খুঁতের বাড়িতে চলছে অপার বাংলা মেলা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

দুই বাংলার এক ঝাঁক ফ্যাশন উদ্যোক্তার অংশগ্রহণে ঢাকায় সুপরিচিত বুটিক খুঁতের বাড়িতে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী অপার বাংলা মেলা। ঘুরে এসে জানাচ্ছেন ফাতেমা তাসনিম।

বিজ্ঞাপন

দেশীয় বুটিক খুঁতের বাড়িতে আবার বসেছে অপার বাংলা মেলা। বাংলাদেশে এই মেলার দ্বিতীয় আয়োজন এটি। গত বছর ২০২৩ সালে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় প্রথমবারের মতো হয়েছিল এই মেলা। এপার ও ওপার বাংলার মেলবন্ধনে এই আয়োজনের নাম অপার বাংলা মেলা। এখানে দুই বাংলা মিলিয়ে মোট ১৯ উদ্যোক্তা সাজিয়ে বসেছেন তাঁদের সৃজনশীল পণ্যের পসরা। মেলা চলবে ২৩ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি, বেলা এগারোটা থেকে রাত আটটা অবধি।

অপার বাংলা মেলার স্বপ্নদ্রষ্টারা হলেন খুঁতের স্বত্বাধিকারী উর্মিলা শুক্লা ও কলকাতার দিলীপ মজুমদার। উর্মিলা শুক্লা জানান, প্রথমবার খুঁতের বাড়িতে বেড়াতে এসে দাদার (দিলীপ মজুমদার) মাথায় অপার বাংলা মেলার বুদ্ধিটা আসে। কলকাতায় এর আগে বেশ কয়েকবার অপার বাংলা মেলার আয়োজন করেছি। প্রতিবারই মানুষের অসম্ভব ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি। তবে বাংলাদেশে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার হচ্ছে এই আয়োজন। দিলীপ মজুমদার বলেন, ‘দুই বাংলার মানুষ মিলে আনন্দ করব ভেবেই ২০১৮ সালে প্রথম কলকাতায় মেলার আয়োজন করি আমরা। মেলাতে এবার আছে আরুণিকা, পৌরাণিক, ঋ, দীঘল, আচারি, মিথ আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফটস, তাশা, বিনোদিনী, আর্টোপলিস, যথাশিল্প, বয়ন বিতান, সুতন্তু, সুতলি, মায়ের রসুই, শায়ানের পাকশালা, সারানা, সুপ্রভা আর্ট অ্যান্ড বুটিক, ট্রেজার ট্রাংক-দ্য আর্ট স্টুডিও ও ক্রাফটনামা।

বিজ্ঞাপন

প্রথম দিকে ঘরোয়া আমেজেই শুরু হয়েছিল অপার বাংলা মেলা। তবে এখন সেই ছোট্ট উদ্যোগ মেলেছে ডালপালা। ১৯ উদ্যোক্তার মধ্যে অবশ্য বেশির ভাগই বাংলাদেশের। রয়েছে কলকাতা থেকে আগত ক্র্যাফট নামা, সুপ্রভা বুটিকস ও ট্রেজার ট্রাংক-দ্য আর্ট স্টুডিও। উদ্যোক্তাদের নানা রকম পণ্যের মধ্যে হাতে তৈরি গয়না, ব্যাগ, তৈজসপত্র, টিপ, ভেষজ তেল, খাবার, স্টেশনারি পণ্য থেকে শুরু করে প্রায় সবই পাওয়া যাচ্ছে। মেলার এক কোণে দেখা মিলল ক্র্যাফট নামার স্বত্বাধিকারী দেবাশীষ নন্দীর। তিনি জানালেন মেলায় এসে তাঁর ভালো লাগার কথা। তাঁর পণ্যের মধ্যে আছে কাঠ ও অন্যান্য ম্যাটেরিয়ালে তৈরি তৈজসপত্র। আছে হাতে তৈরি ব্যাগও।

ঠিক এর পাশেই বসেছে বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন উদ্যোগ তাশার পসরা। স্বত্বাধিকারী তাশা জানালেন, তাঁর বেস্টসেলার পণ্য চুড়ি নিয়ে হাজির হয়েছেন তিনি। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে মেলায় পাওয়া যাচ্ছে তাঁর গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে তৈরি চতুষ্কোণ চুড়ি! সাধারণত কাপড়, কড়ি, মুদ্রা, ঝুনঝুনি এসব দিয়েই চুড়ি তৈরি করেন তিনি।

