শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের মাইডাস সেন্টারেও চলছে বারুণী ও ত্রিনয়নীর শারদীয় মেলা। মাইডাস সেন্টারের ১২ তলায় দুপাশের বিশাল জায়গাজুড়ে আয়োজন করা হয়েছে এই মেলা। মোট ৬৪টি স্টল রয়েছে এখানে। নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসে বারুণী ও ত্রিনয়নী। এ জন্য এই মেলায় অংশগ্রহণকারী মানুষের বেশির ভাগই নারী এবং অনলাইনভিত্তিক দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তা।
নিয়মিত ব্যবহারের জন্য ও উৎসবধর্মী নানা ধরনের পোশাক থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর পণ্যও এক ছাদের নিচে পাওয়া যাচ্ছে। মেলায় ঢুকলেই চোখে পড়বে পোশাকের বিশাল আয়োজন। কী নেই এখানে! আনস্টিচড পোশাক, শাড়ি, ব্লাউজ, কামিজ, থ্রি–পিস, কাফতান, পাঞ্জাবি ও ফতুয়া ছাড়াও মিলবে পছন্দসই গয়না। হালের ক্রেজ মুক্তা থেকে শুরু করে অক্সিডাইজড ব্রাস মেটাল, কড়ি, রেজিন, পোড়ামাটি ও বিডসের মতো নানা ধরনের উপকরণে তৈরি এসব গয়না।
তবে আলাদাভাবে চোখে পড়বে ব্লক, বাটিক, কাঁথাস্টিচ আর ন্যাচারাল ডাইয়ের পোশাকের বেশ কিছু স্টল। একটার কালেকশন অন্যটা থেকে ভিন্ন। আছে পাহাড়ি কাপড়ে তৈরি পোশাকের উদ্যোগও।
আয়োজনে রয়েছে খাবারের কিছু স্টল। এর মধ্যে ত্রিনয়নীতে রয়েছে তিনটি আর বারুণীতে চারটি। পাওয়া যাচ্ছে হাতে তৈরি মুখরোচক ও স্বাস্থ্যসম্মত বাঙালি খাবার থেকে শুরু করে ফাস্টফুড।
খাবারের উদ্যোগ রসুইঘরের স্বত্বাধিকারী সিলভিয়া পারভিন ল্যানি জানান, তাঁদের স্টলে রয়েছে শিঙাড়া, সমুচা, বাকরখানি অনুপ্রাণিত বিস্কুট, চিকেন প্যাটিস, তেহারি ও নুডলস। অনলাইনেও তারা অর্ডার নিয়ে থাকেন। সবই ঘরে তৈরি আর ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই। টেস্টি কুকারিতে কলিজার শিঙাড়া, পুডিং, পোলাও, রোস্ট, রোল, আম ও কমলার ফ্রেশ জুস আছে। তাই একবার ঢুঁ মেরে আসতেই পারেন এখানে।
রেজিনের তৈরি নানা ধরনের পণ্য নিয়ে বসেছে বিগ রেজিন ক্লাব। এখানে আছে রেজিন দিয়ে তৈরি গয়নার বাক্স, ওয়াল হ্যাঙ্গিংয়ের মতো সৃজনশীল সব পণ্য।
মেয়েদের গয়নার বিশাল সমাহার আছে—একেকজনের একেক ধরনের গয়না পছন্দ। সেভাবেই স্টলগুলো সাজানো হয়েছে।
এর মধ্যে ‘শক্তি’ নামের একটি উদ্যোগ আলাদাভাবে মন ছুঁয়ে যাবে। তাদের কালেকশনে আছে পোড়ামাটির গয়না। উদ্যোক্তা আনিকা তাবাসসুম নবনী জানান, চারুকলা থেকে মাটি সংগ্রহ করে নিজের বাসাতেই মাটি পুড়িয়ে এগুলো বানান তিনি।
ফ্যাশন উদ্যোগ অরামে পাওয়া যাচ্ছে ব্লকের নানা ধরনের আনস্টিচড পোশাক। মেয়েদের একরঙা ও ওভারসাইজড শার্ট তাদের বেস্ট সেলার পণ্য। এ ছাড়া শাড়ি, কাফতান ও থ্রি–পিসও আছে।
আরেকটি ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ এফজেড কালেকশনে আছে পাহাড়ি পোশাকের সমাহার। এসব পণ্য সরাসরি খাগড়াছড়ি থেকে তৈরি বলে জানান ব্র্যান্ডের স্বত্বাধিকারী মাহফুজা শিউলি। আছে থামি, গামছা, থ্রি–পিস, লুঙ্গি ছাড়াও পাট ও কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি শাড়ি।
মেলা উপলক্ষে কিছু ব্র্যান্ড ছাড়ের ব্যবস্থাও রেখেছে। শাড়ি আর ব্লাউজ পিস নিয়ে উপস্থিত হৈম নির্দিষ্ট পণ্যে দিচ্ছে ৩৫ শতাংশ ছাড়।
মেঘপিওনের উদ্যোগে আছে ব্লকের পোশাক। এ ছাড়া তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পণ্য সংগ্রহ করে। এর মধ্যে যশোর স্টিচ, জামালপুরের হাতের কাজের পোশাক ও সিলেটের মণিপুরি শাড়ি উল্লেখযোগ্য।
মেলায় আরও চোখে পড়বে ঘর সাজানোর পাট ও চটের তৈরি বিভিন্ন পণ্যও। সব মিলিয়ে দেশি পণ্যের বিচিত্র সমাহারে জমে উঠেছে এই মেলা। দেশি পণ্যকে তুলে ধরার পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতেই এই আয়োজন। সপ্তাহান্তের শেষ দিনটিতে এখানে ঘুরে এলে ভালো লাগবে সবারই।
ছবি: প্রতিবেদক ও ত্রিনয়নী