এপেক্স বাংলাদেশ ফ্যাশন লেগেসি সামিটের বর্ণাঢ্য ফ্যাশন শো
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ঐতিহ্য, উদ্ভাবন ও টেকসই নির্মাণকে উদ্বুদ্ধ করে দেশীয় ফ্যাশনকে এগিয়ে নিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো রাজধানীর আলোকি কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত হলো এপেক্স বাংলাদেশ ফ্যাশন লেগেসি সামিট ও ফ্যাশন শো। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ ফ্যাশন লেগেসি। দেশ-বিদেশের ফ্যাশন উদ্যোক্তা, ভোক্তা ও অনুরাগীদের একত্র করতে প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি যাত্রা শুরু করেছে। এ আয়োজন সম্পর্কে বাংলাদেশ ফ্যাশন লেগেসির প্রতিষ্ঠাতা আশিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশি ফ্যাশনকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাদের প্রয়োজন আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ডিজাইনারদের সঙ্গে শক্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করা।

সেই উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে বাংলাদেশ ফ্যাশন লেগেসি কাজ করে যাবে। দেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির গতিপথ নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনার পর আমন্ত্রিত দর্শকেরা উপভোগ করেন মনোমুগ্ধকর ফ্যাশন শো। এতে এপেক্সের বিভিন্ন সাবব্র্যান্ড মুচি, নিনো রসি, ভেনচুরিনি আর ম্যাভেরিক ঈদ সামনে রেখে তাদের কালেকশন প্রদর্শন করে। একই সঙ্গে তারা তাদের লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড যেটারিয়ার ঈদ কালেকশনও তুলে ধরে আগতদের সামনে। সব ঋতুতে, যেকোনো উপলক্ষ বা অনুষ্ঠানে পরার উপযোগী অ্যাপেক্সের জুতা। এই ফ্যাশন শোর মাধ্যমে তা-ও তুলে ধরা হয়। পুরো ফ্যাশন শোর প্রতিটি ব্র্যান্ডের পোশাকের সঙ্গেই মডেলরা অ্যাপেক্সের জুতা পরে হাঁটেন।

বিজ্ঞাপন

এপেক্স ছাড়াও চমন চৌধুরী, সানায়া কতুর, লুসো বেলা ও আনযারার মতো ব্র্যান্ডের কালেকশন প্রদর্শিত হয় এখানে। আসিফ তাজউদ্দীন মার্চেন্ট ও মুকেশ কুমার দুবের মতো স্বনামধন্য ভারতীয় ডিজাইনাররাও তাঁদের পোশাক প্রদর্শন করেন এ অনুষ্ঠানে।
ফ্যাশন শোতে সবার প্রথমে কালেকশন প্রদর্শন করে এপেক্সের লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড যেটারিয়া।

তাদের ১০টি পোশাকের ক্যাপসুল সংগ্রহে ছিল নানা ডিজাইনের কুর্তি, কামিজ, কো-অর্ড, আনারকলি ইত্যাদি। ফরমাল ও ক্যাজুয়াল ওয়্যারের আরামদায়ক সংগ্রহটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে কটন, ভিসকস, সিল্ক ও মিক্সড কটন ফেব্রিকস। এর ওপরে বেশি ছিল ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্টের কাজ।

বিজ্ঞাপন

এরপরই ফ্যাশন ডিজাইনার চমন চৌধুরী তাঁর নতুন কালেকশন সোনালি আঁশ প্রদর্শন করেন। এই সংগ্রহে ছিল পাটের সুতা থেকে তৈরি সব ঐতিহ্যবাহী ও ফিউশন পোশাক। এতে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী তাঁত, জামদানি, বেনারসি শাড়িতে পাটের তৈরি বস্তার প্যাচওয়ার্ক দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। শাড়ির সঙ্গে ছিল চট দিয়ে তৈরি ব্লাউজ।

এ ছাড়া পাটের বস্তাকে আপসাইকেল করে গাউন, ছেলেদের ব্লেজার, ভেস্ট, জাম্পস্যুট তৈরি করা হয়েছে। সিকুইন ও বিডসের কাজও ছিল। এই ফ্যাশন কিউয়ের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শিল্পী স্বপ্নীল সজীবের গান, এর তালে তালে মঞ্চে মডেলরা ক্যাটওয়াক করেন। এর আগে ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যশিল্পী এস এম রায়হানুল আলম ও তন্দ্রা।

পরবর্তী ফ্যাশন কিউয়ে বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ি একটি চমৎকার সংগ্রহ তুলে ধরে ফ্যাশন ব্র্যান্ড লুসো বেলা। এই কালেকশনের প্রতিটি শাড়িই ছিল দেখার মতো। সিম্পল ডিজাইনের টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িও যে জমকালোভাবে পরা যেতে পারে, তা এই সংগ্রহ দেখে সবাই বুঝতে পারবেন।


