
সাধারণ ভ্রমণের গণ্ডি পেরিয়ে আপনি অন্যতর কিছু উপভোগ করতে চাইলে রিয়াদের কমন গ্রাউন্ড ফেস্টিভ্যাল হবে অনন্য। কারণ, এটা সাংস্কৃতিক ঐক্য ও সৃজনশীলতা প্রকাশের দারুণ এক সুযোগ। এমন উৎসবে অংশ নেওয়ার চেয়ে অনুপ্রেরণামূলক আর কী হতে পারে?
২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে শুরু হয়েছে এই উৎসব, চলবে ৬ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত। এর মধ্য দিয়ে বলা যেতে পারে, রিয়াদে আবার ফিরেছে কমন গ্রাউন্ড ফেস্টিভ্যাল। এখানে সৌদি ও গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ঘটছে; মিস্ক সিটির মালফা হল হয়ে উঠবে অপূর্ব ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য আয়োজনের কেন্দ্র।
এই আসর বস্তুত শিল্প প্রদর্শনী, লাইভ পরিবেশনা, যৌথ সৃজনশীল প্রদর্শন, ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, নান্দনিক নকশা ও বৈচিত্র্যময় খাবারের এক বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক উৎসব। বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, তরুণ পেশাজীবী, শিল্পী ও ভ্রমণপ্রেমীরা পাচ্ছেন সৌদি সংস্কৃতিকে নতুন আলোয় দেখার এবং আধুনিক প্রেক্ষাপটে ঐতিহ্যবাহী শিল্প, সংগীত ও খাবারের নতুন রূপ আবিষ্কারের সুবর্ণ সুযোগ।
এ বছরের কমন গ্রাউন্ড ফেস্টিভ্যালে থাকছে সৌদি ও চীনা নান্দনিকতার মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা অসংখ্য ইন্টারঅ্যাকটিভ শিল্প ও নকশা প্রদর্শনী। দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারবেন আধুনিক শিল্পকর্ম, ডিজিটাল ইনস্টলেশন, সাংস্কৃতিক মোটিফ এবং সীমান্ত পেরোনো নকশাভাবনা, যা দেখাবে কীভাবে দুটি প্রাচীন সভ্যতা আধুনিক বিশ্বে নিজেকে নতুনভাবে প্রকাশ করছে।

চারুকলা, স্থাপত্য, নকশা ও সৃজনশীলতার অনুরাগীদের জন্য এসব প্রদর্শনী হবে অনুপ্রেরণার এক নতুন ভান্ডার। এখানে দেখা যাবে কীভাবে শিল্পীরা সৌদি ঐতিহ্যের জ্যামিতিক নকশা, মরুভূমি-অনুপ্রাণিত রং ও আরবি টাইপোগ্রাফির সঙ্গে চীনা কালি-তুলির আঁচড়, সূক্ষ্ম প্রতীকী ভাবনা ও প্রাকৃতিক দৃশ্যচিত্রের শৈলী মিলিয়ে অভিনব রূপ সৃষ্টি করেছেন।
বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকবে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান গ্লোবাল সেন্টার ফর আরবি ক্যালিগ্রাফির প্যাভিলিয়ন। এখানে দর্শনার্থীরা সরাসরি আরবি ক্যালিগ্রাফির প্রদর্শনী দেখতে পারবেন, বিভিন্ন ঐতিহাসিক লিপিশৈলী সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং বুঝতে পারবেন কীভাবে আরবি ক্যালিগ্রাফি চীনা ক্যালিগ্রাফিসহ অন্যান্য এশীয় শিল্পধারার সঙ্গে পারস্পরিক প্রভাবের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ইসলামি শিল্প, ইতিহাস ও সৃজনশীল অভিব্যক্তিতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের জন্য এটি হবে এক অনন্য শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা।
সংগীতপ্রেমীদের জন্য এবারের উৎসবে থাকছে সৌদি ও চীনের শিল্পীদের এক প্রাণবন্ত পরিবেশনা। সৌদি শিল্পীদের মধ্যে থাকতে পারেন আধুনিক খালিজি পপ ধারার জনপ্রিয় শিল্পী আয়েদ কিংবা আবেগঘন সমসাময়িক সৌদি সংগীতের জন্য পরিচিত আবদুল্লাহ আল-ফারওয়ান। পাশাপাশি আরদাহের মতো ঐতিহ্যবাহী সৌদি লোকনৃত্যের পরিবেশনাও দর্শকদের মুগ্ধ করবে।
