
সেন্টার পয়েন্ট উত্তরা এখন বাংলাদেশের অন্যতম প্রাণবন্ত শপিং ও বিনোদনকেন্দ্র। দেশি-বিদেশি নানা ব্র্যান্ডের আউটলেট আছে এখানে। সেগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় তলার ছিমছাম ও আকর্ষণীয় একটি দোকানের কথা বলতেই হয়। বাইরে থেকে যেমন, ভেতরটি তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি চিত্তাকর্ষক। বলছি বাংলাদেশের প্রথম ফাইন ফ্র্যাগরেন্স ব্র্যান্ড জোনাকির নতুন আউটলেটের কথা।

পারফিউম, আতর, কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার পণ্যে সাজানো এই দোকান। এখানে পাওয়া যাচ্ছে তাদের পার্লের কিছু জুয়েলারিও। পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ফ্ল্যাগশিপ স্টোরের পর এটি তাদের দ্বিতীয় আউটলেট। দেশের নিজস্ব সৌরভগুলোকে দেশি-বিদেশি মানুষের আরও কাছে পৌঁছে দেওয়াই এই সম্প্রসারণের মূল লক্ষ্য।

১০০ স্কয়ার ফিটের জোনাকির এই নতুন ঠিকানা বেশ ছিমছাম করে সাজানো। অন্দরসজ্জায় কাচের পরিমার্জিত ব্যবহার দোকানটিকে দিয়েছে মিনিমাল ও ওয়াইড লুক। ঝকঝকে গ্লাসে পণ্যের উপস্থাপনাও ক্রেতাদের নজর কাড়বে সহজেই। এককথায় নাসরীন জামিরের মুনশিয়ানায় ছোট জায়গাটি পেয়েছে প্রশস্ত ও প্রাণবন্ত লুক।

জোনাকির এই নতুন আউটলেটে সব কটি সুগন্ধিই পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৯টি ফ্র্যাগরেন্স আছে ব্র্যান্ডটির সংগ্রহে। সবগুলোর প্রেরণা প্রকৃতি। কোনো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সুগন্ধি নকল করে নয়, বরং দেশীয় সৌরভে মাতানো প্রতিটি বোতল।
মেয়েদের জন্য আছে পাঁচটি সৌরভ—নেরোলি ব্লসম, ফ্রেসিয়া নাইটস, ওরিয়েন্টাল জেসমিন, রোজ ব্লুম আর হেভেনলি। আমারেত্তো, স্যান্টাল টাবাক, অ্যাম্বার উড ও ব্ল্যাক নাইট—এই চারটি সৌরভ ছেলেদের জন্য। তবে ‘জয় অব লাইট’ ট্যাগলাইনে জোনাকির শুরুটি হয়েছিল মাত্র পাঁচটি ফ্র্যাগরেন্স রেঞ্জ দিয়ে।

আতরের বড় সংগ্রহ জোনাকির সৌরভ আরও বাড়িয়েছে। জোনাকিতে আছে নূর আল হায়া (গোলাপের সুবাস), রয়্যাল আউদ (মাস্কি, উডি ও স্পাইসির দারুণ সংমিশ্রণ), মুখালাত সুফি (গোলাপ, অ্যাম্বার ও আউদের অভিনব সংমিশ্রণ), মাস্ক মাঘরিবি (উডি ও আর্থি অ্যারমা), আউদ অ্যারাবিয়া (উচ্চমানের আউদ কাঠের সুগন্ধ), মাজমুনা রিগ্যাল (উডি ও আর্থি অ্যারমা) ও শামামা রোজ (উডি ও ফ্লোরাল)। ফুল, ভেষজ, মসলা ও কাঠ থেকে তৈরি এই আতরগুলোর আছে থেরাপিউটিক গুণও। এই আতরগুলোর সুবাস মনকে সতেজ ও প্রফুল্ল করে।

