বহুদিন পরে আবার জমবে মেলা। জীবন ও জীবিকার চাকা সচল রাখতে আর দেশ গড়তে এ দেশেরই পণ্য নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে চলা এক দল উদ্যমী ও প্রত্যয়ী উদ্যোক্তা এক হয়েছেন 'আনন্দ উঠান' নামের বাৎসরিক আয়োজনের ব্যানারে। ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ধানমন্ডি ২৭-এর মাইডাস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই 'আনন্দ উঠান'। এখানে বৈচিত্র্যময় পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে ৩২টি উদ্যোগ। মেলায় আছে হ্যান্ডলুম, ন্যাচারাল ডাই, ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট ও হাতের কাজের বিভিন্ন পোশাক। সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী জামদানি ও অন্যান্য তাঁতের শাড়ি। পোশাকের পাশাপাশি গয়না, হারবাল প্রসাধনীসহ রয়েছে ঘর সাজানোর নানা আয়োজন। আর সেই সঙ্গে নানা স্বাদের জিবে জল আনা খাবারের উদ্যোগও আছে।
জুলাইয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর আগস্টের শুরুতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন। এরপর নতুন সরকার সব গুছানোর কাজে হাত দিতে না দিতেই দেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা। সব মিলিয়ে দুই মাসে তৈরি হয়েছে চরম স্থবিরতা। এই নেতিবাচক পরিস্থিতির ফলে জমে ওঠা বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠতে আর জীবন ও জীবিকা বাঁচানোর জন্য নতুন উদ্যমে কাজে ফিরতে আয়োজন করা হচ্ছে 'আনন্দ উঠান'। আয়োজক সুপরিচিত ফ্যাশন উদ্যোগ পটের বিবি। আনন্দ উঠানের দ্বিতীয় আসর এটি। এই সময়োপযোগী আয়োজনে অ্যাসোশিয়েট পার্টনার হিসেবে থাকছে হাল ফ্যাশন।
আয়োজক পটের বিবির কর্ণধার ফোয়ারা ফেরদৌস বলেন,'গতবারের মতোই আনন্দঘন, ব্যতিক্রমী ও ছিমছাম আয়োজন হতে যাচ্ছে এবারের আনন্দ উঠানে'। সেই সঙ্গে এই কঠিন সময়ে উদ্যোক্তাদেরকে সব ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকে উঠে আসতে এটি এক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আনন্দ উঠানে অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তা, খাবারের উদ্যোগ এন'স কিচেনের কর্ণধার ফাতেমা আবেদীন নাজলা বললেন,'খুব গুমোট বাতাসের দিন এখন, তাই শুধু কেনাকাটা নয়, একসঙ্গে মিলিত হওয়ার প্রয়াসেই এই আয়োজন। এই দুদিন আমরা হইচই করবো। কে কেমন কাজ করছি সেসব একজন আরেকজনের কাছে তুলে ধরবো। মোট কথা আড্ডা হবে বেশুমার'।
দেশি ব্যাগের উদ্যোগ কালিন্দী-র প্রতিষ্ঠাতা মুনিয়া জামানের বয়ান, 'যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে একবার ছন্দপতন ঘটলে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। উদ্যোক্তাদের জন্য তাই এটা একটা কঠিন সময়। আর এই কঠিনের মাঝে আশার আলোর বার্তা নিয়েই এসেছে আনন্দ উঠান'।
এবারের আনন্দ উঠান-এ অংশগ্রহণ নিয়েছে পটের বিবি, শাড়িকথন,সুতলি, তেরো পার্বণ, ঋ, মল্লিকা, কালিন্দী, দেশী বুনন, গথিয়া, মিথ আর্ট অ্যান্ড ক্রাফটস, পোশাক বাই তাননাস, নয়া,খুঁত, বাঙুরি, আরুনিকা, ক্যানভাস, এনস কিচেন, বিজেন্স, তানিস বাংলাদেশ, আর্টেমিস, অন্দর, বোকা বাক্স, দয়ীতা, রংধনু ক্রিয়েশনস, মিন্ডালা ডট কম, দীঘল, আঁচারি, শখের ডিব্বা, আটকুঠুরি নয় দরজা, সম্পূর্ণা, চিয়ারি শেফ, দিশা’স রোডব্লক আর পৌরাণিক।
পাশাপাশি বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে আছে দুটো ডিক্লাটার কর্নার। এই আয়োজন সন্দেহ নেই নানা চমকে ভরা। আর ক্রেতারাও খুশি অনেকদিন পর এমন এক আয়োজনে।
১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার আনন্দ উঠান তার পসরা শুরু করে। সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের ও ক্রেতাদের ভিড়। বলা যায় উদ্যোক্তাদের হতাশ করেনি ক্রেতারা। বরং বহুদিন পর এমন আনন্দঘন পরিবেশে এক ছাদের তলায় কেনাকাটা করতে আর দেশি পণ্যের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে সবাই আসছেন আনন্দ উঠানে। আর সামনেই শারদীয় দুর্গাপূজা। #আমাদের_পণ্যে_আমাদের_উৎসব_হোক– এটাই সকলের চাওয়া।
ছবি: হাল ফ্যাশন