আজরা মাহমুদ ট্যালেন্ট ক্যাম্পের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় এই সংবাদ সম্মেলন। কনিকার মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে শুরু করে বৈশ্বিক মঞ্চে অংশগ্রহণের এই অভিযাত্রাকে সম্পূর্ণভাবে তুলে ধরা হয়। কনিকা খোলামেলাভাবে জানান তাঁর প্রস্তুতির কঠোরতা, আবেগঘন মুহূর্ত আর স্মরণীয় সব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে।
কনিকা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলেন, ‘আমি যখন ওই মঞ্চে পা রাখি, তখন আমি শুধু একজন প্রতিযোগী ছিলাম না— আমি ছিলাম বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধি। প্রতিটি পদক্ষেপ, হাসি, শব্দে আমি আমার জাতির গর্ব বহন করেছি’।
যদিও তিনি বিজয়ীর মুকুট জিততে পারেননি, তবুও কনিকার আচরণ, স্বতঃস্ফূর্ততা আর দৃঢ় উপস্থিতি দেশ-বিদেশের দর্শক ও বিচারকদের মন জয় করেছে। এই প্রতিযোগিতা প্রমাণ করেছে, জয় মানেই কেবল পুরস্কার নয়— জয় মানে আত্মপরিচয়, অধ্যবসায় আর হৃদয়ের শক্তি।
অনুষ্ঠানের প্রাণবন্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। মিস ওয়ার্ল্ড-এ কনিকার অংশগ্রহণকে সম্ভব করে তুলেতে যাঁরা অবদান রেখেছেন তাঁদেরও এই অনুষ্ঠানে স্বীকৃতি জানানো হয়ে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এমবিআইটি (মিস বাংলাদেশ টিম ইন ট্রেনিং)— যাঁরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের প্রস্তুতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। কনিকাকে তৈরি করতে তাঁরাও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেওয়া হয় কনিকার পোশাক পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত প্রধান ফ্যাশন ডিজাইনার মেহরুজ মুনিরকে। এছাড়াও সম্মাননা জানানো হয় অনান্য প্রতিভাবান ডিজাইনার রাইসা আমিন শৈলী, ফারদিন বায়েজিদ, বিশ্বজিৎ ও তৃষাকে; এঁরা কনিকার পোশাক পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কনিকাকে পরিপাটি করে তোলা ক্রিয়েটিভ টিমও। এঁদের মধ্যে ছিলেন ফটোগ্রাফার নাইমুল ইসলাম, সিনেমাটোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান শেখর, এডিটর পলাশ বিশ্বাস এবং কোরিওগ্রাফার আসাদ খান।
কনিকার স্টাইলিস্ট ও ইমেজ আর্কিটেক্ট হিসেবে পুরো সময় ছিলেন এফা তাবাসসুম। তাঁর নিখুঁত পরিকল্পনায় কনিকার প্রতিটি লুক হয়েছে আকর্ষণীয়। কনিকার উপস্থিতির মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের সম্মান ও সাংস্কৃতিক গর্বের অভিব্যক্তিকে প্রতীয়মান করার ঐকান্তিক চেষ্টা করেছেন এফা। এই অনুষ্ঠানে তাঁকেও সম্মানিত করা হয়।
‘এই যাত্রা কখনোই আমার একার ছিল না’, বলেন কনিকা, ‘এই প্রয়াস পূর্ণতা পেয়েছে আমার মেন্টর, সৃজনশীল দল, বন্ধু আর আমার ওপর যাঁরা আস্থা রেখেছেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। আজ আমার এই উপস্থিতিতে বলতে গেলে আপনাদের সবারই প্রতিচ্ছবিই প্রতীয়মান হয়েছে।’
আন্তর্জাতিক মঞ্চের আলো থেকে দেশে ফিরে, এই অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির আয়োজন কেবলই ‘ঘরে ফেরা’ নয়; বরং কোন সন্দেহ নেই, এটা সম্মিলিত স্বপ্নপূরণের উদ্যাপন। কনিকার গল্প আজ বাংলাদেশের তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। আবারও প্রমাণিত হল, লক্ষ, প্রস্তুতি আর আবেগ থাকলে বিশ্বমঞ্চও জয় করা সম্ভব।
মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিরেক্টর আজরা মাহমুদ বলেন, ‘আকলিমার জন্য আমি ভীষণ গর্বিত। তিনি বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মের নারীদের প্রতীক—সাহসী, সহানুভূতিশীল এবং আন্তর্জাতিক মনোভাব-সম্পন্ন’।
এদিন নিজের ভবিষ্যৎ ভাবনার কথাও জানিয়েছেন কনিকা। তিনি বলেন, আমি এখন আমার দুটি প্রকল্প “বিউটি উইথ এ পারপাস’’ এবং “ইয়ং মাইন্ড ম্যাটারস”-এ মনোযোগ দেব। এই দুটি প্রকল্প, তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য ও এর উন্নয়নে কাজ করে থাকে। এই প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে আমি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নানা প্রচারণা চালাব। পাশাপাশি নতুন উদ্যোগও নিব; যাতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চলার পথকে সুগম হতে পারে।
ছবি: আজরা মাহমুদ ট্যালেন্ট ক্যাম্প