‘নরসিংদী জেলা নারী উদ্যোক্তাদের মেলা’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ এই মেলা আয়োজন করে। এখানে অংশ নেন নরসিংদীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার নারী উদ্যোক্তারা। নারী উদ্যোক্তাদের এই মেলায় পাটজাত পণ্য, ব্লক, বাটিক, শাড়ি, নকশিকাঁথা, কাঠের তৈরি কারুপণ্য, কেক, নাড়ু, থ্রি-পিস, সালোয়ার-কামিজ, জামা, গাছের চারাসহ বিভিন্ন প্রকার খাবার পাওয়া যায়। মেলায় নারী উদ্যোক্তারাই এসব পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন।
ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নারী উদ্যোক্তাদের বাহারি পণ্যের মেলা। বিকেলে এই মেলায় দর্শনার্থী ও ক্রেতা সমাগমও বেশি থাকে। এখানে অংশ নেওয়া নারী উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই অনলাইন (ফেসবুক ভিত্তিক) ব্যবসা পরিচালনা করেন। অনলাইনে ব্যবসার ফলে ক্রেতারা চাইলেও পণ্য সরাসরি দেখতে পারেন না। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে এই মেলায় ক্রেতা ও উদ্যোক্তাদের এক মিলনমেলা ঘটে। পাশাপাশি পণ্য দেখে নিতে পারেন ক্রেতারা। উদ্যোক্তারাও অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনে ব্যবসার সুযোগ পান। মেলার আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হচ্ছে উদ্যোক্তাদের অনেকেই নরসিংদী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি মেলায় তাদের পণ্য বিক্রি করেন তারা।
মেলায় কথা হয় রিমা’স কেয়ারের উদ্যোক্তা সাজিদা আক্তার রিমার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার উদ্যোগ গ্রহণ করার কয়েক মাস পরেই এই মেলা সম্পর্কে জানতে পারি এবং এখানে অংশ নেই। এই মেলার মাধ্যমেই আমার পণ্যগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। আমরা যারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা শুরুতেই আউটলেট দিয়ে অফলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। যার ফলে আমরা শুধু অনলাইন নির্ভর। কিন্তু এই মেলা অনলাইন থেকে অফলাইনে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছে। এখানে খুব কম খরচে অংশ নেওয়া যায়।
নরসিংদী শহরে বসবাসকারী নাসিমা সুলতানা জানান, ‘প্রথমে ফেসবুকে দেখতে পাই প্রতি শনিবার পৌর পার্কে মেলা বসে, সেটা দেখেই এখানে আসা। এখানে এসে দেখলাম প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যই এখানে রয়েছে। এখন মেলায় নিয়মিত আসার চেষ্টা করি এবং প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নেই।
মেলা প্রধান পরিচালক সাবরিনা আক্তারের সঙ্গে কথা হয় মেলা বিষয়ে। তিনি জানান, মাত্র ১০ জন উদ্যোক্তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক গ্রুপ থেকে শুরু হয় নরসিংদী নারী উদ্যোক্তা মেলা। প্রথমে নিজ বাড়ির ছাদে আয়োজন করেন মেলা, যেখানে নারী উদ্যোক্তারা পণ্য নিয়ে আসত সেগুলো গ্রুপ ও নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে সবাইকে জানাতেন সাবরিনা। প্রথমদিকে নিজের ও উদ্যোক্তাদের পরিচিতরা ফেসবুকে ও মোবাইল ফোনে অর্ডার দিত পণ্য। কিন্তু বাড়ির ছাদে বেশি সংখ্যক উদ্যোক্তাকে স্থান দিতে পারছিলেন না। পরে স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে আয়োজন করেন এই মেলা। পরবর্তীতে সেখান থেকে পৌর শিশুপার্কে নিয়ে আসেন এই মেলা। পৌর পার্কে মেলা প্রতিষ্ঠা করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে আয়োজকদের। ৩০০-এর বেশি উদ্যোক্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই মেলায়। প্রতি মেলায় সবাই অংশ নিতে পারে না। সর্বোচ্চ ১০০ জন উদ্যোক্তা অংশ নিতে পারেন একটি মেলায়।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকতা করে সময় অতিবাহিত হচ্ছিল কিন্তু করোনার সময় স্বামীর ব্যবসাকে অনলাইনে ছড়িয়ে দিতে ফেসবুকে নিয়মিত হন এবং পরবর্তীতে উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে এই মেলা আয়োজন ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে উঠান বৈঠক আয়োজন করেন যাতে করে অন্য নারীরাও উদ্যোক্তা হতে পারে এবং নিজে স্বাবলম্বী হয়ে উঠে।
নরসিংদী জেলা নারী উদ্যোক্তাদের মেলা ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত আছেন প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি সদস্য। মেলায় অংশ নিতে উদ্যোক্তাদের টেবিল চেয়ার ভাড়া বাবদ ১৬০ টাকা প্রদান করতে হয় এ ছাড়া আর কোনো খরচ দিতে হয় না উদ্যোক্তাদের। দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নরসিংদীর নারী উদ্যোক্তাদের এই মেলা। আয়োজকেরা আশা প্রকাশ করেন দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ুক এমন উদ্যোগ।
ছবি: লেখক