রাজধানীর বনানী ৫ নম্বর রোডে অবস্থিত স্টুডিও চাঁদনীতে বিজয় দিবস ও শীত উপলক্ষে ১৪, ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিশেষ উইন্টার ফেয়ার। এই প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজন করেছেন স্টুডিও চাঁদনীর অন্যতম স্বত্বাধিকারী স্থপতি ও শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার দিঠি। সহযোগিতায় ছিলেন ফারিয়া ইসলাম আনিশা, সালেকিন সামিন ও থং প্রে ম্রো। এতে অংশগ্রহণ করেছিলেন শহরের সুপরিচিত সৃজনশীল অনলাইনভিত্তিক লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডগুলো।
এদের মধ্যে আছে সুরঞ্জনা, বানাই, ওউন, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, মালবেরি, কার্পাস, কটন রুটস, ক্যান্ডেল এন্ড কোং, ম্যাঁও, পরিভ্রমণ, টোটনেস, স্পোরকেস, ডিওয়াইয়ার, ঢাকা–১২০৭। এই ব্র্যান্ডগুলো মেলায় সব দেশীয় আর হাতে তৈরি আকর্ষণীয় সব পণ্য প্রদর্শন করেছেন।
এই বিশেষ মেলা নিয়ে হাল ফ্যাশনের সঙ্গে কথা হয় চাঁদনী স্টুডিওর অন্যতম স্বত্বাধিকারী পাপিয়া সারোয়ার দিঠির। তিনি জানান, বনানীর ২ নং-এ আমাদের পুরোনো বাসায় আগে প্রতিদিন ঢাকার স্থপতি ও শিল্পী কমিউনিটির কিছু কাছের মানুষ মিলে বেশ গল্পগুজব করতাম। সেখানে আসা প্রায় সবাই চাকরিজীবী। আমাদের আড্ডার মূল বিষয় ছিল নিজেদের সৃজনশীল কাজ। আড্ডার মধ্য দিয়ে আমরা অনেক আইডিয়া শেয়ার করতাম।
এরপর যখন ৫ নম্বর রোডে এই বড় বাসায় এলাম, তখন চিন্তা করলাম, আগে যেই আইডিয়া শেয়ারিংয়ের কাজটা ইনফরমালি করা হতো, সেটা কেন এখন ফরমালি করছি না? সেই চিন্তা থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে আমি ও স্বামী স্থপতি ও শিল্পী নাজেম আনোয়ার মিলে চাঁদনী স্টুডিও চালু করি। এখানে আমরা সৃজনশীল ব্যক্তি বা উদ্যোক্তাদের কাজ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছি। এই মেলাটিও সেভাবেই আয়োজন করা হয়। যারা একদম নবীন অনলাইনভিত্তিক ব্র্যান্ড, তারাই এই মেলার মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে তাদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে এই মেলায় নাজেম আনোয়ারের ক্যালিগ্রাফি ও দিঠির উদ্যোগ বানাই-এর পণ্য প্রদর্শিত হয়েছে।
আকর্ষণীয় সব ফ্যাশনেবল পোশাক রয়েছে সুরঞ্জনা ও কটন রুটসের স্টলে। দেশি কাপড়ের পোশাকের সম্ভার নিয়ে রয়েছে সুরঞ্জনা। এ উদ্যোগের প্রাণভোমরা নূর নাহার তৃপ্তি। আর সানজিদা হক সারার উদ্যোগ কটন রুটস। এ দুটি উদ্যোগের পসরায় দেশি শাড়ির সমারোহ রয়েছে ভরপুর। সুতি, খাদি সিল্ক, কোরা, সেমি মসলিনসহ বিভিন্ন ফেব্রিকের ওপরে চমৎকার কাজ করেছেন তাঁরা এবারের সংগ্রহ সাজাতে।
