
আকর্ষণীয় সজ্জা ও আলোকসজ্জা আর ক্রিসমাস ট্রির ঝলমলে উপস্থিতিতে
বছরের প্রান্তে এসে ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলগুলো হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। সান্তা ক্লজের আগমন, লাইভ মিউজিক, ক্যারল পরিবেশন এবং বিশেষ ক্রিসমাস বুফে—সব মিলিয়ে অতিথিদের জন্য হয়ে থাকে আনন্দঘন এক অভিজ্ঞতা। অনেকেই সপরিবার ও সবান্ধব অংশ হন এই বিশেষ আয়োজনে; যেখানে বড়দিনের ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশাপাশি থাকে নানা আন্তর্জাতিক পদ। বড়দিনের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলগুলো হয়ে ওঠে আনন্দময়।

ঢাকার সবচেয়ে পুরোনো পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা
যেকোনো উৎসবেই থাকে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ক্রিসমাস ক্যারলের মাধ্যমে শুরু হয় বড়দিনের আয়োজন। ক্রিসমাসের চিরচেনা সুরে অতিথিরা একে অপরের সঙ্গে বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। শিশুদের উপস্থিতিতে শেফদের হাতে তৈরি বিশাল ক্রিসমাস কেক কাটার মধ্য দিয়ে রং ধরে উৎসবে। ইন্টারকন্টিনেন্টালের লবি এমনিতেই অতিথিদের মুগ্ধ করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বড়দিনের বর্ণময় সাজসজ্জা, যা পুরো পরিবেশকে করে তোলে সেলফিপ্রেমীদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ।

ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার ডিরেক্টর অব ফুড অ্যান্ড বেভারেজ অলিভিয়ে লোরো বলেন, বড়দিন সবার উৎসব। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই এই উৎসবে অংশ
নিতে আসেন, তাই আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে যেন আতিথেয়তায় কোনো ঘাটতি না থাকে।
ডিরেক্টর অব মার্কেটিং সাদমান সালাউদ্দিন জানান, যেকোনো উৎসবেই
আমাদের লক্ষ্য থাকে যেন সাশ্রয়ী মূল্যে সব শ্রেণির মানুষ পাঁচ তারকা মানের খাবার ও সেবাগুলো উপভোগ করতে পারেন। সে কারণেই বিভিন্ন ব্যাংক কার্ডের বিশেষ অফার রাখা হয়।
এবারের আয়োজনে বড়দিনের সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ছিল ‘ক্রিসমাস
কিডস ওয়ান্ডারল্যান্ড’। পাশাপাশি নিচতলার এলিমেন্টস রেস্তোরাঁয় বুফে ডিনার, অ্যাম্বার রুমে ফোর কোর্স ডিনার এবং পুলসাইড আর্থডেক রেস্তোরাঁয় বারবিকিউ ডিনারের আয়োজন করা হয়েছে, যা ডিসেম্বরের পুরো সময় চলবে।

রাজধানীর অভিজাত এলাকার এই হোটেলটি শুরু থেকেই যেকোনো আয়োজনে
অতিথিদের টানে। সুস্বাদু খাবারের জন্য সুনাম আছে ওয়েস্টিনের। এবার বড়দিনের সকাল থেকে প্রতিবছরের মতো শিশু ও অভিভাবকদের জন্য ছিল ক্রিসমাস কিডস কার্নিভ্যালের বর্ণাঢ্য আয়োজন। বাউন্সিং ক্যাসেল, এয়ার বেলুন, ইন্টারঅ্যাকটিভ গেম, লাইভ ম্যাজিক শো ও পাপেট শোর পাশাপাশি ছিল রিং টস, টিক-ট্যাক-টো, ইগলু হাউস, জাম্পিং ক্যাসল, প্লেহাউস, মিনি ট্রেন, ফটো বুথ ও বলহাউস। মায়েদের জন্য ছিল পিলো পাসিং। এ আয়োজনে বিজয়ী পেয়েছেন ঢাকা–কক্সবাজার–ঢাকার এয়ার টিকিট।

