হৈ-হুল্লোড় আর হট্টগোলে মুখরিত হট্টগোল শিশু উৎসব ২০২৫ হয়ে গেল গত সপ্তাহান্তে অর্থাৎ ৩ ও ৪ জানুয়ারিতে। বাবা-মায়ের হাত ধরে উৎসবে দলে দলে এসেছে শিশুরা। শিশুদের জন্য বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, অ্যাক্টিভিটি ও গানের আসরের আয়োজন করা হয়েছে। শিশুরা সোৎসাহে অংশ নিয়েছে তাতে৷ সেই সঙ্গে শিশুদের জন্য শিশুবান্ধব সব পণ্য নিয়ে এখানে ছিলেন উদ্যোক্তারা। সঙ্গে বাবামায়ের কেনাকাটার জন্য উপযোগী পণ্যও দেখা গিয়েছে।
১০টি স্টল বসেছিল এখানে। ছিল খাবার, প্রসাধনী, গয়না, জামাকাপড়, শিশুদের নানা অনুষঙ্গ মিলেছে এসব স্টলে। মেলায় ছিল মাদল শস্য ভান্ডার, দয়ীতা, ফুলবিলাশ, শখের ডিব্বা, আসিফ কিবরিয়া হেল্পলাইন আঁচারি ও দীঘল, মিতুস সিল্ক অ্যান্ডি, এনস কিচেন, মাই লাভিং কিডস, বেবি গুডস, বুনো কাঠ ও ব্রিওনা। আনন্দের সংবাদ হচ্ছে, এই উদ্যোগগুলো অনলাইনে কার্যক্রম পরিচালনা করে সবসময়। তাই মেলা শেষ হলেও তাদের শিশুবান্ধব চমৎকার সব পণ্য পাবেন এই উদ্যোগগুলোর ফেসবুক পেজে।
উৎসব চলাকালীন সময়ে মূল হলে ঢোকার আগেই ফটকের বাইরে চোখে পড়ল মাদল শস্য ভান্ডারের স্টল। বিভিন্ন ধরণের তেল ও রকমারি আচার মিলল তাদের স্টলে। নিমতেল বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও ছিল মোয়া, মুড়কি, পিঠা আর বিভিন্ন ধরণের পুডিং।
এন'স কিচেনে ছিল হাতে তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের পসরা। দুদিন ধরে এখানে ভীড় জমিয়েছেন সবাই তেহারি, চাওমিন, স্যান্ডউইচ, ফ্রায়েড চিকেন খেতে আর চায়ের কাপে চুমুক দিতে।
মেলায় ঢুকে প্রথমেই দেখা গেল 'সিল্ক অ্যান্ডি বাই মিতু'-র স্টল। এখানে বিক্রি হচ্ছিল বাচ্চাদের পোশাক। বাচ্চাদের ঘিরে উৎসব, তাই বাচ্চাদের পোশাক এনেছেন বলে জানালেন উদ্যোগের কর্ণধার মিতু। তাঁর স্টলের সকস ডল বা মোজার পুতুল সবার নজর কেড়েছে। নরম এই পুতুলগুলো বাচ্চারা বেশ পছন্দ করেছে।
এছাড়াও ছিল হাতে তৈরি, রিসাইকলড ফেব্রিকের ক্লিপ। কর্ণধার মিতু জানান, এ পুতুলগুলো তিনি নিজেই ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে তৈরি করেছেন।
শুধু মোজা আর টুকরো কাপড় হলেই পুতুলগুলো তৈরি করা যায়। মেলায় নিয়ে এসেছেন বাচ্চাদের দেখাতে, যাতে চাইলে তারাও বাড়িতে এমন পুতুল তৈরি করতে পারে।