এরপরের ফ্যাশন কিউতে এপেক্সের সাবব্র্যান্ড ভেনচুরিনির প্রি-ঈদ কালেকশন শো করা হয়। উল্লেখ্য, এপেক্সের এই সাবব্র্যান্ডে ছেলেদের আকর্ষণীয় সব জুতা পাওয়া যায়। নতুন এই প্রি-ঈদ কালেকশনে আছে চামড়ার তৈরি লোফার, ক্রস বেল্ট স্যান্ডেল, স্লাইড, ক্রিস-ক্রস স্যান্ডেল। প্রতিটি স্যান্ডেল পাঞ্জাবির সঙ্গে খুব দারুণভাবে মানিয়ে যায়।

পরবর্তী সময়ে পুরুষদের নজরকাড়া সব স্যুট নিয়ে হাজির হয় ফ্যাশন ডিজাইনার আকিব চৌধুরীর ব্র্যান্ড সানায়া কতুর। এই সংগ্রহের নাম উমাব। এতে সিল্ক ও ভেলভেট ফেব্রিকসের স্যুটের ওপর কারচুপি, হ্যান্ড এমব্রয়ডারির কাজ করা হয়েছে। কিছু ব্লেজারে ইক্কাত প্রিন্ট, আবার অনেকগুলোতে সাইড প্লিটেড এক্সটেনশন। স্যুটের সঙ্গে ছিল কারচুপি ও হ্যান্ড এমব্রয়ডারি করা ম্যাচিং বো টাই।

এরপরই ছিল ভারতীয় ফ্যাশন ডিজাইনার মুকেশ দুবের কালেকশন প্রদর্শনী। তাঁর সংগ্রহে আছে খাদির তৈরি ছেলেদের ব্লেজার, কুইল্টেড বেল্ট জ্যাকেট, প্যান্ট, প্রিন্স কোট ইত্যাদি। এ ছাড়া আরও রয়েছে মেয়েদের বিভিন্ন ডিজাইনের সাদা গাউন।

মুকেশ দুবের পরই মঞ্চে বাংলাদেশের জনপ্রিয় লাক্সারি ব্র্যান্ড আনজারা তাদের নতুন সংগ্রহের পোশাক প্রদর্শন করে। এই সংগ্রহে জর্জেট, টিস্যু, অরগাঞ্জা শাড়ির ওপর সিকুইন ও বিডসের কাজ করা হয়েছে। প্রতিটি শাড়ির সঙ্গেই ছিল ইউনিক ডিজাইনের সুন্দর সব ম্যাচিং ব্লাউজ।

এ ছাড়া বিয়ের গাউনও ছিল এই কালেকশনে। গাউনের ওপর ঘন কারচুপির কাজ করা। এই ফ্যাশন কিউতে মডেলদের পাশাপাশি হাঁটেন ফেস অব আনজারা, বারিশা হক। তিনি পরেছেন বিডস ও জরি সুতার কাজ করা হলুদ অরগাঞ্জা শাড়ি। শো-স্টপার হয়েছেন বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ। তিনি পরেছেন ঘন সিকুইনের কাজ করা মিন্ট গ্রিন শাড়ি।

ফ্যাশন শোয়ের একদম শেষ কিউতে পোশাক প্রদর্শন করেন ভারতের স্বনামধন্য ফ্যাশন ডিজাইনার আসিফ মার্চেন্ট। চোখধাঁধানো সব ওয়েস্টার্ন পোশাকের ভরপুর ছিল কালেকশনটি। প্রতিটি পোশাকই বেশ বৈচিত্র্যময় ও আকর্ষণীয়। এই সংগ্রহে ছিল মেয়েদের বিভিন্ন কাট ও প্যাটার্নের গাউন, স্কার্ট, টপস, শ্রাগ ইত্যাদি। ছেলেদের জন্য তিনি তৈরি করেছেন ওয়াইড প্যান্ট, শার্ট, শর্ট পাঞ্জাবি, প্রিন্স কোট ইত্যাদি।  


জুতা তৈরি ও বাজারজাতকারী শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশি কোম্পানি এপেক্স ছিল এই আয়োজনের প্রধান স্পন্সর। এ ছাড়া আয়োজনের সহযোগী হিসেবে ছিল সেরা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। আয়োজনের মেকআপ পার্টনার ছিল অরা বিউটি লাউঞ্জ।  মিডিয়া পার্টনার হাল ফ্যাশন। আতিথেয়তায় হোটেল রেনেসাঁ গুলশান ঢাকা। ফটোগ্রাফি সহায়তায় ছিল প্রত্যয় ফটোগ্রাফি। পাশাপাশি সহযোগী হিসেবে থেকে টেলিপ্রেস মিডিয়াও আয়োজনটিকে সফল করে তুলতে সাহায্য করেছে।

ছবি: অনিক মজুমদার

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩: ৪০
বিজ্ঞাপন