ওয়েস্টিন ঢাকা ও শেরাটন ঢাকার জনসংযোগ প্রধান তুহিনুর সুলতানা বলেন, দুটি হোটেলের সব স্টাফ সারা বছর অপেক্ষা করেন ক্রিসমাসের এই সময়টার জন্য। প্রাণবন্ত আয়োজনে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। এ আয়োজন ছাড়াও ওয়েস্টিনের সিজনাল টেস্টস রেস্টুরেন্টে নির্বাচিত পার্টনারদের সঙ্গে আছে বাই ওয়ান গেট থ্রি, বাই ওয়ান গেট টু ও বাই ওয়ান গেট ওয়ান অফার।
এ ছাড়া ক্রিসমাস ইভ ডিনার, ক্রিসমাস ব্রাঞ্চ ও ডিনার, স্প্ল্যাশে ক্রিসমাস বারবিকিউ নাইট, প্রেগোতে স্পেশাল সিক্স কোর্স সেট মেনু এবং ডেইলি ট্রিটসে পুরো ডিসেম্বরে থাকবে ক্রিসমাস থিমের বিশেষ মিষ্টি ও মৌসুমি খাবারের আয়োজন।

ক্রিসমাস গ্র্যান্ড পার্টির আমেজ নিয়ে দুপুর থেকেই শুরু হয় শেরাটন ঢাকার বিশেষ আয়োজন। হোটেলের বিশাল বলরুমে ঢুকতেই মনে হলো যেন একটি রঙিন অ্যামিউজমেন্ট পার্কে এসে পড়েছি। সার্কাস, বায়োস্কোপ, মেরি গো রাউন্ড, জাম্পিং ক্যাসেল, মজার জংলি ঘটক পাপেট, সার্কাস সাইকেল, পপকর্ন ও ক্যান্ডি ফ্লস—কিসেরই–বা অভাব ছিল এখানে! আয়োজনের ঠিক মাঝখানে ছিল সাদা ও রুপালি থিমের একটি শামিয়ানা, যা পুরো পরিবেশকে আরও দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। শিশুদের জন্য ছবি আঁকা ও কাপ কেক ডেকোরেশনের মতো সৃজনশীল খেলাধুলাও ছিল আলাদা আকর্ষণ। বাচ্চাদের মায়েদের জন্য অরা ডায়মন্ড জুয়েলারির পক্ষ থেকে ছিল ৫০০ টাকার ডিসকাউন্ট ভাউচার এবং ডায়মন্ডের রিং জেতার সুযোগ। পাশেই উদ্যোক্তাদের জন্য রাখা হয় একটি বিশেষ কর্নার, যেখানে মুন স্কিন, পয়সালা, বেনি বুনন ও কারুজের মতো বেশ কয়েকটি স্টল ছিল। এর মধ্যে মুন স্কিনের নতুন দেশি পারফিউম ব্র্যান্ডটি দর্শনার্থীদের বিশেষ আগ্রহ কাড়ে। ভায়োলেট সান, ওয়াইল্ড ব্লসম ও ওয়াইল্ড পাইনউডের মতো সুগন্ধিগুলো ছিল বেশ মোহনীয়।
শেরাটনের অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্কেটিং কমিউনিকেশন ম্যানেজার সাদিয়া সারা জানান, ওয়েস্টিন ও শেরাটনের এ আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করছে মিনিসো, ব্যাংক এশিয়া
ও নভোএয়ারের মতো প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি ক্রিসমাস ডিনার বুফে ও ব্রাঞ্চের আয়োজন চলবে শনিবার পর্যন্ত।

হলিডে ইনের ক্রিসমাসে বিশেষ ডিনার ছিল জমজমাট। পুরো অলটিটিউড
রেস্তোরাঁ কানায় কানায় পূর্ণ ছিল অতিথিতে। সুস্বাদু টার্কির ম–ম করা সুগন্ধে ভরে উঠেছিল পুরো রেস্তোরাঁ। ডাক বান, পাম্পকিন স্যুপ, অ্যাপল সিনামন টি, স্টেক ও ক্রিসমাস কেকের স্বাদ যেমন ছিল, তেমনি পরিবেশনেও ছিল চোখের আরাম।

বিশেষ আকর্ষণ ছিল স্টাফড হোল রোস্টেড টার্কি। এর পাশাপাশি বিফ ওয়েলিংটন, ব্রেইজড ল্যাম্ব শ্যাংক, চিকেন রুলাড ও বারবিকিউ বিফ শর্ট রিবস পুরো আয়োজনকে
এনে দেয় একেবারে অথেন্টিক ক্রিসমাস ডিনারের স্বাদ। এ উৎসব ঘিরে হোটেল লবিও সাজানো হয়েছে অত্যন্ত নান্দনিকভাবে। উল্লেখ্য, এই বিশেষ ক্রিসমাস বুফের আয়োজন চলবে আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত।
ছবি: হাল ফ্যাশন