মেলায় উপস্থিত একটি নবীন উদ্যোগ হলো ম্যাঁও। ম্যাঁওয়ের স্বত্বাধিকারী তাসলিমা হোসেন নদী দেশের একজন সুপরিচিত অভিনেত্রী ও মডেল। এ ছাড়া তিনি জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির একজন সোশ্যালাইজার বা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কর্মরত। খুব বেশি দিন হয়নি তিনি তাঁর স্বপ্নের ব্র্যান্ড ম্যাঁও শুরু করেছেন। এখানে পাওয়া যাচ্ছে দেশীয় তাঁতে বোনা সুতি কাপড়ের কুর্তি, ক্রপ টপ, কামিজ। এরপর আছে এমব্রয়ডারি ও কাঠব্লকের প্রিন্ট। মেলায় তাঁর পণ্যের বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে দেখে তিনি বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন।
এখানে আরও উপস্থিত ছিলেন তানজিনা ইউসুফ। তাঁর উদ্যোগের নাম ওউন। এখানে পাওয়া যাচ্ছে অন্তর্বাস ও রাতপোশাক। তানজিনা ইউসুফ নিজে এই ভিন্নধর্মী পণ্যগুলো ডিজাইন করেছেন। অনলাইনভিত্তিক এই উদ্যোগ ২০১৭ সালে শুরু হলেও এবার প্রথম কোনো পাবলিক ইভেন্টে ওউনের পণ্য প্রদর্শিত হলো। ডিজাইনার আন্ডারগার্মেন্টসগুলো বিক্রিও হয়েছে অনেক। তানজিনা ইউসুফ জানান, প্রথমবারের মতো এমন একটি মেলায় অংশ নিতে পেরে আমি বেশ আনন্দিত। এখানে এসে অনেক উদ্যোক্তা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের চাহিদা সম্পর্কে জানতে পেরেছি।
ভবিষ্যতে পণ্য ডিজাইন বা তৈরি করতে এগুলো বেশ কাজে লাগবে।
মেলায় প্রদর্শিত পণ্যের একটি বৈশিষ্ট্য হলো সাসটেইনেবিলিটি। এখানে থ্রিফট পোশাক নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সুজানা কাশফিয়া। তাঁর উদ্যোগ মালবেরি ক্লদিংয়ে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের পুরোনো সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাক। এ ছাড়া পরিভ্রমণ নিয়ে এসেছেন তামিম। তিনি পুরোনো জিনিসের ওপর রংতুলির আঁচড় কেটে তৈরি করেছেন সুন্দর সব ঘর সাজানোর পণ্য। এ ছাড়া সুতা, ফেলে দেওয়া কাঠ দিয়ে বানানো নানা ডিজাইনের গয়নাও ছিল সেখানে। তামিম জানান, পরিভ্রমণে চাইলে যে কেউ অর্ডার দিয়ে জামাকাপড়ের ওপর হ্যান্ডপেইন্ট করাতে পারবেন।
টোটনেসে ছিল ইউনিক ডিজাইনের নজরকাড়া সব টোট ব্যাগ। এদিকে বিস্কুটদার বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে ছিল রিকশা পেইন্ট করা সানগ্লাসসহ আরও অনেক কিছু। ঘর সাজানোর জন্য সুন্দর, স্নিগ্ধ ডিজাইনের মোমবাতি ছিল ক্যান্ডেল এন্ড কোং-এ। এ ছাড়া মেলায় বেসপোক স্টেশনারি আইটেম নিয়ে এসেছিল ডিওয়াইয়ার।
পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি এই মেলায় ছিল ট্রানসেন্ডেন্টাল মেডিটেশনের ফ্রি ইন্ট্রো সেশন, যা পরিচালনা করেছেন তরিক রহমান ও আনিসুর রহমান। এ ছাড়া আরও ছিল গান, বাঁশির সুর, পিঠা পুলি, মুখরোচক বিভিন্ন খাবারের সুব্যবস্থা। সব মিলিয়ে ভিন্ন আমেজের ঘরোয়া পরিবেশের বিশেষ উইন্টার ফেয়ারটি দর্শনার্থীরা বেশ ভালোই উপভোগ করেছেন।