অনেকসময় এমন হয়,অনলাইনে পছন্দের শাড়ি অর্ডার করলেন কেউ। কিন্তু সেটা পেতে সময় লাগবে দুদিনেরও বেশি। কিন্তু আপনার লাগবে আজকালের মধ্যেই। কিংবা গয়না কিনতে হবে, ভরসা পাচ্ছেন না অনলাইনে অর্ডার করতে। যদি ভালো না লাগে কেনার পর! এমন নানা জটিলতায় প্রায়ই পড়তে হয় আমাদেরকে । তবে সবকিছুরই সমাধান আছে। কেমন হয় বলুনতো এক ছাদের নিচে যদি পাওয়া যায় পছন্দের সব পণ্য! নিজের হাতে ছুঁয়ে , দেখে তারপর যেকোনো কিছু কেনার তৃপ্তিই আসলে অন্যরকম । এই সবকিছুর কথা ভেবে দেশিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড খুঁত, ধানমন্ডি সাতের ১৫ নাম্বার বাড়িতে হাটকাহন শীর্ষক মেলার পসরা সাজিয়েছে। প্রতিমাসেই হবে এই মেলা ।
খুঁতসহ আরও ৩০ টির বেশি দেশি উদ্যোগ আছে এখানে । নানা ধরনের গয়না থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর পণ্য , শাড়ি , ব্লাউজ, টিশার্ট , তেল, আচার, ব্যাগ , হাতে তৈরি শুকনা খাবার, কী নেই এখানে!
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক পোশাকের গল্প। হাটকাহনে ঢুকতে শুরুতেই আছে দিশাজ রোড ব্লকস কর্নার । এখানে আপনি ব্যতিক্রমী নকশার ব্লক করা নানা মোটিফের কুর্তি পেয়ে যাবেন ।
এছাড়া আছে তাদের সাড়া জাগানো সব ডিজিটাল প্রিন্টের কাপড়। রেডিমেড কুর্তির জন্য ৩৮ ও ৪৪ এই দুই সাইজ দেওয়া আছে। সাইজ না জানা থাকলে ট্রায়াল দিয়ে দেখে নিতে পারেন আর কাস্টমাইজড অর্ডারও দিতে পারবেন। শুধু রেডিমেড কুর্তি না, চাইলে নিতে পারবেন গজ কাপড়ও। সেই সঙ্গে রয়েছে তাদের সিগনেচার ব্লকের সব শাড়ি।
হাটকাহনে আরেক ফ্যাশন ব্র্যান্ড বিনোদিনী বসেছে তাদের সিগনেচার শাড়ির পসরা সাজিয়ে। বাংলাদেশের তাঁতে তৈরি শাড়িতে বিভিন্ন প্যাটার্ন নিয়ে কাজ করছেন তারা। আর সবচেয়ে বেশি মন কাড়বে শাড়িগুলোর রং। প্যাস্টেল শেড নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন ব্র্যান্ডটির স্বত্বাধিকারী নাইমা জামান। তবে যেকোনো উৎসবের জন্য কিছু উজ্জ্বল রঙের শাড়িও আছে। ব্লাউজও মিলবে এখানে শারির সঙ্গে মিলিয়ে পরার জন্য।
হাটকাহনের প্রাণ বাংলাদেশের সুপরিচিত ফ্যাশন ব্র্যান্ড খুঁত । খুঁতের সিগনেচার শাড়ি , ব্লাউজ পিস আর গয়না আছে এখানে । তবে শাড়ির উপর চলছে ১৫ শতাংশ ছাড় ।
তেরো পার্বণ এর কর্নারে আছে নানা কাটিং ব্লাউজ ছাড়াও শাড়ি। এরমধ্যে কুরুশকাঁটার লেস বসানো শাড়ি ছাড়াও আছে টাইডাই ও প্যাচওয়ার্কের শাড়ি ।
অন্যদিকে শাড়িকথনে পাওয়া যাচ্ছে পাট ও ডেনিমের পাড়ের ডাই করা তাঁতের শাড়ি। এ দুটিকে তদের সিগনেচার পণ্য বলা যায়।
আবার খুম এ আছে সিল্ক ও সুতি শাড়িতে নানা ধরনের লিপিমালা ও মোটিফে ভরা শাড়ি। পোশাক ও গয়নার উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা ব্র্যান্ড অণূভাস এর কর্নারে আছে নানা ট্রেন্ডি কাটিং ও নকশার ব্লাউজ ছাড়াও রূপার নাকছাবি ও দুলের মতো গয়না।
অপরিচিতা ব্র্যান্ডের কর্নারে আছে ব্লাউজ, টপস , কুর্তি । গামছা ফেব্রিক আর প্রিন্টেড ও কলমকারী নকশার ফেব্রিকে তৈরি এই পোশাকগুলোর ডিজাইন সত্যিই চোখে পড়ার মতো ।
