শুরু হয়েছে বিশ্বরঙ উদ্যোক্তা ভূমির ‘শরৎ হাওয়া’। সকাল থেকেই জমজমাট ছিল বিশ্বরঙের বনশ্রী আউটলেট। ব্র্যান্ডটির নিজস্ব পণ্যের পাশাপাশি শোরুমের বড় একটা অংশজুড়ে বাছাইকৃত পণ্যের পসরা সাজিয়ে উপস্থিত নবীন উদ্যোক্তারা। ‘শরৎ হাওয়া’ শিরোনামের এই পণ্য প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন ১৬ উদ্যোক্তা। আজ শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।
প্রদর্শনীতে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে বৈচিত্র্যময় ও ট্রেন্ডি ডিজাইনের পোশাকের সম্ভার—শাড়ি, পাঞ্জাবি, কামিজ, ওড়না ইত্যাদি। বিভিন্ন ম্যাটেরিয়ালে ন্যাচারাল ডাই, ব্লক ও স্ক্রিন প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট ও হাতের কাজ নজর কাড়ে। সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী জামদানি ও অন্যান্য তাঁতের শাড়িও আছে। গয়না, ব্যাগ ও ঘর সাজানোর পণ্য আছে কয়েকজন উদ্যোক্তার। বাদ যায়নি হাতে বানানো উপহারসামগ্রী। আধুনিক গ্যাজেটস নিয়েও উপস্থিত আছেন তরুণ এক উদ্যোক্তা।
আজ ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় এক উৎসবমুখর পরিবেশে প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন সৌন্দর্যবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান, অভিনয়শিল্পী রোজী সিদ্দিকী, চলচ্চিত্র ও নাটক পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী, কেশ–বিশেষজ্ঞ কাজী কামরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ ফ্যাশন সাংবাদিক শেখ সাইফুর রহমান। এ ছাড়া এই আয়োজন যাঁর উদ্যোগে, বিশ্বরঙের কর্ণধার ও ডিজাইনার বিপ্লব সাহার উপস্থিত ছিলেন পুরো আয়োজনের মধ্যমণি হয়ে। বিকেলে বনশ্রী আউটেলেটে অভিনয়শিল্পী ফখরুল বাশার মাসুম ও মিলি বাশারও । আগামীকাল উপস্থিত থাকবেন জনপ্রিয় অভিনয় ও নৃত্যশিল্পী অপি করিম।
দুই দিনের এই আয়োজনে দৃষ্টিনন্দন পণ্য নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে রোদসী, পরিণীতা ফ্যাশন, ফ্লেয়ার, সাজো বাই সানজানা, তাস হ্যাঙ্গার, আমি আমরা, নান্দনিক কালেকশন, আকৃতা’স ক্রিয়েশন, মম ফানুস, যোহরা’স ভ্যানিটি, দ্য সলি, ক্রাফট ওয়ার্কস, এনএন বুটিক, ডোনাস হিউ, মিতার গল্প ও আরু—এই ১৬টি অনলাইনভিত্তিক লাইফস্টাইল ও ফ্যাশন উদ্যোগ।
মেলা ও অন্যান্য প্রদর্শনীর চেয়ে আলাদা ‘শরৎ হাওয়া’। বিশ্বরঙের উদ্যোক্তা ভূমি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ অন্যান্য জেলা থেকে বাছাই করেছেন বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তাকে। তাঁদের পণ্য যাচাই-বাছাই করেছেন ফ্যাশন ডিজাইনার ও বিশ্বরঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা। পণ্যের গুণগত মান, কোথা থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করা যায়—এসব খুঁটিনাটি বিষয়ে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষিত করেছেন তিনি। পণ্যনকশা থেকে ব্র্যান্ডিং সব ব্যাপারে তাদের প্রস্তুত করেই এই প্রদর্শনীর আয়োজন।
বিপ্লব সাহা বলেন, ‘বিশ্বরঙ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করে। উদ্যোক্তা ভূমি তৈরি করেছি সৃজনশীল শিল্পীদের নিয়ে। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতা থেকে তাঁদের পরামর্শ দিয়েছি—কোনটা ভালো আর কোনটা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। ডিজাইন, ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, বিপণন—সব দক্ষতা তারা রপ্ত করুক, এটাই আমি চাই। “শরৎ হাওয়া” প্রদর্শনীতে নিজস্ব ডিজাইন প্রদর্শন করছেন উদ্যোক্তারা। পরে এগুলোই ব্র্যান্ড হয়ে উঠবে বলেই আমার প্রত্যাশা। আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে আমি তাঁদের পাশে থাকতে চেয়েছি'।
‘নতুন উদ্যোক্তাদের কাজ এত ভালো হবে, বুঝতে পারিনি প্রথমে। এখানে এসে মুগ্ধ হয়েছি। বিপ্লব সাহার সহায়তায় পরিপক্বভাবে কাজগুলো করেছেন উদ্যোক্তারা। তারা আরও এগিয়ে যাবে বলেই আমার প্রত্যাশা,’ বলেছেন সৌন্দর্যবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান।
অভিনয়শিল্পী রোজী সিদ্দিকি বলেন, ‘সমসাময়িক অস্থিতিশীলতার কথা আমাদের সবার জানা। এই কঠিন সময়ে বিপ্লব সাহা উদ্যোক্তাদের সুযোগ করে দিয়েছে, কাজে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেছে, যা খুবই প্রশংসনীয়। মেলা ঘুরে মনে হয়েছে, এখানে অনেকের কাজ বেশ ভালো। আবার অনেকেই আছেন নতুন, তাঁদের যতটুকু অনভিজ্ঞতা আছে, বিপ্লবের সঙ্গে এভাবে কাজ করলে তা দ্রুতই কেটে যাবে আশা করছি।’
'আউটলেটের বৃহদাংশ নবীন উদ্যোক্তাদের জন্য ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারটি অভিনব ও অত্যন্ত প্রশংসনীয় এক উদ্যোগ', বলেন ফ্যাশন সাংবাদিক শেখ সাইফুর রহমান।
চয়নিকা চৌধুরী মনে করেন, সবার বেড়ে ওঠার জন্য একটা ভালো প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, 'এখানে এসে মনে হয়েছে, বিপ্লব সাহা সেই কাজ করছেন উদ্যোক্তাদের জন্য'।
কেশ–বিশেষজ্ঞ কাজী কামরুল ইসলাম সবাইকে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, একটা যাত্রা শুরু হয়েছে। এখন এগিয়ে যাওয়ার পালা। হার মানা যাবে না। বরং উত্তরোত্তর উন্নতি করতে হবে।
ছবি: বিশ্বরঙ