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
সমস্যা নাই ও বিস্কুট ফ্যাক্টরি নিয়ে এসেছিল ইউনিক ডিজাইনের অনুষঙ্গ। সমস্যা নাই-এর টোট ব্যাগ এবং বিস্কুট ফ্যাক্টরির সিগনেচার আইটেম রিকশা পেইন্টের সানগ্লাস অনেক বিক্রি হয়েছে। মেলায় সেস লা ভিয়ে, কসমিক ক্যান্ডেল কালেকশনস, ক্যান্ডেল অ্যান্ড কোং ও বেয়ার অ্যান্ড কোং নিয়ে এসেছিল বিভিন্ন ফ্লেভার ও নান্দনিক ডিজাইনের সুগন্ধি মোমবাতি। মানসিক প্রশান্তির জন্য ঘরে ও গোসল করার সময় এমন সেন্টেড ক্যান্ডেল ব্যবহার করা এখন একটা ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। এসব স্টলে যেমন ভিড় ছিল, ঠিক তেমনই প্রচুর বিক্রি হয়েছে। বেয়ার অ্যান্ড কোং থেকেই সেন্টেড ক্যান্ডেল কিনেছেন বাংলাদেশি ব্র্যান্ড ডেনিশ ফুড লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার অ্যাডলিন। তিনি জানান, সবার তো স্পা বা পারলারে গিয়ে অ্যারোমাথেরাপি নেওয়ার সামর্থ্য বা সময় হয় না। সেন্টেড ক্যান্ডেল কিন্তু এই থেরাপির বেশ ভালো ও সুলভ বিকল্প। মানসিক প্রশান্তি দিতে পারে, স্টেস কমাতে পারে। আর আজকাল প্রচুর মশা দেখা দিচ্ছে। সেন্টেড ক্যান্ডেল কিন্তু মশাও তাড়াতে পারে।
পোশাক-আশাকের সঙ্গে ছিল স্কিনকেয়ার পণ্যের স্টল। বুনো অর্গানিকে ছিল সুলভ মূল্যের ফেস ও হেয়ার মাস্ক, লিপ স্ক্রাব, হেয়ার অয়েল। ব্র্যান্ডটি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি পণ্যগুলোর সুনাম দীর্ঘদিনের। তাই মেলায় বিক্রিও হয়েছে ভালো। এদিকে যখনই অন্তবিহীন-জিরো-ওয়েস্ট ইকো শপের সামনে যাওয়া হয়েছে, তখনই অনেক ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এখানে পাওয়া গেছে বাঁশের তৈরি স্ক্যাল্প ম্যাসাজ হেয়ার ব্রাশ, বাঁশের টুথব্রাশ। তবে দর্শকদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল তাদের শ্যাম্পু বার নিয়ে। একটি শ্যাম্পু বার ৭৫০ মিলিলিটার শ্যাম্পুর সমান। বিক্রি হচ্ছে টিনের বাক্সে। এই ইউনিক পণ্য একই সঙ্গে যেমন সাশ্রয়ী, তেমন পরিবেশবান্ধব।
ছবি: হাল ফ্যাশন ও ঢাকা ফ্লো