বাংলাদেশের জিআই নীতি নিয়ে বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
শেয়ার করুন
ফলো করুন

গত কয়েক মাস ধরে 'জিআই' বা জিওগ্র্যাফিক ইন্ডিকেশন বা ভৌগোলিক নির্দেশক নিয়ে অনেক আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়িকে 'জিআই' পণ্য দাবি করার পর থেকে। এ নিয়ে আমাদের মনে উঠেছে অনেক প্রশ্ন, তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের জিআই নীতির নানা দিক নিয়ে গত ২৯ জুন রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত দৃক গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হলো বিশেষ আলোচনা। এতে আলোচক হিসেবে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মাসউদ ইমরান মান্নু। তিনি বাংলাদেশের রসমালাই, জামদানি শাড়ির জিআই পাওয়ার ব্যাপারে গবেষণার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। আলোচনা সভাটি মডারেট করেছেন লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট রেহনুমা আহমেদ।

জিআই বা জিওগ্রাফিক ইন্ডিকেশনের বাংলা হচ্ছে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য। অর্থাৎ একটি পণ্যকে ভৌগোলিকভাবে চিহ্নিত হতে হবে। অর্থাৎ, সেটি কোন অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য। সেই পণ্যর সঙ্গে এলাকাটি জুড়ে দেওয়া। গত শতাব্দীর বিশের দশকে ইউরোপে প্রথম এর ভাবনা আসে কোনো একটি পণ্য বা সংস্কৃতির অথেনটিক বা বিশুদ্ধ অবস্থার সন্ধানে। কোনো একটি পণ্য বা সংস্কৃতি আসলে কোথা থেকে শুরু হয়েছিল এই উৎস মূলটা খুঁজে বের করতে পারলে, তাদের বিশুদ্ধ অবস্থা এবং পরবর্তী ক্রমবিকাশটা ধরা সহজ হয়। এই বিষয়গুলো এখন দেখাশোনা করে ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন (WIPO)।

বিজ্ঞাপন

আলোচনায় অধ্যাপক মাসউদ ইমরান মান্নু বলেন, 'এর আগে আমরা তাঁদের (ভারতের) কাছে রসগোল্লা ও নকশিকাঁথার জিআই হারিয়েছি। তখন কেউ এই বিষয় নিয়ে তেমন কোন উচ্চবাচ্য করেননি। কিন্তু যখন তাঁরা বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিল তখন সবাই সোচ্চার হয়ে উঠেছে।' সেমিনারে তিনি বাংলাদেশ সরকারের জিআই নিয়ে উদাসীনতা, বিভিন্ন অসংগতি ও পরবর্তীতে 'জিআই' রক্ষার ব্যাপারের আমাদের করণীয় কি হতে পারে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, `মনে রাখতে হবে, জিআই নেই মানে আমরা ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস হারাচ্ছি। ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটসের মধ্যে তিনটি ব্যাপার আমাদের দেশে জনপ্রিয়- ট্রেডমার্ক, কপি রাইটস আর পেটেন্ট। এর বাইরে আছে জিআই এবং ট্রেড সিক্রেট। ডব্লিউ আইপিও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ২০২৫ সাল থেকে এই সব ব্যাপার কড়াকড়িভাবে আরোপ করা হবে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তা পিছিয়ে ২০৩০ সালে নেওয়া হয়েছে। আবার এই আইন মধ্য আয়ের দেশের জন্য যতটা কড়াকড়ি ততটা স্বল্প আয়ের দেশের জন্য নয়। যেহেতু আমরা নিজেদের ‘মধ্য আয়ের দেশ’ দাবি করছি, জিআইসহ অন্যান্য কপিরাইটের ব্যাপারে আমাদের কড়াকড়িভাবে আইন মানতে হবে।' আমরা যদি আমাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস হারাই তাহলে, ২০৩০ সালের পর নিজেদের পণ্য উৎপাদন ব্যবহারের ক্ষেত্রে 'জিআই'ভুক্ত দেশের অনুমতি লাগবে। যেমন, আমরা জাপানি রেস্টুরেন্টে যে 'সুশি' খাই ২০৩০ সালের পর থেকে এগুলো উৎপাদন ও বিক্রির জন্য জিআই পাওয়া দেশের অনুমতি লাগবে। তাদের অনুমোদিত রাঁধুনি থাকতে হবে। কপিরাইট থাকা সব পণ্যের জন্যই ব্যাপারটি কার্যকর হবে।

অধ্যাপক মাসউদ ইমরান মান্নু আরও বলেন জিআই নিলেই হবে না, এর সুরক্ষাও করতে হবে। এ নিয়ে আমাদের গবেষণার গণ্ডি বাড়াতে হবে। দেশের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, 'বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে একটা ফরম আছে। সেই ফরমটি ডাউনলোড করে আপনারা আপনাদের নিজের এলাকার ঐতিহ্য নিয়ে বিশদে লিখতে পারেন। সরকারের পক্ষে দেশের কোনায় কোনায় গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। জনগণ যদি এই তথ্যগুলো দিতে পারে, তবে গবেষকেরা সেই তথ্যভান্ডারের ব্যবহার করে এই বিপুল কর্মযজ্ঞকে এগিয়ে নিতে পারেন।'

ছবি: হাল ফ্যাশন

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১৬: ০০
বিজ্ঞাপন