চীনের দিক থেকে থাকবে এরহু, পিপা ও গু-চিনের মতো ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সুরে গড়া সংগীতানুষ্ঠান, পাশাপাশি আধুনিক ফিউশন দল, যারা ঐতিহ্যবাহী সুরকে ইলেকট্রনিক বা পপসংগীতের সঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করবে। বিশ্বসংগীত ও বৈচিত্র্যময় ধারার প্রতি আগ্রহী বাংলাদেশি দর্শকদের কাছে এসব পরিবেশনা বিশেষভাবে আকর্ষণীয় হবে।
এই সম্মিলিত আয়োজন উৎসবজুড়ে তৈরি করবে এক প্রাণবন্ত ও বহুজাতিক সাংস্কৃতিক আবহ, যা শিক্ষার্থী, তরুণ পেশাজীবী, কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং লাইভ শো উপভোগকারীদের আকৃষ্ট করবে।

উৎসবের অন্যতম জনপ্রিয় আকর্ষণ হবে হস্তশিল্পের বাজার। এখানে সৌদি আরব ও চীনের শিল্পীদের তৈরি হাতে বানানো নানা পণ্য পাওয়া যাবে—ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প, হাতে বোনা ঝুড়ি, আরবি ক্যালিগ্রাফির শিল্পকর্ম, ধূপদানি, খেজুর ও বিশেষ চা থেকে শুরু করে চীনা সিরামিক, কাগজশিল্প, রেশমি অলংকারসহ নানা আকর্ষণীয় কারুপণ্য।
বাংলাদেশি ভ্রমণকারীরা, যাঁরা ভ্রমণের সময় স্মারক সংগ্রহ করতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য এটি হবে বাণিজ্যিক পণ্যের বাইরে সাংস্কৃতিক স্মৃতিচিহ্ন সংগ্রহের এক চমৎকার সুযোগ। আরবি ক্যালিগ্রাফির দেয়ালচিত্র, হাতে তৈরি গয়না, সৌদি উদের সুগন্ধি, চীনা চায়ের সেট কিংবা নান্দনিক গৃহসজ্জা—সবকিছুই সফরকে করে তুলবে আরও স্মরণীয়।
কমন গ্রাউন্ড ফেস্টিভ্যালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশগুলোর একটি হলো এর খাদ্য অভিজ্ঞতা। ফুড জোনে থাকছে সৌদি ও চীনা রান্নার বাছাইকৃত পদ, যা দুই সংস্কৃতির উষ্ণ আতিথেয়তার প্রতিচ্ছবি।
এখানে উপভোগ করা যাবে সৌদি কাবসা, মুতাব্বাক, আরবি কফি, খেজুর ও আঞ্চলিক মিষ্টান্ন; পাশাপাশি থাকবে চীনা ডাম্পলিং, নুডলস, বিভিন্ন ধরনের ফ্রাইড রাইস, চা পরিবেশনা ও আধুনিক ফিউশন খাবার।
নতুন স্বাদের প্রতি কৌতূহলী বাংলাদেশিদের জন্য এই খাবারের বৈচিত্র্য তৈরি করবে এক আনন্দময় সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা। খাবার যে সংস্কৃতির বন্ধন গড়ে তোলে, কমন গ্রাউন্ড সেই সেতুবন্ধনকেই আরও দৃঢ় করে।
বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য সৌদি ভ্রমণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজ। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ও ভ্রমণসেবার কারণে কমন গ্রাউন্ডের মতো আয়োজন বিদেশি দর্শকদের জন্য নিরাপদ, প্রাণবন্ত ও তারুণ্যবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে।
এই উৎসব বিশেষভাবে চোখ খুলে দেবে তাঁদের জন্য, যাঁরা এখনো সৌদিকে শুধু ঐতিহ্যনির্ভর বা রক্ষণশীল সংস্কৃতির দেশ হিসেবে দেখেন। কমন গ্রাউন্ড সেই ধারণা ভেঙে দিয়ে দেখাবে এক আধুনিক সৌদিকে, যেখানে উদ্ভাবন, বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সমসাময়িক শিল্প একসঙ্গে পথ চলে।
ভিড়ে মিশুন, শিল্প ও সংস্কৃতিতে ডুবে যান, নতুন স্বাদের সন্ধান করুন, আর প্রত্যক্ষ করুন এক রূপান্তরশীল দেশ, যেখানে ঐতিহ্য ও আধুনিকতা হাত ধরাধরি করে এগিয়ে চলে।
কমন গ্রাউন্ড আপনাকেই ডাকছে—এটা এমন একটা জায়গা, যেখানে হৃদয় ও মন মিলিত হয়।
ছবি: সৌদি ট্যুরিজম অথরিটি