জেনরা ফ্যাশন ওডিসি ২০২৫: ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিলনে নতুন প্রজন্মের সৃজনশীলতা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

রং, আলো আর সৃজনশীলতার মেলবন্ধন

জেনরা ফ্যাশন ওডিসি ২০২৫: ক্যাম্পাস এডিশন উপলক্ষে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) রূপ নেয় এক জীবন্ত রানওয়েতে। ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল উৎসবমুখরতা—রং, আলো আর তরুণদের সৃষ্টিশীলতার ঝলকে মুখরিত ছিল।
এই দিনেই অনুষ্ঠিত হয় ‘জেনরা ফ্যাশন ওডিসি ২০২৫: ক্যাম্পাস এডিশন’, যার মূল লক্ষ্য ছিল তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনারদের সৃষ্টিশীলতা, উদ্ভাবনী চিন্তাধারা এবং শিল্পিত প্রকাশকে সামনে আনা।

ছিল ডেনিম রিভাইভ
ছিল ডেনিম রিভাইভ

ফ্যাশন ব্র্যান্ড জেনরার উদ্যোগ এবং বুটেক্স ফ্যাশন সোসাইটির আয়োজনে সকাল আটটা থেকেই জমে ওঠে নিবন্ধন ও চেক-ইন পর্ব। সকালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে বুটেক্সের উপাচার্য ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘ফ্যাশন একটি পরিবর্তনশীল বিষয়। বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও নতুনত্ব আনতে হবে। ভবিষ্যতে বুটেক্স আন্তর্জাতিক মানের ফ্যাশন শো আয়োজন করবে—এই আশা রাখি।’

ছিল বিভিন্ন পণ্যের স্টল
ছিল বিভিন্ন পণ্যের স্টল

ফ্যাশন ছাড়া টেক্সটাইল অসম্পূর্ণ, মনে করেন বুটেক্স ফ্যাশন সোসাইটির প্রেসিডেন্ট সুদীপ্ত বণিক। তিনি বলেন, ‘ফ্যাশন হলো টেক্সটাইলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি বুটেক্সের ইতিহাসে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রথম ও সবচেয়ে বড় ফ্যাশন আয়োজন, যা সবার কাছেই উপভোগ্য হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

বিজ্ঞাপন

দিনের শুরুতে ছিল ওপেন ওয়ার্কশপ ‘ইন্টারলেসিং বাংলাদেশ’জ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি, যেখানে দেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা, ডিজাইন ট্রেন্ড এবং টেকসই ফ্যাশনের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

তরুণদের সৃজনশীলতায় রঙিন রানওয়ে

আয়োজনে ছিল ফ্যাশন ডিজাইন প্রতিযোগিতা
আয়োজনে ছিল ফ্যাশন ডিজাইন প্রতিযোগিতা

প্রতিযোগিতার অংশে অংশগ্রহণকারীরা জমা দেন বিভিন্ন ক্যাটাগরির ডিজাইন—প্রতিটি ক্যাটাগরিতে অন্তত দুটি ও সর্বোচ্চ তিনটি করে। ঢাকার পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় বিইউএফটি, এইইউএসটি, ডিআইইউ, বুটেক্স, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। দুপুরের পর শুরু হয় আয়োজনের মূল আকর্ষণ ‘জেনরা গ্র্যান্ড রানওয়ে শো’। চারটি বিভাগে সাজানো এই প্রতিযোগিতায় ডিজাইনাররা উপস্থাপন করেন তিন ধরনের পোশাক: স্ট্রিট ওয়্যার, ট্রাডিশনাল ওয়্যার ও সাসটেইনেবল ওয়্যার।