টোট ব্যাগ আর টি শার্টও আছে হাটকাহনে। এরজন্য ঢুঁ মারতে হবে এম আর ক্রিয়েশনের কর্নারে । বাচ্চাদের চমৎকার সব পোশাকের উদ্যোগ শিশু পরিবহন । জামা , শার্ট , ফ্রক , ধুতি,পাঞ্জাবি সবই আছে এখানে ।
শুধু পোশাক নয়, সুন্দর হতে হবে কেশরাজিও। সেজন্য দীঘলের স্টলে রয়েছে ভেষজ তেল। দীঘল মূলত কাজ করে অরগানিক পণ্য নিয়ে। দেশিয় নানা ধরনের বীজের তেল তাঁদের সিগনেচার পণ্য । কোন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার না করে, গবেষণার অনেকগুলো ধাপ পার করে তারপর বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয় এই তেল।
ব্র্যান্ডটি সম্প্রতি নতুন কিছু পণ্য যোগ করেছে। বড়দের জন্য তো নানা ধরনের তেল রয়েছেই , সেই সঙ্গে শিশুদের জন্যও সাত ধরনের তেল ও নিজস্ব ফর্মুলার হার্বস দিয়ে আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছে বেবি হেয়ার অয়েল। আছে ছেলেদের দাঁড়ির জন্য বিশেষ বিয়ার্ড অয়েল । এসেন্সিয়াল অয়েলের মধ্যে রোজ হিপ ,পেপার মিন্ট,রোজমেরী,ল্যাভেন্ডারের মতো তেল আছে এখানে । পাশাপাশি চুলের যত্নে কাঠের চিরুনিও আছে তাঁদের কাছে ।
তাদেরই সাব ব্র্যান্ড আঁচারি । আচারপ্রেমীদের জন্য তাঁরা সিজনাল আচার বানিয়ে বিক্রি করেন । তাঁদের সংগ্রহে এবার নতুন যোগ হয়েছে গরুর মাংসের আচার । এছাড়াও আমড়ার টক আচার , আম তেল, তেঁতুলের আচার , বালাচাও , ঝালমুড়ির মশলাও আছে ।
মেলায় মায়ের রসুইঘরে আছে ঘি, চানাচুর , তিলের নাড়ু , ডালের বরই আর মনাক্কার মতো নানা ধরনের শুকনা খাবার । সবই হাতে বানানো ।
আয়োজক সুস্মিতা বসাকের হাটকাহনের সার্বিক দায়িত্বে আছেন । তিনি জানান , খুঁতের মেলার জন্য হাটকাহন নামটা জুলাই মাসে দেওয়া হয়েছে । এর আগে খুঁত পরিবার মেলা নামে আমরা ধানমন্ডি ৯ এ খুঁতের বাড়িতে এই প্রজেক্টটা শুরু করেছিলাম । সেটা ৬ ৭ মাস চলেছিল । খুঁতের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই । খুঁত একটা স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয়েছিল । খুঁত যখন ছোট ছিল, গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছিল তখন চেষ্টা করেছিল কিভাবে একটা ছোট পরিসরে, জায়গা নিয়ে তাদের পণ্যগুলো দেখাতে পারে ক্রেতাদেরকে । তখন কিছু প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও গিয়েছে খুঁত। তখনই খুঁতের ভাবনা এসেছে, সামনে কিছুটা বড় স্পেস পেলে কয়েকজন উদ্যোক্তা হলেও যেন তাঁদের পণ্য খুঁতের বাড়িতে রাখতে পারে। সেই ভাবনা নিয়েই খুঁতের বাড়িতে পরবর্তীতে খুঁত পরিবার মেলাটা শুরু করেছিলাম ।
তখন রেসপন্স এতোই ভালো ছিল যে অনেক উদ্যোক্তা বন্ধুরাই চেয়েছিল খুঁতের বাড়িতে তাঁদের সৃষ্টিগুলোকে প্রদর্শন করতে । তখন আমরা ভাবলাম এইটুকু জায়গাতেই হবেনা । আরও বড় বাড়ি দরকার । সেই ভাবনা থেকে এল হাটকাহন । খুঁত ও হাটকাহন আসলে একই স্বত্বা। আর এখানে খুঁতপ্রেমী ফ্যাশনিস্তারা ঢুঁ মারলে বাড়তি পাওনা হিসেবে পেয়ে যাচ্ছেন অনেকগুলো ফ্যাশন উদ্যোগের দারুণ সব নজরকাড়া পোশাক আর সেই সঙ্গে অন্যান্য সব পণ্য।
হাটকাহনের ঠিকানা: রাস্তা: ৭, বাড়ি: ১৫, অর্চার্ড পয়েন্টের পেছনে, আমেরিকান বার্গার সংলগ্ন, ধানমন্ডি ১২০৫
ছবি: অনিক মজুমদার