দয়ীতার স্বত্ত্বাধিকারী সাইদা সুলতানা মিলি এবার তাঁর গয়না ও অনুষঙ্গের পাশাপাশি সঙ্গে করে এনেছেন তাঁর কাঠের তৈজসপত্রের উদ্যোগ বুনো কাঠ। তাদের কাটাকাটি খেলার উডেন বোর্ড বেশ নজর কেড়েছে সকলের।
জামদানিতে তৈরি নোটবুকও ছিল। বাচ্চাদের কথা মাথায় রেখে তিনি এনেছেন কিছু স্টিকার, হেয়ারক্লিপ ইত্যাদি।
শিশুদের উপযোগী বিভিন্ন রঙিন গয়নাও তৈরি করেছেন তিনি পাখি ও ফুলের মোটিফ ব্যবহার করে।
শখের ডিব্বায় দেখা গিয়েছে মজার সব পাপেট ও পুতুল। শখের ডিব্বার টয় স্টেশনের পুতুল ও পাপেট শিশুদের কাছে ছিল বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।
নবজাতক শিশুর হাতের ছাপ প্রিন্ট করে ফ্রেমে বাঁধাই করে নেওয়ার ব্যবস্থাও আছে তাঁদের কাছে। শুধু বাচ্চাদের জন্যই নয়, মায়েদের জন্য স্টলের অন্য একটি অংশ বরাদ্দ রেখেছেন তাঁরা। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি ও ব্লাউজ ইত্যাদি।
অনলাইন উদ্যোগ ফুলবিলাশ এই উৎসব উপলক্ষে এসেছে সুদূর সিলেট থেকে। তাঁদের উদ্যোগটি বেশ অভিনব।
উদ্যোগের কর্ণধার শীলা জানান, শিউলি, কদম, বেলি, ড্যাফোডিলের মতো ফুলের আদলে কৃত্রিম খোপার ক্লিপ, গাজরা ও টিয়ারা পাওয়া গিয়েছে এখানে। ছোট কৌটায় তারা বিক্রি করছে আচারও।
শুধু শিশুদের নয়, মায়েদের পোশাক নিয়ে ছিল ব্রিওনার স্টল। নারীদের কর্পোরেট পোশাক পাওয়া যায় তাদের কাছে।
স্বত্ত্বাধিকারী সাদিয়া জানান, তিনি নিজেও একজন মা। আগে অনেক মেলার অংশ হলেও শিশুদের জন্য এমন উদ্যোগের অংশ হতে পেরে তিনি খুশি। তাঁর নিজের সন্তানও এসেছিল এ উৎসবে। এরকম নিরাপদ একটি পরিবেশে শিশুদের খেলা ও সৃজনশীলতা বিকাশের জায়গা করে দেওয়ার প্রশংসা করলেন তিনি।
বেবি গুডসে পাওয়া গিয়েছে ছোট বাচ্চাদের জামাকাপড়। স্টলটিকে তিন ভাগে ভাগ করেছে তারা।
অপরদিকে, মাই লাভিং কিডস নিয়ে এসেছে বাচ্চাদের খেলনার সঙ্গে তাদের রোজকার প্রয়োজনীয় টিফিনবক্স, পানির বোতল, পেন্সিল, ইরেজার, স্লেটসহ আরও অনেক কিছু।
আঁচারির মজার সব আচারের সঙ্গে পরিচিত প্রায় সবাই। এবার মেলায় আঁচারি এনেছে এই মৌসুমের রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকার ফর্মুলা 'আমলক' থেকে শুরু করে মুখরোচক সব আচার ও বালাচাও।
সেই সঙ্গে ছিল দীঘলের নানা ধরনের সিগনেচার অয়েল, পিওর অয়েল, এসেনশিয়াল অয়েল। বেবি হেয়ার অয়েল আর খাঁটি নারকেল তেল ও অলিভ অয়েল আগ্রহ জাগিয়েছে সবার। পাশাপাশি ছিল তাদের কাঠ ও বাঁশের তৈরি চিরুনি।
ছবি: হাল ফ্যাশন