বিজ্ঞাপন

হেরিটেজ টু রানওয়ে: দ্য এক্সপেডিশন অব বাংলাদেশি ফ্যাশন

প্যানেল আলোচনায় অতিথিরা
প্যানেল আলোচনায় অতিথিরা

দিনের শেষ পর্বে ছিল বিশেষ প্যানেল আলোচনা। দেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্বরা তরুণদের সঙ্গে ভাগ করেন তাঁদের অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি। হাল ফ্যাশনের কনসালট্যান্ট শেখ সাইফুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা আফজাল হোসেন, ফ্যাশন ডিজাইনার ও ঢাকা কিশের কো-ফাউন্ডার কুহু প্লামন্ডন, কে ক্র্যাফটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও দেশি দশের কো-ফাউন্ডার খালিদ মাহমুদ খান, মাসকো গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার শেখ মামুন ফেরদৌস এবং বুটেক্সের উপাচার্য ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. জুলহাস উদ্দিন। এ আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, বুটেক্সে শিক্ষার্থীরা পোশাকশিল্পের সঙ্গে জড়িত সব বিষয়ে আলাদা কোর্স করার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে তাঁরা ধীরে ধীরে গার্মেন্টস শিল্পের সঙ্গে দক্ষ হয়ে উঠছেন। ফ্যাশন ডিজাইনার কুহু প্লামন্ডন বলেন, ‘বাংলাদেশের ফ্যাশনের রয়েছে এক গৌরবময় ঐতিহ্য—বেনারসি, জামদানি কিংবা সিল্ক এর প্রমাণ। আমাদের উচিত এই ঐতিহ্য থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নতুন সৃষ্টির পথে এগিয়ে যাওয়া, অনুকরণ নয়।’ আলোচনায় অংশ নিয়ে অভিনেতা আফজাল হোসেন বলেন, ‘ফ্যাশন ডিজাইন শুধু চাকরির মাধ্যম নয়, এটি এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে সৃজনশীলতার মাধ্যমে দেশকে কিছু দেওয়া যায়—এটাই সত্যিকারের সাফল্য।’ আলোচনায় কে ক্র্যাফটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর খালিদ মাহমুদ খান বলেন, একসময় ধারণা ছিল ফ্যাশন মূলত শুধু মেয়েদের জন্য এবং খুব ব্যয়বহুল। সেই জায়গা থেকে বর্তমানে ফ্যাশনকে সবার কাছে পৌঁছে দিতে অনেক মানুষের শ্রম রয়েছে। ফ্যাশনের অতীত থেকে বর্তমানের বিবর্তন নিয়ে এ প্রজম্মকে আরও বেশি গবেষণা করা উচিত।   মাসকো গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার শেখ মামুন ফেরদৌস আলোচনা করেন, ‘আমাদের ঐতিহ্যকে আমরা কখনো অস্বীকার করতে পারব না। আমাদের পণ্যকে বিশ্ব মার্কেটে আরও বেশি তুলে ধরতে হবে। বৈশ্বিক ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করে তা আমাদের দেশীয় পণ্য ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাহলেই আমরা বিশ্ববাজারে আমাদের পণ্য নিয়ে টিকে থাকতে পারব। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক শেখ সাইফুর রহমান তরুণদের আহ্বান জানান, বাংলাদেশের পোশাক ঐতিহ্যকে ধরে রেখে নতুন কিছু করার সাহস নিতে।

পুরস্কার ও প্রেরণা

এবারের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী সৈয়দ সায়মুন হক নাইম
এবারের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী সৈয়দ সায়মুন হক নাইম
দ্বিতীয় হয়েছেন এলমা খানম
দ্বিতীয় হয়েছেন এলমা খানম
তৃতীয় স্থান অধিকার করেন রেজওয়ানা রহমান মীম
তৃতীয় স্থান অধিকার করেন রেজওয়ানা রহমান মীম

প্রতিযোগিতায় সেরা তিন হিসেবে জায়গা করে নেন যথাক্রমে সৈয়দ সায়মুন হক নাইম, এলমা খানম ও রেজওয়ানা রহমান মীম। প্রতিযোগিতায় শীর্ষ স্থান অধিকারী পান ৫০ হাজার টাকার চেক এবং বাকি দুজন পান যথাক্রমে ৩০ ও ২০ হাজার টাকার চেক। নতুন প্রজন্মের ফ্যাশন বিপ্লব ‘জেনরা ফ্যাশন ওডিসি ২০২৫’ শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি বাংলাদেশের তরুণ ডিজাইনারদের জন্য ফ্যাশনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। প্রতিটি ডিজাইন যেন ভবিষ্যতের ট্রেন্ডের ইঙ্গিত—যেখানে ঐতিহ্যের গর্ব ও আধুনিকতার দৃষ্টি একসঙ্গে মিশেছে। ফ্যাশন উৎসব উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাস সেজেছিল উৎসবের সাজে—রঙিন ব্যানার, আলোকসজ্জা আর সৃজনশীল স্টল মিলিয়ে যেন এক ফ্যাশন কার্নিভ্যাল। ক্যাম্পাসজুড়ে বসেছিল ১৪টি স্টল, যেখানে প্রদর্শিত হয় কারুশিল্প, টেকসই ফ্যাশনসামগ্রী, স্থানীয় পণ্য ও পিওর ফ্রুট জুস।

উপসংহার

দিনভর অনুষ্ঠানে তরুণদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য
দিনভর অনুষ্ঠানে তরুণদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য

সার্বিকভাবে ‘জেনরা ফ্যাশন ওডিসি ২০২৫’ প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশের তরুণ ডিজাইনাররা ফ্যাশনের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে প্রস্তুত। তাঁদের সৃষ্টিশীলতা, আত্মবিশ্বাস ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাই হবে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার মূল চালিকা শক্তি।

ছবি: হাল ফ্যাশন

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ৩৯
বিজ্ঞাপন