মেলায় পাশাপাশি বসেছে গয়নার দোকান মিথ আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস আর টিপের দোকান আর্টোপলিস। মিথ আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটসের কর্ণধার পৃথিলা জানালেন, এখানে পাওয়া যাচ্ছে গামছা, রাজশাহী সিল্ক, জামদানি আর টাই-ডাইয়ের মতো দেশীয় ফেব্রিকে সম্পূর্ণ হাতে তৈরি গয়না। আর্টোপলিসের স্বত্বাধিকারী সুমাইয়া সায়েদ বলেন, পরিবেশবান্ধব রঙিন ফেল্ট ফেব্রিক দিয়ে টিপ আর গয়না বানান তিনি। বানিয়েছেন মাছরাঙা, বুদ্ধের মাথা, প্যাঁচার মোটিফে অভিনব সব টিপ। ফেব্রুয়ারি মাস চলছে বলে তৈরি করেছেন অক্ষর টিপও।

আরুণিকায় রয়েছে স্টেশনারি ও ঘর সাজানোর জিনিস। দীঘল মেলায় নিয়ে এসেছে তাদের সিগনেচার ভেষজ উপকরণের সমন্বয়ে তৈরি তেল। সহপ্রতিষ্ঠান আচারিতে আছে প্রায় ১৮ ধরণের মুখরোচক আচার ও বালাচাও। তবে তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় আইটেম তেঁতুলের মোরব্বা, যাকে আদর করে নাম দেওয়া হয়েছে তিন্তিরি।

বোলপুর শান্তিনিকেতন থেকে এসেছেন সুপ্রভা। তিনি প্রথমবারের মতো মেলায় এসে খুবই উচ্ছ্বসিত। তাঁর উদ্যোগের নাম সুপ্রভা আর্ট অ্যান্ড বুটিক। তাঁদের সংগ্রহে আছে আসামের মেখলা শাড়ি। তবে শাড়িকে একটু ওয়েস্টার্ন লুক দিতে চেয়েছেন তিনি। ধনেখালি শাড়ির পাড় কেটে তা দিয়ে করেছেন কুর্তির নকশা। গামছা আর খাদি কাপড় মিলিয়ে তাঁর উদ্যোগের বেশির ভাগ পোশাকগুলো নকশা করা হয়েছে। সবার কথা মাথায় রেখে দামও রেখেছেন নাগালের মধ্যেই।

কলকাতার মিমসীর ট্রেজার ট্রাংক-দ্য আর্ট স্টুডিওর গয়নাগুলো থেকে চোখ ফেরানো দায়। ব্রাস মেটাল, সিলভারের রেপ্লিকার মিশেলে এসব গয়না তৈরি। বাংলাদেশের উদ্যোগ বিনোদিনী সাজিয়ে বসেছে বিভিন্ন ধরণের শাড়ির পসরা। রঙিন সব টিপ ও পলা নিয়ে আছেন সারানার নওরিন আক্তার। তিনি জানান, নানা আকৃতির টিপগুলোই সারানার বিশেষত্ব। আলতা ও কুমকুমেরও দেখা মিলছে তাঁর স্টলে।

খুঁতের বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ে মরিচবাতি জ্বালিয়ে অভিনব কায়দায় সাজানো গয়নার উদ্যোগ ঋ। ঋ নাকি এসেছে ঋতু থেকে! বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন বীজ সংগ্রহ করে তা দিয়ে গয়না বানান তাঁরা। এসব বীজ সংগ্রহ করা হয় শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ থেকে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ম্রোং সম্প্রদায়ের কারিগরদের তৈরি গয়নাও আছে এখানে। জানা গেল, গয়না বিক্রির পর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গিয়ে পৌঁছাবে তাঁদের হাতে।

ঢুকেই হাতের ঠিক ডানে লোভনীয় সব খাবার নিয়ে আছে শায়ানের পাকশালা। মিষ্টিজাতীয় খাবারই বেশি। তবে দুপুরের জন্য বরাদ্দ ছিল খিচুড়ি  ও হাঁসের মাংস। মজাদার ঝালমুড়ি ও ভেলপুরিও পাওয়া যাচ্ছে এই দোকানে। আমাদের অপার বাংলা শুধু মেলা নয়। এ এক গান ও আড্ডার আসর—বললেন খুঁতের নকশাকার ফারহানা হামিদ।  ২৪ আর ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর আড্ডা জমাতে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন আপনিও। আর সারা দিন পণ্য দেখেশুনে কেনার সুযোগ তো আছেই।

খুঁতের বাড়ির ঠিকানা - বাড়ি ৩৬, রোড ৯/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৭।

ছবি: শাহরিয়ার নাহিন

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১: ৪১
বিজ্ঞাপন