দোলনচাঁপা, গন্ধরাজ, শিউলি, বেলি ও হাসনাহেনা—জোনাকির সিগনেচার সুগন্ধির অনুপ্রেরণা এসেছে দেশের এই পাঁচটি জনপ্রিয় সাদা ফুল থেকে। বাংলাদেশের এই সাদা ফুলগুলোর ঘ্রাণ মোহনীয়। পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন সুগন্ধ পাওয়া দুষ্কর। ফুলের সূক্ষ্ম সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি প্রতিটি সুগন্ধিতে আছে নাসরীন জামিরের শৈশবের স্মৃতি ও আধুনিকতার এক অনন্য মেলবন্ধন।

পারফিউমের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় জোনাকি পণ্যতালিকায় যোগ করেছে কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার। তাদের সংগ্রহে আছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সেমি গ্লস ও ম্যাট লিপস্টিক; সব স্কিন টোনের কমপ্যাক্ট পাউডার, ফাউন্ডেশন ও কনসিলার। আর স্কিনকেয়ার অংশে আছে সানস্ক্রিন, হাইড্রেটিং ও ব্রাইটেনিং লোশন, ফোমিং বাবল ক্লিনজার ও হেয়ার টনিক।

স্বনামখ্যাত বাংলাদেশি ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ও উদ্যোক্তা নাসরীন জামির দুই দশকের বেশি সময় ধরে অসংখ্য আইকনিক স্পেসের ডিজাইন করে আসছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে আছে পাঁচ তারকা হোটেল, বহুজাতিক করপোরেট অফিস, ব্যক্তিগত আবাসন, শোরুম ও রেস্তোরাঁ। ইন্টেরিয়রের পাশাপাশি তিনি ফার্নিচার ও টেক্সটাইল ডিজাইনেও নিজের সৃষ্টিশীলতার স্বাক্ষর রেখেছেন, যা তাঁকে একজন বহুমাত্রিক সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের অভিযাত্রাকে আরও বিস্তৃত করে নাসরীন জামির শুরু করেন ‘জোনাকি’—বাংলাদেশের প্রথম ফাইন ফ্র্যাগরেন্স ব্র্যান্ড। জোনাকি যা আলো, দৃঢ়তা, সাহস ও স্বাধীনতার প্রতীক—এ মূল্যবোধগুলোই ব্র্যান্ডটির দর্শনের মূল ভিত্তি।
জোনাকির মাধ্যমে নাসরীন জামির গড়ে তুলেছেন একটি নিশ লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড, যা সৌন্দর্য, শিল্প, সংস্কৃতি ও পরিচয়কে উদ্যাপন করে। বাংলাদেশের মানুষের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে জোনাকি প্রথমে উদ্বোধন করে তাদের ফ্ল্যাগশিপ স্টোর ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায়; যেখানে অবস্থানগত সুবিধার কারণে আন্তর্জাতিক অতিথি ও বিভিন্ন মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানের দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করা সম্ভব হয়েছে।

ফ্ল্যাগশিপ স্টোরের সাফল্যের পর জোনাকি তাদের দ্বিতীয় স্টোর করেছে সেন্টার পয়েন্ট, উত্তরায়, যা ব্র্যান্ডটির জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। প্রাণবন্ত ও গতিশীল জীবনধারার জন্য পরিচিত উত্তরা ছিল এই সম্প্রসারণের জন্য আদর্শ পছন্দ।
নাসরীন জামির বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই লোকেশন জোনাকিকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সহায়ক হবে এবং আমাদের ব্র্যান্ডের প্রকৃত অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ তৈরি করবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘ইন্টেরিয়র ও ফার্নিচার ডিজাইনের পাশাপাশি আমি সম্পূর্ণ বাংলাদেশি লাইফস্টাইল পণ্য নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের জন্য তৈরি—একটি শক্তিশালী ও স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ।’
ছবি: হাল ফ্যাশন ও জোনাকি