
আলুর মতো জনপ্রিয় ও সর্বজনীন সবজি পুরো পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যায় না৷ আলু ছায়ারা জীবন কল্পনাই করা যায় না। অথচ আলুকে কখনও কেন যেন খুব বিশেষ কিছু ভাবা হয় না। সে ভাবনা থেকেই বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)-এর আয়োজনে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরা (আইসিসিবি) তে


কুড়িলের আইসিসিবির হল নং ১ এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়াজী। পাশাপাশি কোল স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও দেশের কোল্ড-চেইন খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিদের মধ্যে ছিলেন নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হিজ এক্সেলেন্সি জরিস ভ্যান বোমেল, চীনের৷ নুম্বার্গমেস ফিমা এক্সিবিশন ( হাংজাও) কো. লিমিটেড এর প্রতিনিধি এবং জেনারেল ম্যানেজার টনি এলভি। আরও উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক পোষ্টহার্ভেস্ট কনসালট্যান্টসহ বিভিন্ন দেশের শিল্প বিশেষজ্ঞ ও প্রতিনিধিবৃন্দ।

উৎসবে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে আলুর উৎপাদন ও রপ্তানির সম্ভাবনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক কোল্ড-চেইন প্রযুক্তি, মান নিয়ন্ত্রণ, সংরক্ষণব্যবস্থা এবং প্রক্রিয়াজাত আলু শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে এ খাত আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে পৌঁছাতে পারে।
আলু সঞ্চয়, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেজিং, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, কোল্ড স্টোরেজ ম্যানেজমেন্ট, কৃষিযন্ত্রপাতি, সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা, বিপণন কাঠামো এবং রপ্তানি–প্রসারের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রদর্শনীতে বিস্তৃত আলোচনার আয়োজন করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের জন্য রাখা হয়েছে বিটুবি মিটিং, প্রযুক্তি সেমিনার এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক নেটওয়ার্কিং সেশন, যা দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

প্রদর্শনীতে আলু চাষের পর্যায় থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ভ্যালুঅ্যাডেড পণ্য, সংরক্ষণ প্রযুক্তি, প্যাকেজিং উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক বাজারভিত্তিক সমাধানসহ বিভিন্ন ধরনের স্টল স্থান পেয়েছে। মেলার শিল্প পার্টনার হিসেবে রয়েছে কোল্ড স্টোরেজ কমিউনিকেশন।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান জানায়, এ আয়োজনের মাধ্যমে দেশব্যাপী আলু উৎপাদক, সংরক্ষণকারী, রপ্তানিকারক ও বিনিয়োগকারীদের এক ছাদের নিচে এনে আলু শিল্পকে আরও শক্তিশালী করার পথ সৃষ্টি হবে।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, অনেক দর্শনার্থী এসেছেন এই ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন উপভোগ করতে। ব্র্যাক সিড এবং এসিআই-এর প্যাভিলিয়নে দেখা গেলো রপ্তানিযোগ্য নানা জাতের আলু। প্রায় চার বছর ধরে বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এসব আলু উন্নত করা হয়, এরপর কৃষকদের কাছে সরবরাহ করা হয়। কৃষকদের মাঠে উৎপাদিত সেই আলুই পরবর্তীতে বাজারে পৌঁছে যায় ক্রেতাদের হাতে।
স্টলগুলোতে দেখা গেছে গ্রানোলা, লেডি রোজেটা, দেশি, সানশাইন, পটাটো ফেস্টি (আলু ফেস্টি), কার্ডিনাল, জাম আলু, গুটি, অ্যাটলান্টিক, কারেজ এবং ডায়ামান্টসহ নানা জাতের আলু। প্রায় ২৯ জাতের আলু বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রপ্তানি হয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশ আমদানি করে থাকে নেদারল্যান্ডস থেকে বিশেষ জাতের আলু, যা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপস, হ্যাশ ব্রাউনি ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্যাভিলিয়নে দেখা গেলো উদ্যোক্তাদের তৈরি আলুর অভিনব সব খাবার। তার মধ্যে রয়েছে আলুর পায়েস, রসমালাই, হালুয়া, মিষ্টি আলুর কুড়মুড়ি, নকশি পিঠা, কেক, রসগোল্লা, পায়েস, কাপ কেক, কোরমা, আলুর সুজি, ঝাল পুলি, ম্যাশড নুডলস, জিলাপি, আটা-কিসমিস কিমা, শাসলিক, ক্যাসাভা, আলুর সাবুদানা, পাপড়, রেইনবো আলুর পরোটা, এমনকি কালোজামসহ নানা ধরণের সৃজনশীল পদ।

বিক্রমপুর পটেটো ফ্লেক্স ইন্ডাস্ট্রির তৈরি পটেটো ফ্লেক্সের প্রতিও দর্শনার্থীদের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। এমন আয়োজনগুলো আরও ঘন ঘন হলে মানুষ বুঝতে পারবে আলু শুধু খাদ্য নয়, কৃষি থেকে শিল্প সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। রংপুর থেকে মুন্সিগঞ্জ সারা দেশের কৃষকদের জীবিকা গড়ে উঠেছে এই আলুকে কেন্দ্র করে।
ছবি: হাল ফ্যাশন